উঁচু স্থানে গিয়ে কেউ হয় অহংকারী আর কেউ বিনয়ী

মো. নাজমুল হাসান তপু | ১৪ জানুয়ারী ২০২৩, ০৩:১৮

ছবিঃ সংগৃহীত

তখন আন্ডারগ্রেড শেষ করে বেকার ছিলাম। ঢাকা শহরে জব খুঁজতাম আর কোচিং সেন্টারে পড়িয়ে পকেট খরচ চালাতাম। টাকা পয়সা, খাওয়া দাওয়ার ভীষণ কস্ট ছিল। ভালো খাবার জুটত না কপালে।

একদিন দুপুরে কোচিং সেন্টারের বড় কর্তার আগমনের কল্যানে লাঞ্চের ব্যবস্থা করা হল। মুরগীর মাংসের ঘ্রান নাকে আসছিলো ফাকে ফাকে। কত দিন মুরগী খাওয়া হয়নি। সে সময়ে মুরগী নিজে কিনে খাওয়ার মতো টাকাও থাকতো না পকেটে। আমি মনে মনে বেশ খুশী। বড় কর্তা, ম্যানেজার সাহেব আর আমি লাঞ্চ করতে বসলাম। সামনে ঝরঝরে ধোয়া উঠা ভাত। যার যার ডাল আর মুরগীর মাংসের বাটি তার তার সামনে রাখা। না ভেবেই আনন্দের আতিশয্যে আমার মুরগীর মাংসের বাটির তরকারী গরম ভাতে ঢেলে খাওয়া শুরু করলাম। তা দেখে ম্যানেজার সাহেব শ্লেষ ভরা কন্ঠে উপহাস করে বললেন মুরগী দিয়েই শুরু করা ভালো। লজ্জায় কুকড়ায় গিয়েছিলাম। দেখলাম তেনারা ডাল দিয়ে খাওয়া শুরু করলেন। ক্ষুধা আল্লাহ পাকের কঠিনতম এক পরীক্ষা। যারা এই পরীক্ষা কখনো জীবনে দেননি, শুকরিয়া আদায় করবেন নিয়মিত।

আলহামদুলিল্লাহ এখন আগের সেই আর্থিক বা খাওয়ার কষ্ট আমার নেই। তবে কানাডাতে এখানে আমার এপার্টমেন্টে এক বাংলাদেশী স্টুডেন্ট থাকে। সে সারাদিন কাজ করে আর রাতে পড়ে। ওর রান্না বান্নাতে হাত নেই একদমই। অধিকাংশ প্রতি বেলায় ডিম ভাজি করে খেতে দেখি। ওর মতো আমার কাজ করে থাকা-খাওয়ার খরচ যোগাতে হয়না। স্কলারশিপের টাকায় আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাবেই কানাডাতে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি। সময় পেলেই মাঝে মাঝেই নিজের জন্য ভালো কিছু রান্না-বান্না করি।। কিন্ত ওর খাওয়া দেখলে আমার অতীত নাড়া দেয়। চেষ্টা করি মাঝে মাঝে নিজে হাঁসের মাংস, মাছ, গরু রান্না করলে ওকে দিয়ে খেতে। মানুষকে খাওয়ানো একটা বড় ইবাদত। আমি মানুষকে খাওয়াতে পছন্দ করি। চোখ মুখের তৃপ্তি দেখতে শান্তি লাগে।

মানুষের অবস্থা পাল্টায়। পাল্টালে মানুষ দুরকম ভাবে পাল্টায়। উঁচু স্থানে গিয়ে কেউ হয় অহংকারী আর কেউ বিনয়ী। কেউ উপরে গিয়ে হয় সমবেদী আর কেঊ উপহাসী। কেউ নিজের অতীত ভুলে ভান করে বাঁচতে চায় আর কেউ মনে রেখে এতে ইন্সপিরেশন খুজে নেয়।

লেখক,

পিএইচডি রিসার্চার, ইউবিসি, কানাডা


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: