ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা শাখা কর্তৃক দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌবাহিনী সদস্যের পরিচয় দিয়ে সাধারণ পরিবারের মোট ১৩ জন মেয়েদেরকে বিবাহের মাধ্যমে অর্ধ কোটিরও বেশী টাকা হাতিয়ে নেয়া প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ ০২ সদস্য গ্রেফতারঃ ভূয়া আইডি কার্ড ও ইউনিফর্ম পরিহিত ছবি উদ্ধার।
বর্তমানকালে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার বেড়াজালেও সাধারণ মুসলিম পরিবারগুলোর কাছে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিবাহ একটি পবিত্র বন্ধন ও সামাজিক রীতি হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। গ্রামের সাধারণ মুসলিম পরিবারের সরলতার সুযোগ নিয়ে একটি চক্র দীর্ঘদিন যাবৎ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদেরকে নিজেদের সাজানো ঘটকের মাধ্যমে বিবাহের প্রস্তাব পাঠানো এবং নিজেদেরকে নৌবাহিনীর সদস্য হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে ধর্মীয় রীতিতে বিবাহের মাধ্যমে এসব পরিবারের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার এক অপকৌশল রচনা করে আসছিল।
এই সংক্রান্তে জনৈকা ভিকটিম ময়মনসিংহ জেলার সম্মানিত পুলিশ সুপার মহোদয়ের কাছে ০৫জন আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলে তাঁর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জের নেতৃত্বে একটি চৌকষ দল গাজীপুর জেলার চন্দ্রা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এই প্রতারক চক্রের মূল হোতা ১। মোঃ মহিদুল ইসলাম মইদুল (২৭), পিতা-মোহাম্মদ আলী, ঠিকানা-চরকাটারী (আহেদালী পাড়া), থানা-দৌলতপুর, জেলা-মানিকগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা থানা এলাকা থেকে ২। কুদ্দুস আলী (৩৫), পিতা-মৃত জালাল উদ্দিন, ঠিকানা-নগুয়া, থানা-তারাকান্দা, জেলা-ময়মনসিংহ-দ্বয়কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এরপর উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে তারাকান্দা থানায় মামলা নং-০৬, তারিখ-১০/০২/২০২৪ ইং রুজু করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এমএলএসএস হিসেবে ০২ বছর চাকুরী করার পর বিধি বহির্ভূতভাবে বাল্য-বিবাহ করার অপরাধে চাকুরীচ্যুত হয়ে আসামী মহিদুল প্রতারণার মাধ্যমে বিবাহকেই তার পেশা হিসেবে বেঁছে নেয় এবং মামলার এজাহারে বর্ণিত অন্যান্য আসামীদের সাথে নিয়ে বিবাহের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চক্র তৈরি করে। এই কাজে বিজিবি থেকে চাকুরীচ্যুত এক সদস্য তাকে সরাসরি সহায়তা করে। গ্রেফতারকৃত অপর আসামী কুদ্দুছসহ অন্যান্যরা কখনও ঘটক কখনও মহিদুলের নিকট আত্মীয় হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে সাধারণ মুসলিম পরিবারের অভিভাবকদের বিশ্বাস অর্জন করত এবং প্রতারণার অপকৌশল বাস্তবায়নে সংঘবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করত।
এখন পর্যন্ত মহিদুল মোট ১৩ জন মহিলাকে তার এই প্রতারণার ভিকটিম বানিয়ে সরলতার সুযোগ নিয়ে বিবাহ করেছে বলে স্বীকার করেছে যার মধ্যে মানিকগঞ্জের ০৩ জন, টাঙ্গাইলের ০৩ জন, কিশোরগঞ্জের ০১ জন ও ময়মনসিংহের ০৬ জন রয়েছে। মহিদুলের এই প্রতারক চক্র এসব পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লক্ষেরও অধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এমনকি তার এই প্রতারণার ফাঁদ থেকে প্রতিবন্ধী নারীও রেহাই পায়নি, মাসিক প্রতিবন্ধী ভাতার সামান্য টাকা হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে সে টাঙ্গাইল জেলার একজন প্রতিবন্ধী মহিলাকে বিবাহ করে।
আসামী মহিদুলের কাছে নৌবাহিনীর ভূয়া আইডি কার্ড, বাহিনীর ব্যবহার্য ট্রাকস্যুট এবং বিভিন্ন বাহিনীর ইউনিফর্ম পরিহিত ছবি পাওয়া গেছে। মহিদুল সহ অন্যান্য আসামীদের বিরুদ্ধে জামালপুর ও টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলায় একাধিক প্রতারণা মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। আসামীদের দ্রুত বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হবে। এ ঘটনায় জড়িত প্রতারক চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারের নিমিত্তে অভিযান অব্যাহত আছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: