ফুলবাড়িয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেড়েছে সেবার মান বিভিন্ন উদ্যোগ

সাইফুল ইসলাম তরফদার, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি | ২১ মার্চ ২০২৪, ১৩:১৩

সংগৃহীত
উন্নয়ন আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে গেছে।লাল চিনি ও হলুদের জন্য বিখ্যাত উপজেলা, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতর-বাহিরের সার্বিক পরিবেশ। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকারে এবং নানামুখী উদ্যোগে বেড়েছে সেবার মান। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত উন্নত সেবা পেয়ে সন্তুষ্ট এখানকার সেবা গ্রহীতারা।
 
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডাঃ বিধান চন্দ্র দেবনাথ এর সার্বিক পরিশ্রমে এ উন্নয়নের নেপথ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আন্তরিকতা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। ফুলবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ, আন্তঃবিভাগ এবং বহিঃর্বিভাগের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যবর্ধনে নেয়া হয়েছে যুগোপযোগী নানা প্রদক্ষেপ। সিসি ক্যামেরার আওতায় হাসপাতালের সার্বিক কার্যক্রম তদারকির মাধ্যমে সেবার মানোন্নয়নসহ সার্বিক শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় এটিকে ফুলবাড়িয়া উপজেলার স্বাস্থ্য খাতের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব অর্জন ও এক অনন্য সুন্দর সফলতা হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে স্থানীয় সচেতন মহল।
 
হাসপাতালের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি, জরুরি বিভাগ ও বহিঃবিভাগে প্রতি মাসে চিকিৎসা সেবা নেয়া মোট রোগী ছিল প্রায় ৪৫হাজার জন এর মাঝে চোখের চিকিৎসা দেয়া প্রতি মাসে প্রায় ৫ শত রোগীর চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।
 
২০২৩ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রায়৫০ হাজার। সেবার মান বৃদ্ধির ফলে দুই বছরের ব্যবধানে রোগীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।
 
হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, বাগান, স্বল্প মূল্যে প্রায় সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ, বিনামূল্যে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহের কারণে সরকারি এ হাসপাতাল সম্পর্কে মানুষের আস্থা বেড়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে আরো জানা গেছে, নিয়মিত করোনা টিকাদান কর্মসূচি, বিভিন্ন টিকাদান কার্যক্রমের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় গণটিকা কার্যক্রম চালু রয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এখানে রক্ত, মূত্র, মল, এক্স-রে, ইসিজি ও আল্ট্রাসনোগ্রাফিসহ সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ রয়েছে।মাঠ পর্যায়ে ইপিআই কার্যক্রমের অবস্থান ভালো। এছাড়া এখানে সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স ও অক্সিজেন সরবরাহ সেবা রয়েছে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক, চক্ষু রোগী, ও হাঁপানি রোগীদের বিশেষ সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এখানে এনসিডি কর্নার, শিশুদের জন্য আলাদা এমসিআই কর্নার ও ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার, গর্ভবতী মায়েদের জন্য এএনসি/পিএনসি কর্নার রয়েছে। এখানে নিয়মিত ২৪ ঘণ্টা নরমাল ডেলিভারির ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিমাসে গড়ে অর্ধ শতাধিক নরমাল ডেলিভারি সম্পন্ন হয় বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।এ যাবত হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন ৪০টি,এপেন্টিস ২ টি,হাইডোফিল ২ টি,মাইনর অপারেশন ২৬৫ টি অপারেশন হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। হাসপাতালে যে কোন সময় সাধারণ অপারেশন  ব্যবস্থা রয়েছে।সেবার মানোন্নয়নে এবং রোগী হয়রানি বন্ধে তিনি বেশ সোচ্চার ভূমিকা পালন করছেন প্রশাসন।
ডাঃ বিধান চন্দ্র দেবনাথ এর সার্বিক সহযোগিত গত ২০২২ সালে সিজারিয়ান অপারেশনের যাত্রা শুরু করেন। এযাবত অপারেশন চলাকালীন সময় কোন প্রকার সমস্যা হয়নি।
 
সেবা নিতে আসা রাশিদা,সাবিনা ও শফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন রোগী জানান, ‘হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের খাবারসহ সেবার মান বেড়েছে। এক সময় নিয়মিত চিকিৎসক ও ওষুধ পাওয়া যেত না। এখন বিনামূল্যে ওষুধও দিচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
 
কমিউনিটি আই সেন্টারের নার্সিং কর্মকর্তা উম্মে হাবিবা বলেন,বিনামূল্যে বহি বিভাগে চোখের ড্র এবং চশমাসহ যাবতীয় চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
 
ওটি ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স ফাহিমা আক্তার বলেন,আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অপারেশন চলাকালীন সময় কোন প্রকার সমস্যা হয়নি।সকল অপারেশন সফল ভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
মেডিকেল অফিসার ডা: মো: শোয়েব মিয়া বলেন,আমি শুক্রবার বাদে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের বহিঃ বিভাগে রোগীর চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি। প্রতিদিন প্রায় দুই শতাধিক রোগীর চিকিৎসা সেবা ও বিনামূল্যে ওষুধ পত্র প্রদান করা হয়।
 
মেডিকেল অফিসার আনিয়া সুলআনা(বিথী) বলেন,আমার ফুলবাড়িয়া আমি প্রতিদিন উপজেলা বাসীর চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি।
 
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: কৌশিক দেব বলেন,প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আউটডোর এবং ইনডোরে  রোগীদের সমস্যা সমাধান করে থাকি। 
 
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের জুনিয়র কনসান্টেন (সার্জারী)ডা. মোঃ ছাইফুল মালেক বলেন,আমাদের কাছে কোন কৃপনতা নেই যে কোন অপারেশন করতে প্রস্তুত আছি।
 
জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি)ডাঃ খাদিজা সিদ্দিক সুইটি বলেন,আমার বাড়ি ফুলবাড়িয়া উপজেলায় হাসপাতালে যেকোনো সময় সিজারিয়ান অপারেশন করতে আমরা প্রস্তুত। আমার গর্ব হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন করতেছি। এলাকার গরীব হতদরিদ্র পরিবারের সেবা দিতে পারতেছি।
 
জুনিয়র কনসালটেন্ট এনেসথেসিয়া ডাঃ মমিনুল ইসলাম বলেন,আমরা যে কোন অপারেশন করতে প্রস্তুত। আমাদের কোন সমস্যা নেই। আমি শুক্রবার বন্ধের দিন সেই দিনে করতে রাজি অপারেশন। 
 
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডাঃবিধান  চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আওতায় ইউনিয়ন পর্যায়ে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে চেষ্টা করছি। এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা সেবা, রোগীর প্রয়োজন অনুসারে অ্যান্টিবায়োটিকসহ ফুলকোর্স ওষুধ সরবরাহ করা হয়।
 
৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নত রয়েছে। সেবার মান ঠিক রেখে আগামীতেও সাফল্যের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে চাই। 


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: