আলীকদমে মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে আসছে শত শত অবৈধ গরু

বান্দরবান প্রতিনিধি | ১৬ জুন ২০২২, ০৯:৩১

সংগৃহীত

আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে আলীকদম পাহাড়ী সীমান্তে সক্রিয় হয়ে উঠেছে একাধিক গরু চোরাচালান চক্র। এখন আলীকদমের পাহাড়ী সীমান্ত পথ দিয়ে মিয়ানমার থেকে প্রতিনিয়ত অবৈধ ভাবে আসছে শত শত বিদেশী গরু। মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এবং বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দালালদের সহযোগিতায় এসব গরু আনা হচ্ছে বলে জানা গেছে। 

এদিকে আলীকদমে বিজিবি ও উপজেলা প্রশাসনের পৃথক ৩টি অভিযানে ইতিমধ্যে ৮২ টি গরু জব্দ করা হলেও বন্ধ হয়নি গরু চোরা চালান চক্রের তৎপরতা। পাহাড়ী সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বিদেশী গরু আসা অব্যাহত থাকলে কোরবানির ঈদে দেশীয় খামারিরা লোকসানের কবলে পড়বেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নের পশ্চিম এবং দক্ষিণে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ অবস্থিত। এ ইউনিয়নের সীমান্তে বেশির ভাগ এলাকায় অরক্ষিত ও দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল। এই ইউনিয়নের সীমান্তেই মিয়ানমারের অবস্থান। ফলে এসব এলাকার পাহাড়ি সীমান্ত পথ দিয়েই চোরাচালান কারবারিরা নির্বিঘ্নে অবৈধভাবে নিয়ে আসছে থাইল্যান্ডের ব্রাহামাসহ মিায়ানমারের বিভিন্ন জাতের শত শত বিদেশী গরু।

চোরাই পথে আসা এ সকল গরু পাহাড়ী সীমান্ত পার করে প্রথমে কুরুকপাতা ইউনিয়নের মারান পাড়া, বড় আঘলা, ভেওলা পাড়া, বড বেতি, ছোট বেতি ঝিরি, মেরিংচর, কালায়াছড়া,খেতা ঝিরিসহ বিভিন্ন এলাকায় রাখা হয়। কখনো কখনো মাতামুহুরি রিজার্ভের গভীর বনাঞ্চলেও ছেড়ে দেয়া হয় এসকল গরু। পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে আলীকদম–কুরুকপাতা সড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ট্রাক যোগে আলীকদম –লামা– ফাঁসিয়াখালী সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয় এই গরু গুলো। 

অভিযোগ রয়েছে বিশেষ সুবিধা হাসিলের মাধ্যমে গরু চোরাচালান চক্রকে সহায়তা করছে আলীকদমের গরু বাজার ইজারাদাররা। আলীকদম বাজারে থেকে এসকল গরু ক্রয়–বিক্রয় হয়েছে মর্মে রশিদ দেয়ার কারণে তা দেখিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন চেকপোস্ট গুলো নির্বিঘ্নে অবৈধ ভাবে আসা গরু পার করে নিয়ে যাচ্ছেন গরু চোরাচালান চক্র সদস্যরা।

আলীকদমের পাহাড়ী সীমান্ত পথ দিয়ে মিয়ানমার থেকে অবৈধ ভাবে গরু আসার খবরে গত ১৮ মে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেরুবা ইসলাম মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আলীকদম –পোয়ামুহুরী সড়কের বাবু পাড়া নামক এলাকা থেকে দুটি ট্রাকসহ ২৫ টি গরু ও এক পাচারকারীকে আটক করেন। এর ৫ দিন পরে গত ২৩ মে গভীর রাতে গোপন খবরের ভিত্তিতে আলীকদম ব্যাটালিয়ানের (৫৭বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ইফতেখারের নির্দেশে বিজিবির সদস্যরা গভীর জঙ্গল থেকে আরও ৪০টি বিদেশী গরু জব্দ করেন। এদিকে (১৪জুন) বিকালে আলীকদম উপজেলার মেরিনচর এলাকার জঙ্গল থেকে আরো ১৭টি বিদেশি গরু আটক করেছেন ৫৭ বিজিবি। মঙ্গলবার (১৪ জুন) বিকেলে বিজিবির অভিযানে আলীকদম মিরিন চর পয়েন্টে চোরাচলানিদের কবল থেকে এ সব গরু আটক হয়

 

বিজিবির জব্দকৃত গরু গুলো কাস্টমসের মাধ্যমে নিলাম দেয়া হলেও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের জব্দ গরুর বিষয়ে কোর্টে মামলা চলমান বলে জানা গেছে।

 

এদিকে গত ৬ জুন সরেজমিন পরিদর্শন করে আলীকদমের গরু বাজারে অবৈধভাবে মিয়ানমার থেকে আসা গরুর ছবি তুলতে গেলে গরু চোরাচালান চক্রের সদস্যরা দুই সাংবাদিককে মারধর করে এবং মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভাংচুর করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় ভোক্তভুগী এক সাংবাদিক আলীকদম লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

আলীকদম থানা অফিসার ইনচার্জ মো. নাছির উদ্দিন সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অবৈধভাবে দুর্গম পাহাড়ী সীমান্ত পথে আমাদের তেমন কিছু করার না থাকলেও সড়ক পথে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেরুবা ইসলাম বলেন, সীমান্ত পথ পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে গরু আসার খবরে প্রশাসন এবং বিজিবির পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে গরু জব্দ করা হয়েছে। শুনেছি সড়ক পথের পরিবর্তে এখন পাহাড়ী পথে গরু যাচ্ছে। আমরা সে বিষয়েও খোঁজ খবর নিচ্ছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: