সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার আমির মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষার নির্দিষ্ট সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পরে অনৈতিকভাবে শিক্ষার্থীদের কয়েকটি ওএমআর উত্তরপত্র পূরণ করতে দেখা গেছে কয়েকজন শিক্ষককে।
বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত অর্থনীতি/জীববিজ্ঞান (তত্ত্বীয়) এবং রবিবার অনুষ্ঠিত বিজ্ঞান/উচ্চতর গণিত (তত্ত্বীয়) বিষয়ের এমসিকিউ ওএমআর উত্তরপত্র পূরণ করেছেন তারা।
এ সংক্রান্ত তিনটি আলাদা আলাদা ভিডিও সময় ট্রিবিউনের হাতে এসেছে।
ঘটনাটি জানাজানির পর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কমিটির আহবায়ক হিসেবে গোয়াইনঘাট উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং সদস্য হিসেবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসার রয়েছেন।
ভিডিওগুলো গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং আমির মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের। বিদ্যালয়টি উপজেলার অন্যতম পরীক্ষা কেন্দ্র। ঐ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেয় পার্শ্ববর্তী হাজী সোহরাব আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। পরীক্ষা শেষে তাদের খাতা মূল কেন্দ্র তথা আমির মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পৌঁছে দেওয়ার পর ঐ প্রতিষ্ঠানের দুইজন সহকারী শিক্ষকের যোগসাজশে দুইজন খণ্ডকালীন শিক্ষক পরীক্ষার্থীর এমসিকিউ ওএমআর উত্তরপত্র পূরণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, পরীক্ষা শেষে আমির মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে কিছু পরীক্ষার্থী অবস্থান করছে। অফিসে একাধিক পরীক্ষার্থীকে ঘোরাফেরা করতেও দেখা যায়। এক পরীক্ষার্থীকে রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিয়ে বাবু স্যারের সঙ্গে দেখা করতে বলেন এক শিক্ষক।
৩৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, দুইজন শিক্ষক জীববিজ্ঞান পাঠ্যবই ও উত্তরপত্র দেখে দেখে এমসিকিউ ওএমআর উত্তরপত্রের বৃত্তভরাট করছেন। ২ মিনিটের আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, এক পরীক্ষার্থীকে বিভাগ জিজ্ঞাসা করছেন এক শিক্ষক। আরেক পরীক্ষার্থীকে কেউ একজন ধমক দিচ্ছেন। ওএমআর শিট ঠিক করে রাখতে দেখা গেছে একজনকে।
সূত্র জানায়, প্রত্যেক কেন্দ্রের খাতা ঠিক সময়ে পৌঁছে দেওয়া হলেও আমির মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের খাতা দেরিতে ডাক অফিসে পৌঁছে দেওয়া হয়। এ থেকে সন্দেহ হওয়ার পর গোপনে কেন্দ্রে অবস্থান নিয়ে ভিডিও ধারণ করা হয়। ঐসব ভিডিও গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্নজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। রবিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও প্রকাশ পেলে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়।
এ বিষয়ে জাফলং আমির মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এইচ এম মনিরুজ্জামান এ প্রতিবেদককে জানান, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। এখন এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাহমিলুর রহমান এ ঘটনাকে দুঃখজনক উল্লেখ করে প্রতিবেদককে জানান, ভিডিও ক্লিপ পাওয়ার পর রবিবার রাতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিক সত্যতা পাই। তাৎক্ষণিকভাবে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটি তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবেন। তদন্ত প্রতিবেদনের পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: