আসপিয়ার চাকরি না হলে অনশনে বসবো: নির্মলেন্দু গুণ

সময় ট্রিবিউন | ১০ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:৪৭

আসপিয়া ইসলাম। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে

স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় পুলিশে কনস্টেবল পদে চাকরি হয়েও বঞ্চিত হলেন বাবা হারা আসপিয়া। সবকটি ধাপ পার হয়েও চাকরি না হওয়ার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে ফেসবুকে চলছে সমালোচনার ঝড়। এ ঘটনায় আসপিয়ার চাকরি না হলে অনশনে বসার ঘোষণা দিয়েছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ।

বৃহস্পতিবার আসপিয়ার ঘটনায় ফেসবুকে করা একটি প্রতিবাদী পোস্টে মন্তব্য করে তিনি এই আগ্রহ জানান। নির্মলেন্দু গুণের অনশনে বসার ঘোষণায় অনেকে সমর্থন জানিয়েছেন। তার সঙ্গে অনশনে বসার আগ্রহ দেখিয়েছেন অনেকে।

পরে ওই আইডি থেকে নির্মলেন্দু গুণের পুরো বক্তব্য পোস্ট করা হয়। সেখানে লেখা হয়, ‘ভূমিহীন হলে পুলিশের চাকরি করা যাবে না—এ রকম একটা আইন আছে, সেটাই তো জানতাম না। মেধা তালিকায় পঞ্চম হয়েও ভূমিহীন বলে বরিশালের আসপিয়া চাকরি পাবে না, এটা হতে পারে না। হতে দেওয়া যায় না। এই আইন বাতিল কিংবা সংশোধন করে তাকে চাকরি দেওয়া হোক। নইলে আমি অনশনে বসব।’

জানা যায়, পুলিশে চাকরি হবে না এমন খবর পেয়ে আসপিয়া দ্রুত ছুটে যান বরিশালের ডিআইজি এসএম আকতারুজ্জামানের কার্যালয়ে। জানতে চান, সব ধাপে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও কেন তার চাকরি হবে না। ডিআইজি জানান, নিজেদের জমি না থাকলে চাকরি দেওয়ার আইন নেই। এরপর ভাঙা মন নিয়ে দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত পুলিশ লাইন্সের সামনে বসে থাকেন আসপিয়া।

অদম্য আসপিয়া সরকারি হিজলা ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২০ সালে এইচএসসি পাস করেন। ১৫ বছর ধরে উপজেলার খুন্না-গোবিন্দপুর গ্রামের একজনের জমিতে আশ্রিত হিসেবে থাকছে তার পরিবার। আসপিয়ার বাবা সফিকুল ইসলাম মারা গেছেন। পরিবারে তারা তিন বোন, এক ভাই ও মা। তার ভাই পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তার আয় দিয়েই চলে সংসার।

আসপিয়া জানান, বরিশাল জেলায় পুলিশ কনস্টেবলের শূন্য পদে লোক নিতে সেপ্টেম্বরে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। অনলাইনে আবেদন করলে গত ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। ২৩ নভেম্বর প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলাফলেও উত্তীর্ণ হন। এরপর ২৪ নভেম্বর একই স্থানে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম হন আসপিয়া।

২৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে চিকিৎসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। এতেও উত্তীর্ণ আসপিয়া। সবশেষ ২৯ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ লাইন হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। সেখানেও উতরে যান আসপিয়া।

চূড়ান্ত নিয়োগের আগে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আসপিয়া ও তার পরিবারকে ‘ভূমিহীন’ (স্থায়ী ঠিকানা না থাকায়) উল্লেখ করা হয়। বুধবার জেলা পুলিশ সুপার বরাবর প্রতিবেদন জমা দেন হিজলা থানার উপপরিদর্শক মো. আব্বাস। এর আগে ভূমিহীন হওয়ায় আসপিয়ার চাকরি হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।

আসপিয়া বলেন, ‘আমি যোগ্যতাবলে সাতটি ধাপ পেরিয়ে চূড়ান্ত নিয়োগের অপেক্ষায় ছিলাম। এর মধ্যে হিজলা থানার ওসি জানান, চাকরি পেতে হলে নিজেদের জমিসহ ঘর দেখাতে হবে। কিন্তু আমাদের কোনো জমি নেই। আমরা একজনের জমিতে বছরের পর বছর ধরে বাস করছি। জমি নেই বলে আমার চাকরি হবে নাএটা বিশ্বাস হচ্ছিল না। বৃহস্পতিবারে দুপুরে ডিআইজি স্যারের কাছে গিয়ে তাকে অনেক অনুনয়-বিনয় করি। কিন্তু আইনে বাধা থাকায় কিছু করার নেই বলে জানান তিনি।’


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: