অন্যতম খাবারের নাম বাঁশ কোড়ল 

আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান | ২৮ জুলাই ২০২২, ০২:১২

সংগৃহীত

পার্বত্য জেলা বান্দরবান। নামটি সবার কাছে চেনামুখ। প্রাকৃতিক নয়নাভীরে মধ্যে রয়েছে পাহাড়, ঝিরি ঝরণাসহ প্রাকৃতিক ভান্ডার। এই জেলায় যেমন পর্যটন দিক দিয়ে বিখ্যাত ঠিক তেমনি পাহাড়ের প্রাকৃতিক থেকে উদ্ভাবিত হওয়া সবজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমারী ফলমুল থেকে রয়েছে বেশ আলোচিত। বিভিন্ন মৌসুমের পাহাড়ের থেকে উদ্ভব হয়ে স্থানীয় বাজারের আগমন ঘটে বিভিন্ন মৌসুমের বেড়ে উঠা শাকসবজি কিংবা ফলমুল। তাও পাহাড়ের বসবাসরত জনগোষ্ঠিকে বলা চলে খাবার কারীগর। তারই অংশ হিসেবে রয়েছে বাশঁ কুড়াল।

বাশঁ কুড়াল। এটি মূলত বাঁশ গাছের গোড়ার কচি অংশকে বলে বাঁশ কোড়ল । পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের কাছে পছন্দের সবজির হিসেবে তালিকায় রয়েছে। শুধু পাহাড়ি জনগোষ্ঠির নয় বর্তমান পর্যায়ের বাঙালি জনগোষ্ঠীর কাছে অন্যতম জনপ্রিয় সুস্বাদু খাবার এখন বাঁশ কোড়ল। ফলে এখন বাজারে এখন চাহিদা রয়েছে বেশি। পার্বত্য জেলার পাশাপাশি রাজধানী ঢাকা শহরের এটি জনপ্রিয়তা বেড়েছ দ্বিগুন।

এই বাঁশ কুড়াল নামটি তিন পার্বত্য জেলা ১২ টি জনগোষ্ঠির কাছে ভিন্ন রকমের নামের প্রচলিত রয়েছে। তার মধ্যে মারমা ভাষায় এটি বলে "মহ্‌ই ", চাকমা ভাষায় "বাচ্ছুরি", ত্রিপুরা ভাষায় "মেওয়া", বম ভাষায় “সানত্তাল” খুমি ভাষায় “আন্তৈ” ও বাংলা ভাষায় "বাঁশ কোড়ল"। এছাড়াও আরো নানান জনগোষ্ঠিরদের ভাষা রয়েছে এই বাঁশ কোড়ল নামে। এবং এটি তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠির পাশাপাশি বাঙ্গালীদের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

জানা গেছে, বছরের মে - আগস্ট মাস পর্যন্ত এ সবজির ভরা মৌসুম থাকে। এ মৌসুমের মুলি বাঁশ, ডলু বাঁশ, মিতিঙ্গ্যা বাঁশ, ফারুয়া বাঁশ, বাজ্জে বাঁশ, কালিছুরি বাঁশসহ বেশ কয়েক প্রজাতির বাঁশ কোড়ল জন্মে। বর্ষার শুরুতে বৃষ্টির পানিতে মাটি নরম হলে এটি বাড়তে শুরু করে। মাটি হতে ৪-৫ ইঞ্চি গজিয়ে উঠলে এটি খাওয়ার উপযোগী হয়। এবং বিভিন্ন জাতের বাঁশ কোড়ল স্বাদ রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন রকমের । তবে যেসব খাওয়া যায়- মুলি বাঁশ, ডলু বাঁশ, মিতিংগ্যা বাঁশ, ফারুয়া বাঁশ, বাজ্জে বাঁশ, ও কালিছুরি জাতের বাঁশের কোড়ল। এদের বিভিন্ন বাঁশের মধ্যে মুলি বাঁশ কোড়ল সবচেয়ে খেতে সুস্বাদু এবং এটি সবার কাছে রয়েছে বেশ জনপ্রিয়তা।

রাজধানীতে ঢাকা শহরে ঘুরে দেখা গেছে, কাজি পাড়া, নতুন বাজার, মধ্য বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, সাভার,ফার্মগেট সহ বিভিন্ন রাজধানী শহরে বাঁশ কোড়াল চাহিদা রয়েছে অনেক। তবে দ্বিগুন দাম হওয়াতেই কিনতে হিমসিম খাচ্ছে অনেকে। পার্বত্য জেলায় কম দামে যেটি পাওয়া যায় সেটি ঢাকা শহরে এসে দাম বেড়ে যায়।

ঢাকা কাজি পাড়া মনজুরী পাহাড়ি সবজি বিক্রেতা সুপেন চাকমা বলেন, রাজধানী শহরে বসবাসরত পাহাড়ি পাশাপাশি বাঙালিদের কাছে জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিন্তু পরিবহনের দাম বেশী হওয়ার কারণের পোসানো জন্য বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

অন্যদিকে বান্দরবান শহরের মগ বাজার, বালাঘাটা বাজার, কালাঘাটা বাজার বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিন সকাল- বিকেল বিভিন্ন স্থানীয় হাটবাজারে বাঁশ কোড়ল নিয়ে যান স্থানীয় পাহাড়ীরা। নৌ পথ ও সড়কের পথে যে যার মতন বস্তায় কিংবা ঝুড়িতে করে নিয়ে আসছেন বিক্রেতারা। রাস্তার পাশেই বসে পাহাড়ি নারী ও পুরুষ সবজি বিক্রেতাদের সামনে সারি সারি ভাবে সাজানো আছে পাহাড়ি বাঁশ কোড়ল। সেই বাঁসগ কোড়ল কিনতে ভীর জমাচ্ছেন সকল সম্প্রদায়ের ক্রেতারা।

বাজার করতে আসা রেখা আক্তার বলেন, এর আগে কোনদিন খাইনি। বাঁশ কোড়ল দেখেছি শুধু। পরে কিনে সুস্বাধু হওয়াতেই এখন বাড়িতে কিনে নিয়ে যাচ্ছি। তবে দামের ক্ষেত্রে মোটামুটি রয়েছে।

মগ বাজারের বাশঁ কুড়াল সবজি বিক্রেতা ক্রাক্ষ্যাই প্রু মারমা বলেন, প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাঁশ কোড়ল আহরণ করে বিকালে বাজারে বিক্রি করতে আসেন। কখনো ৪শত কখনো ৫-৬শত টাকার বাঁশ কোড়ল বিক্রি করেন সেই টাকা দিয়ে পরিবারের জন্য চাউলসহ প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে নিয়ে যান।

বালাঘাটা বিক্রেতা,প্রভাতি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, প্রতি হাটের দিন প্রায় ১০০-১৫০ আঁটি বাঁশ কোড়ল বাজারে আনেন। প্রতি আঁটি ৬০ -১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। তবে মুলি বাঁশটি জনপ্রিয়তা রয়েছে।

 এদিকে শুরুতেই বাজারের প্রথম আগমণ ঘটে তখনি প্রতি ভাগের এক ভাগ ৮-১০টি বাঁশ কোড়ল ৮০-১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয় । প্রথম যখন বাজারে উঠে বাঁশ কোড়ল প্রতিভাগ, তারপর ধীরে ধীরে কমতে থাকে দাম এখন প্রতিভাগে ৮-১০টি বাঁশ কোড়ল ৩০টাকায় বিক্রি হয় । তবে চাহিদা অনুযায়ী এর দাম কম-বেশি হতে পারে। এছাড়াও পাহাড়ি স্থানীয় হোটেল ও রেস্টুরেন্ট গুলোতেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে এ সবজি।

বান্দরবান সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, বাঁশ কোড়াল পাহাড়ের জনগোষ্ঠিদের কাছে বেশ জনপ্রিয় রয়েছে ।এছাড়াও বাঙালীদের কাছে এখন জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বাঁশ কোরালে ভিটামিন সি, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম জাতীয় পুষ্টিকর রয়েছে।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: