ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে আত্মহত্যা: প্রেমিক গ্রেফতার

সময় ট্রিবিউন | ২৫ জানুয়ারী ২০২২, ১০:২৩

থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রুহি আক্তার  নামে এক তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় প্রেমিক মিথুন ওরফে আকাশকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ-ছবি: সময় ট্রিবিউন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট:

রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রুহি আক্তার (১৯) নামে এক তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় প্রেমিক মিথুন ওরফে আকাশকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া দায়িত্ব অবহেলার দায়ে দুই পুলিশ সদস্যকে ক্লোজড করা হয়েছে।

সোমবার রাত ৮টায় রংপুরের গঙ্গাচড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। মিথুন গঙ্গাচড়ার ধামুর এলাকার এবাদত হোসেনের ছেলে।

এর আগে সন্ধ্যায় রুহির বাবা সেকেন্দার আলী বাদী হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে প্রেমিক মিথুনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।  

সোমবার রাত ১০টায় কোতয়ালী থানায় অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদ।

ওসির দাবি, আকাশ আগে থেকেই বিবাহিত এবং আরেকটি মেয়ের মেয়ের সঙ্গে বিয়ের বিষয়ে কথাবার্তা চুড়ান্ত হওয়ার এসব তথ্য রুহি জানতে পেরে আত্মহত্যা করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ওসি আব্দুর রশিদ জানান, গত ২৩ তারিখ রাতে তরুণী রুহি আক্তার হারাগাছ থানার বাহার কাছনা এলাকায় ঘোরাফেরা করছিল। স্থানীয় লোকজন সেই তরুনীকে দেখে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করলে ওই তরুণীকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নিয়ে যেতে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন হারাগাছ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। পরে রুহিকে কোতয়ালী থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে এনে রাখা হয়। পরদিন সকাল সাড়ে আটটায় এবং সকাল দশটায় দু’দফায় সকালের নাস্তা খাওয়ার জন্য ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় ডাকতে গেলে রুহি আরো ঘুমাবে বলে জানায়। পরবর্তীতে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের ইনচার্জ দুপুর পৌনে বারোটার দিকে দ্বিতীয় তলায় গেলে তিনি দেখতে পান রুহি নিজের পরিহিত ওড়না গলায় পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে বেঁধে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।

ওসি আরও জানান, রুহি আক্তার রুনা ২০২১ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়। রংপুর জেলার গংগাচড়া থানার মুন্সিপাড়া গ্রামের এবাদত হোসেনের ছেলে মিঠুন মিয়া ওরফে আকাশের সাথে মোবাইল ফোনে কথাবার্তা বলার সুবাদে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর আগেও রুহির সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে রংপুরে আসার জন্য বললে রুহি গত বছরের ৩০ মার্চ ঝিনাইদহ থেকে রংপুরে আসলে আকাশ মোবাইল ফোন বন্ধ রাখে। তখন রুহিকে কোতোয়ালি থানা পুলিশ উদ্ধার করে পরিবারকে খবর দিয়ে পরিবারের কাছে জিম্মায় দেয়। এরপর আকাশ পুনরায় রুহির সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে একই কায়দায় আবার আকাশ ঝিনাইদহ থেকে রংপুরে নিয়ে আসে এবং রংপুরে বিভিন্ন জায়গায় দেখা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তালবাহানা শুরু করে। এভাবে রুহি হারাগাছ থানার বাহার কাছনা এলাকায় ঘোরাফেরা করলে পুলিশ তাকে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে উদ্ধার করে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, রুহি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে অবস্থানকালে আকাশ আবারও ফোন করে এবং রুহিকে আকাশ জানায় তার অন্য মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে এবং সে বিবাহিত। এসব কথাবার্তাসহ অশ্লীল কথাবার্তা ও এসএমএস করলে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করায় রুহি গলায় পেচিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে আত্মহত্যা করে।

রুহি ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ড থানার হরিয়ারঘাট গ্রামের সিকান্দার আলীর মেয়ে।

এদিকে তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় কর্তব্যে অবহেলার জন্য থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের দায়িত্বরত এএসআই নাদিরা ইয়াসমিন ও কনস্টেবল মোহসীনা আকতারকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইনে নেয়া হয়েছে।

এছাড়া ঘটনা তদন্তে মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- আরপিএমপির উপ-পুলিশ (ট্রাফিক) মেনহাজুল আলম ও সহকারী পুলিশ কমিশনার (সিটিএসবি) মাহবুব-উল-আলম। #

রাব্বী হাসান সবুজ


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: