নিখোঁজের ১২ বছর পরে নিজ গৃহে ফিরলো ইয়াসমিন

আ.খ.ম রাকিব হোসাইন রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি | ১৮ জুন ২০২২, ১৮:২৮

সংগৃহীত

প্রায় ১২ বছর পূর্বে নিজের ফুফুর সাথে ঢাকায় বেড়াতে গিয়েছিল শিশু ইয়াসমিন। ঘটনাচক্রে হঠাৎই একদিন নিখোঁজ হয় সে। ইয়াসমিনের বয়স তখন সাড়ে ছয় বছর। দিশেহারা হয়ে পরিবারের লোকজন দ্বিগদিক খুঁজেও ইয়াসমিনের সন্ধান পায়নি কোথাও। হতাশ হয়ে একপর্যায়ে খোঁজা বাদ দিয়ে যখন সবাই প্রায় ভুলে গিয়েছিল ইয়াসমিনের কথা ঠিক তখনই এক যুগ পর স্বপ্ন নামে পরিবারের কাছে ফিরে এলো সেই ইয়াসমিন। তবে ছোট্ট সেই ইয়াসমিনের বয়স এখন ১৯, বিয়ে হয়েছে, স্বামীসহ আছে ৫ বছরের এক ছেলেসন্তান। দীর্ঘদিন পর পরিবারের কাছে ফিরে আসায় আবেগাপ্লুত ইয়াসমিন ও তার পরিবার। 

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের গহিনখালী গ্রামের নিজ জন্মভূমিতে শুক্রবার সকালে স্বামী-সন্তান নিয়ে এসে পৌঁছেছেন ইয়াসমিন। হারিয়ে যাওয়া সেই ইয়াসমিনের ফিরে আসার খবর পেয়ে ইয়াসমিনের বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন প্রতিবেশীরা। আর হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে পাওয়ায় আবেগে আপ্লুত তার পুরো পরিবার। 

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে নিজ গ্রামের বাড়ি রাঙ্গাবালী থেকে ইয়াসমিন তার ফুফু মিনারা বেগমের সঙ্গে ঢাকার কেরানীগঞ্জ বেড়াতে যান। ওই ফুফুর বাসা সংলগ্ন বালুর মাঠে খেলতে গিয়ে সে তখন নিখোঁজ হয়। পরে তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি। ইয়াসমিন ফিরে আসার পর পরিবার জানতে পারে যে, সেদিন মাঠে খেলাধুলা করতে গিয়ে ওই সময় সে অপহৃত হয়। পরে অপহরণকারীদের কাছ থেকে তাকে উদ্ধার করে কয়েকজন লোক। সেখান থেকে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের নূরপুর মালঞ্চ গ্রামে বসবাসরত মৃত সিরাজ মন্ডলের পরিবারের আশ্রয়ে বেড়ে ওঠে ইয়াসমিন। এর মাঝে কেটে যাওয়া এক যুগে তার বিয়ে হয় একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন জামনগরের রাঙামাটি গ্রামের খাইরুল ইসলামের সঙ্গে। 

এক যুগ পর নিজ বাড়িতে ফিরে আসা ইয়াসমিন (স্বপ্না) বলেন, ‘আমি ছোটবেলায় ফুফুর সঙ্গে বেড়াতে ঢাকায় যাই। ওই সময় বালুর মাঠে খেলতে গিয়েছিলাম। পেছন থেকে একজন মহিলা মুখ চেপে ধরে আমাকে নিয়ে যায়। এরপর আমি অচেতন হয়ে পড়ি, ওই সময় কী হয়েছে আমি কিছুই বলতে পারি না। পরে নাটোরে একটি পরিবারে আমি বড় হই। প্রায় ১২ বছর পর আমার জন্মদাতা বাবা-মায়ের খবর পাই। তারাই আমাকে রাঙ্গাবালীতে নিয়ে আসছেন। বাবা-মাকে পেয়ে আমার অনেক ভালো লাগছে।’

ইয়াসমিনের জন্মদাতা বাবা ইউসূফ প্যাদা বলেন, ‘আমার মেয়ে যখন হারিয়ে যায়, তখন ওর বয়স ৬ বছর ছয় মাস। ওরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। কিন্তু কোথাও পাইনি। আমার এক আত্মীয়ের কাছ থেকে হারিয়ে যাওয়া মেয়ের খবর পাই। পরে নাটরে গিয়ে আমার মেয়েকে শনাক্ত করি। তার দুই হাঁটুর কাটা চিহ্ন এবং ছোটবেলার কিছু স্মৃতি শুনে আমি নিশ্চিত হয়েছি যে, সে-ই আমার হারিয়ে যাওয়া মেয়ে ইয়াসমিন। পরে নাটোর সদর আদালতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আবেদন করি। নমুনা দেওয়া হয়। দুই মাস পর আদালতের মাধ্যমে ডিএনএর ফলাফল পাব।’   

এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, আমাকে এ বিষয়ে কেউ অবহিত করেনি।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: