জয়যাত্রার প্রতিনিধিদের চাঁদাবাজি, লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে হেলেনা চক্র

সময় ট্রিবিউন | ৩০ জুলাই ২০২১, ২২:৪৮

ছবিঃ সংগৃহীত

হেলেনা জাহাঙ্গীর জয়যাত্রা টেলিভিশনের ভোলা প্রতিনিধি নামে একটি টাকার রিসিভ কপি ফাঁস হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেখানে প্রশ্ন উঠেছে প্রতিনিধি বেতন পেয়েছেন নাকি উল্টো প্রতিনিধি নিজে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে বেতন দিয়েছেন।

একাধিক প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জয়যাত্রা টেলিভিশন এ চাকরি নেওয়ার জন্য এককালীন এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা করে জমা দিতে হয়। এছাড়াও বাধ্যতামূলক ভাবে প্রতিমাসে নিউজ প্রকাশ করার নাম করে প্রতিনিধিদের থেকে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা নিতেন হেলেনা। টাকা দিতে না পারলে প্রতিনিধির পাঠানো নিউজ প্রকাশ করতেন না আবার টাকা পরিশোধ করার পর অনলাইনে নিউজ গুলো প্রচার করতেন। টাকা দিতে না পারলে প্রতিনিধিকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। 

অনলাইন টিভি জয়যাত্রায় নিয়োগ দিয়ে বেতন না দেওয়া, জেলা-উপজেলা প্রতিনিধিদের কাছ থেকে বার্ষিক চাঁদা নেওয়া, সংবাদ প্রকাশের জন্য টাকা নেওয়া, উগ্র আচরণ, জমি দখলসহ নানা অভিযোগে আলোচিত হেলেনা জাহাঙ্গীর। বিভিন্ন মহলে তাঁর পরিচয়ও ভিন্ন ভিন্ন, কখনো তিনি শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, লেখক, অনুমোদনহীন আইপি টিভি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট পরিচয়ের যেনো শেষ নেই এই নারীর।

তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বান্ধবী পরিচয়ে দাপুটেও ছিলেন সেই সময়ের বিএনপি মহলে। অভিযোগ রয়েছে, হেলেনা জাহাঙ্গীর জাতীয়তাবাদী মহিলা দল ঢাকা মহানগর কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। ২০১৪ সালে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ধীরে ধীরে তিনি আওয়ামী ঘরানার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে থাকেন।নিজেকে নিরাপদে রাখতে সাংবাদিক পরিচয় ধারণ করেন।

জয়যাত্রা টিভির জেলা-উপজেলা পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলার জন্য ফেসবুকে একটি গ্রুপ খোলা হয়। ওই গ্রুপের আদান-প্রদান করা খুদে বার্তায় দেখা যায়, একাধিক বিকাশ নম্বর দিয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে, যেখানে বার্ষিক চাঁদা উপজেলা প্রতিনিধি দুই হাজার ও জেলা প্রতিনিধিকে তিন হাজার টাকা পাঠাতে হবে। এ ছাড়া প্রতিনিধিরা সংবাদ পাঠালে বার্তা দিয়ে বলা হয়, বিকেলের আগে টাকা না পাঠালে ৮টার সংবাদে নিউজ প্রচার হবে না। এখানে টাকার অঙ্ক উল্লেখ করা হয়নি, এটার নাম দেওয়া হয়েছে ‘কমার্শিয়াল ধার্য।’

জয়যাত্রা টেলিভিশন এর মানবসম্পদ শাখার এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিদের প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে টাকা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয় যদি রিপোর্টাররা হেলেনা জাহাঙ্গীর কাছে টাকা না পাঠাতেন ফোনে গুম করে দেওয়ার হুমকি দিতেন এবং স্থানীয় নেতা-কর্মীদের দিয়ে জয়যাত্রা টেলিভিশনের প্রতিনিধিদের হয়রানি করতেন।

হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি তাঁর অনেক আর্থিক দুর্নীতির খোঁজ পেয়েছেন সরকারের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে গতকাল এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, বিভিন্ন সময়ে হেলেনার নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। বিভিন্ন সময় তাঁর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এ রকম ব্যক্তির সংখ্যা অনেক। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: