যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সচেতনতার আওতায় হবিগঞ্জের সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষার্থী

শরিফ চৌধুরী, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯:০০

যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সচেতনতার আওতায় হবিগঞ্জের সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষার্থী

যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সচেতনতার আওতায় এসেছে হবিগঞ্জের সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষার্থী। গত ১ বছরে সদর উপজেলার ২৫টি বিদ্যালয়ে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে তাদেরকে রাইট হিয়ার রাইট নাও এ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে ২শ’ শিক্ষক ও প্রায় ২ হাজার অভিভাবককে। সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি করা হয়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিয়ে উঠান বৈঠকও।

শিক্ষার্থী সোয়েনা আক্তার সানজানা বলেন, এটি আসলে খুবই চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয়। প্রথমে কাজ করতে গিয়ে বন্ধু বান্ধবসহ নানা জনের কাছ থেকে বিভিন্ন কথা শুনতে হয়েছে। মেয়ে হয়ে কেন এসব বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলি। তাদেরকে বুঝিয়ে বলার পর এখন আর খুব একটি বেগ পেতে হয়না। তিনি বলেন, বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের সচেতন করি। উঠান বৈঠক করি। আশাকরি ভবিষ্যতে এ চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে পারবো।

আরেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইমরান আহমদ বলেন, আমরা ছেলেরা যেভাবে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারি, মেয়েদের আসলে তেমনটি পাওয়া যায়না। এটি একটি বড় বাধা। এ বৈষম্য আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে। তাছাড়া বিভিন্ন সময় হুমকি ধমকির শিকারও হই। এক্ষেত্রে আসলে সুশিক্ষার আমাদের বড়ই অভাব রয়েছে। পর্যাপ্ত উদ্যোগেরও অভাব আছে।

হবিগঞ্জ রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক আতিকুল ইসলাম সোহাগ বলেন, আসলে ছেলে ও মেয়েদের বয়সন্ধিকাল নিয়ে পাঠ্য বই আছে। পাঠদানের মাধ্যমেই আসলে এক্ষেত্রে সব বুঝানো কঠিন। সেক্ষেত্রে সচেতনতামূলক প্রচারণা অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পাঠদানেও উৎসাহিত করে। স্বাস্থ্য বিষয়ে তাদের মধ্যে চিত্রাংকন, বিতর্ক প্রতিযোগিতা হয়। এগুলো আসলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল্লাহ বলেন, কাজটি আসলে পজেটিভ। কিন্তু যারা সচেতনতামূলক কাজটি করছে তারা কিভাবে উপস্থাপন করছে তার উপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। আমরা সব সময়ই বলছি লক্ষ্য রাখতে হবে যেন শিক্ষার্থীরা অনৈতিক কোন কাজে জড়িয়ে না পড়ে। সেদিকে আমরা নজরও রাখছি। তিনি বলেন, রাইট হিয়ার রাইট নাও প্রকল্পের কার্যক্রম যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার পাঠদানেও সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এখানে বইয়ে কিছু শব্দ আছে যা একজন পুরুষ শিক্ষক পড়াতে গেলে লজ্জ্বাবোধ করেন। একজন নারী শিক্ষক যেভাবে বলতে পারেন, একজন পুরুষ শিক্ষক সেভাবে বলতে পারেননা। সর্বোপরি নৈতিকতার বিষয়টি আমাদের সকলেরই খেয়াল রাখতে হবে।

পাঠ্য বইয়ে বয়সঃন্ধিকাল নিয়ে পাঠ রয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক সকলের মাঝেই বেশ জড়তা রয়েছে। এসব কাটিয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে উদ্যোগ নেয় এনজিও ব্র্যাক। গত ২০২১ সাল থেকে রাইট হিয়ার রাইট নাও প্রকল্পের মাধ্যমে তারা হবিগঞ্জে এ কার্যক্রম শুরু করে। ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে ৬টি গ্রæপ তৈরী করা হয়। প্রতিটি গ্রুপে ২৫ জনকে রাখা হয়। তাদের প্রথমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এরপর তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে প্রচারণামূলক কাজ শুরু করা হয়। এলাকায় এলাকায় উঠান বৈঠক করা হয়। ইতিমধ্যে সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষার্থী, ২শ’ শিক্ষক ও প্রায় ২ হাজার অভিভাবককে এ সচেতনতামূকল কার্যক্রমের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: