পাহাড়িদের কাছে অন্যতম খাবার ঝিঁঝিঁ পোকা

আকাশ মারমা মংসিং, বান্দরবান প্রতিনিধি | ২৫ জুন ২০২২, ০১:৫২

ঝিঁঝিঁ পোকা-ছবি সংগৃহীত

ঝিঁঝিঁ পোকা – রাতের আঁধারে ঝিঁঝিঁর ডাক শুনেনি এমন মানুষ কি পাওয়া সম্ভব! গ্রাম বাংলায় সন্ধ্যয় হলেই ঝিঁঝিঁর ডাক শোনা যায়। অনেকগুলো ঝিঁঝিঁ পোকার একসাথে ডাক শোনার সেই মুখরিত শৈশবের সন্ধ্যেটা কত শিহরিতই না করতো আমাদের। তবে এটি খাবার হিসেবে পাহাড়িদের কাছে অন্যতম একটি প্রিয় খাবারের নাম। বলছি মাটির গর্তে থাকা ঝিঁঝিঁ পোকার কথা।

ঝিঁঝিঁ পোকা এই নামটি সবার কাছে জানা। মাটির ভিতরে গর্তের ভিতর তাদের বসবাস। ঝিঁঝিঁ পোকাটিকে ইংরেজিতে বলা হয় গ্রিলিডি। এটি মারমাদের ভাষায় বলা হয় ‘পহ রই’ অর্থ্যাৎ ঝিঁঝিঁ পোকা। আবার চাকমা ভাষায় বলে ‘গুমুরো’। এই পোকা পাহাড়িদের কাছে জনপ্রিয় একটি খাবারের নাম। বিভিন্ন স্থান থেকে খুজে বের করে বাজারের আসে বিক্রি জন্য। আবার অনেকে এটি খাওয়ার জন্য খুজে বের করে নিয়ে আসে বিভিন্ন স্থান থেকে।

জানা গেছে, পোকাটির দেহের গঠন (২ ইঞ্চি) লম্বা। পোকাটি গায়ে বাদামী লাল রঙ্গের বিস্তৃত। পায়ে ধারালো কাটা পা দিয়ে গর্ত করতে সময় লাগে ৫ মিনিটের মতন। পোকাটি পাওয়া যায় শীতের শুষ্ক মৌসুমে ডিসেম্বর মাসে দিকে। শুকনো মাটিতে কিংবা বালুতে এই পোকাগুলো গর্ত করে থাকে। পোকাগুলো বিভিন্ন জায়গায় বাস করে। তবে এরা ঘাসে, ঝোপে, বনের গুহায়, জলাভূমি এবং বেলাভূমিতে বাস করতে বেশি পছন্দ করে। ঝিঁঝিঁ পোকারা নিশাচর। সন্ধ্যের পর এদের চলাচল শুরু হয়। সবচেয়ে বেশি জীববৈচিত্র্য দেখা যায় গ্রীষ্ম মন্ডলীয় এলাকায়। রাত্রীকালীন জোরস্বরে ডাকে নিজ গর্তে মুখে এসে। গর্তে ভিতর পুরুষ ও নারী সঙ্গী নিয়ে প্রায় সময় দেখা যায়।

পাহাড়ী বাজারস্থল ও হোটেল গুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন জায়গায় থেকে দা কিংবা কোদালের সাহায্যে মাটি কেটে গর্ত থেকে ঝিঝি পোকা সংগ্রহ করে বাজারের আসে বিক্রি জন্য। কষ্ট যেমনি হোক দামেও কিন্তু চড়া। এক একটি ঝিঁঝিঁ’র পোকা দাম ৫-৬ টাকা। তবুও পাহাড়ি ক্রেতারা কেনার জন্য ধুম পড়ে বাজার গুলোতে। পাশাপাশি পাহাড়ি হোটেল গুলোতে চলছে এই পোকার খাবার। তেলে ভাজা ঝিঁঝিঁ পোকার খেয়ে অনেকে স্বাদের যেন মন ভরছে নাহ। এক একটি পোকার খেয়ে  অনেকে স্বাদে মনে দেখা গেছে। তিন পার্বত্য জেলা এই ঝিঁঝিঁর পোকা পাহাড়ি জনগোষ্ঠিদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এছাড়াও রয়েছে, কাকড়া, শামুক, শিল মাছ (কুইচ্চ্যা), ঝিঁঝিঁ পোকাসহ নানান খাবার।

কিভাবে খাবেন- পোকাটি গায়ে থাকা দুটি ডানা গুলো কেটে ফেলে দিন। পায়ের থাকার কাটা অংশটি ভেঙ্গে দিন। পোকাটি পেতের ভিতর ময়লাগুলো ফেলে দিন। অতঃপর পোকার দেহ ও মাথার মাঝে ময়লাটিও ফেলে দিয়ে ভালো মত ধুয়ে ফেলুন। হাল্কা লবণ ও হলুদ মিশিয়ে গরম তেলে ভেজে ফেলুন।

বান্দরবান মারমা বাজারে বিক্রেতা থুই ম্রা মারমা জানান, বিভিন্ন জমি কিংবা রাস্তা কিনারে গর্ত গুলো দেখা মিলে। কোদাল কিং দা সাহায্যে গর্তটি কুড়ে গেলে পোকা গুলোকে গর্তে শেষ প্রান্তে পাওয়া যায়। তবে সারাদিন কষ্ট করে ৫০০-৭০০টি পোকা পেয়েছেন।

আরেক বিক্রেটা ক্রাবোয়ংপ্রু মারমা বলেন, পোকা গুলো সংগ্রহ করতে খুব কষ্টের। তবে ভোরের খুজতে তেমন কষ্ট হয় নাহ। কারণ ঐ সময় পোকা গর্ত গুলো অল্প থাকে। দিন বাড়লে পোকা গর্ত ও বাড়তে থাকে। প্রতি পোকার দাম ৫-৬ টাকা। সকালে বিক্রি করলে বিকালে শেষ হয়ে যায়। এই পোকাটি পাহাড়িদের জনপ্রিয়।

বাজারের কিনতে আসা ক্রেতা ক্যশৈমং মারমা জানান, এই পোকা গুলো প্রায় সময়  পাওয়া যায় না। মাঝে সাঝে পাওয়া গেলেও পোকার দাম বেশী । দামের যতই হোক খেতে বেশ মজা। তাই সুযোগের পেয়ে কিনে নিয়ে যাচ্ছি ৫০টি মতন।

বান্দরবান প্রানী সম্পদের কর্মকর্তা ড গোলামুর হোসেন জানিয়েছেন পোকাটি মুলত পাহাড়িদের কাছে জনপ্রিয়। বেশীর ভাগই পার্বত্য অঞ্চলের মধ্যে বাজার গুলোতে বিক্রির জন্য দেখা যায়। তবে এই পোকাটির সম্পর্কের তার কোন ধারণা নাই বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: