সিক্রেট অ্যাপের অনলাইন ক্লাসে বোমা বানানো শেখে জঙ্গিরা

সময় ট্রিবিউন | ১৩ জুলাই ২০২১, ১৯:২০

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের নোয়াগাঁও মিয়াবাড়ি এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে অভিযান চালানোর পর ব্রিফ করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)-ছবিঃ সংগৃহীত

করোনা অতিমারিতেও থেমে নেই জেএমবির গোপন কার্যক্রম। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে তারা টেলিগ্রাম অ্যাপসে নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এ প্রশিক্ষকদের মধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রোববার দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের পাঁচদিন করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট জানায়, বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে জঙ্গি সদস্যরা শক্তিশালী বোমা (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস- আইইডি) তৈরি করে আসছিলেন। শক্তিশালী বোমা বানাতে তারা তাতে বিউটেন গ্যাস ও বিয়ারিং বল ব্যবহার করতেন। রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে বোমাগুলো বিস্ফোরণের কৌশল নেওয়া হয়েছিল।

সিটিটিসি সূত্র জানায়, বোমা তৈরির প্রশিক্ষণের জন্য নব্য জেএমবির আলাদা সেল রয়েছে। দেশে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়-এমন স্কুলের সন্ধানও পাওয়া গেছে। যেখানে সারা দিন ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ‘টেলিগ্রাম অ্যাপ’ ব্যবহার করে বোমা তৈরির মূল কারিগরকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। পুরো চক্রটিকে আইনের আওতায় আনা হবে।

ইতোমধ্যে বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামসহ দুই প্রশিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে প্রশিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে ডেভিড কিলার (নব্য জেএমবির সামরিক শাখার সদস্য) এবং কেরানীগঞ্জ থেকে কাউসার হোসেন ওরফে মেজর ওসামাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া আরও অনেকে নজরদারিতে রয়েছেন।

এর আগে ১৭ মে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে প্লাস্টিকের ব্যাগে শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে রোববার যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে মামুনকে মোটরসাইকেলসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এ মোটরসাইকেলে করেই সাইনবোর্ডের ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বোমাটি রাখা হয়েছিল। গ্রেপ্তার মামুনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আড়াইহাজারের নোয়াগাঁওয়ে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় তিনটি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে ৩০০ গ্রাম লাল রংয়ের বিস্ফোরক জাতীয় পাউডার, সাতটি বিউটেন গ্যাসের ক্যান, এক সেট রিমোট কন্ট্রোল ডিভাইস, দুই প্যাকেট ছোট সাইজের বিয়ারিং বল, ৫০০টি ক্রিসমাস বাল্ব, এক রোলের দুই ইঞ্চি সাদা কার্টন টেপ এবং একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। মোটরসাইকেলটি নব্য জেএমবির সাংগঠনিক কাজে ব্যবহার করা হতো। পরে সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করে।

সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, পল্লবী থানার একটি মামলার পলাতক আসামি কাউসারকে রোববার রাত ৮টার দিকে কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়। নব্য জেএমবির সামরিক শাখার প্রশিক্ষক ও বোমা তৈরির মূল কারিগর কাউসারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই রাতেই বন্দর থানার কাজীপাড়ার জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। আস্তানা থেকে বোমা তৈরির ১১ ইঞ্চি লম্বা জিআই পাইপ, গ্রেনেড তৈরির দুটি জিআই বক্স, চারটি রিমোট কন্ট্রোল ও দুটি জিহাদি বইসহ বেশকিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। তিনি আরও জানান, নব্য জেএমবির সামরিক শাখার অন্য সদস্যদের সঙ্গে কাউসার অনলাইনে ও অফলাইনে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। নব্য জেএমবির আমীর মাহাদী হাসান ওরফে আবু আব্বাস আল বাঙ্গালীর সঙ্গে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, স্লিপার সেল হিসাবে তারা কাজ করে আসছিলেন। আমিরের নির্দেশে আলাদা আলাদাভাবে তারা কাজ করতেন।

কাউসারের নামের আগে ‘মেজর’ কেন ব্যবহার করা হয়- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা তাদের সাংগঠনিক নাম। সংগঠনের সামরিক শাখার সদস্য তারা।

এদিকে, সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের এডিসি রহমত উল্লাহ চৌধুরী জানিয়েছেন, লাল রংয়ের পাউডার দিয়াশলাইয়ের কাঠির মাথা থেকে নেওয়া হয়। এরপর সেগুলোর সঙ্গে চিনি মেশানো হয়। এতে সেটি আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। আর বিউটেন গ্যাসটি আগুন ধরানোর জন্য ব্যবহার হয়। কৌশলটি হলো-বিস্ফোরণ ঘটলে একইসঙ্গে অনেক মানুষ আহত ও জখম হবে। এতে কেউ নাও মরতে পারে। বোমা দ্বিগুণ বিধ্বংসী ক্ষমতাসম্পন্ন করতে এটা করা হয়। বোমা শক্তিশালী করতে বিয়ারিং যুক্ত করা হয়। আর বোমা বিস্ফোরণের জন্য রিমোট কন্ট্রোল প্রযুক্তি ব্যবহারের কৌশল নেওয়া হয়। ক্রিসমাস বাল্বগুলো প্রজ্বালক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। আর এসব বোমা তৈরির অন্যতম টার্গেট পুলিশ।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


জনপ্রিয় খবর