উলিপুরে হাতিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় : ভুয়া নিয়োগ দেখিয়ে দুই শিক্ষককে এমপিওভুক্ত

এ আর রাকিবুল হাসান, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি | ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ২৩:৪৮

ছবিঃ সংগৃহীত

কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার অন্তর্গত হাতিয়া ইউনিয়নের হাতিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে পূর্বের তারিখে ভুয়া নিয়োগ পত্রের মাধ্যমে কয়েক লক্ষা টাকা ঘুষ গ্রহণ করে দুই শিক্ষককে এমপিওভুক্তি করার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে।

ভুয়া নিয়োগ পত্রের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া ও এমপিওভুক্তি হওয়া ঐ দুই শিক্ষক হলেন বিদ্যালয়ের ‘খ’ শাখায় সহকারী শিক্ষক (বাংলা) জাহিদুল ইসলাম (যার ইনডেক্স নম্বর N56821466) এবং সহকারী শিক্ষক (ইসলাম শিক্ষা) মোস্তফা জামান (যার ইনডেস্ক নম্বর N56841966)।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সালে জাতীয় দৈনিক মানবজমিন এবং স্থানীয় দৈনিক একটি পত্রিকায় ভুয়া নিয়োগ পত্র দেখিয়ে ঐ দুই শিক্ষককে ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসের এক তারিখে যোগদান দেখানো হয়। এমনকি নিয়োগের জন্য যে রেজুলেশন তৈরি করা হয় সেখানে তৎকালীন সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে করা হয়েছে, শুধু সভাপতির স্বাক্ষর জালই নয় তৎকালীন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার স্বাক্ষরও জাল করা হয়। ২০২২ সালে যখন এমপিওভুক্তির জন্য বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আবেদন করেন তখন বিষয়টি সামনে আসে। কোন দিন বিদ্যালয়ে এই দুই শিক্ষককে ক্লাস নিতে কিংবা উপস্থিতি না দেখে হঠাৎ করে ৬ বছর ধরে চাকরি করছে মর্মে এমপিওভুক্তির আবেদন দেখে অন্যান্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং এলাকাবাসীর মধ্যে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা।

উল্লেখ্য যে, যে দুইটি পত্রিকায় ভুয়া নিয়োগ পত্র দেখিয়েছেন সেই দুই পত্রিকার মূল ছাপা কাগজে বিজ্ঞপ্তির উল্লেখ নেই। দুই পত্রিকা এডিট করে এই বিজ্ঞপ্তি বসানো হয়েছে।

এই নিয়ে মার্চ মাসের ২৩ তারিখে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন বিদ্যালয়টির সাবেক সভাপতি ও অভিভাবক সদস্য আবু বক্কর সিদ্দিক। লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, আমি ২০০৬ ইং তারিখ থেকে ২০১৬ ইং তারিখ পর্যন্ত উক্ত বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্ব পালন করি। সভাপতির দায়িত্বে থাকা কালীন সময় সহকারী শিক্ষক (বাংলা), সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) এবং সহকারী শিক্ষক ( ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা), সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) ও সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) পদে নিয়েগের জন্য কোন পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও নিয়োগ প্রদান করা হয় নাই। এতদসত্ত্বেও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল হোসেন “নিয়োগ বিধি” তোয়াক্কা না করে আমার স্বাক্ষর জাল করে উক্ত পদসমূহে ভূয়া নিয়োগ দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে এমপিওর জন্য জাল কাগজ পত্রাদি দাখিল করেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় জনমনে বিভিন্ন ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে । এমতাবস্তায় সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে সত্যতা যাচাই পূর্বক সরকার কর্তৃক এর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের সু ব্যাবস্থার জন্য অনুরোধ করছি।

হাতিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ও অভিভাবক মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আমি ২০০৬ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই স্কুলের সভাপতি ছিলাম। ২০১৬ সালের জুনে আমার মেয়াদ শেষ হলে প্রধান শিক্ষক আমাকে বাদ দেয়। এই প্রধান শিক্ষককেও আমিই সভাপতি থাকাকালে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে আমি দেখি আমি সভাপতি থাকাকালে ২০১৫ সালে খ শাখায় ৬ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যা আমি জানিই না। আমার স্বাক্ষর জাল করে করেছেন প্রধান শিক্ষক। পরবর্তীতে আমি এটা নিয়ে লিখিত অভিযোগ দেই। প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে আমাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে। যা অনিয়ম অনিয়মই এখানে যত প্রলোভনই দেখাক না কেন কোন লাভ হবে না।

তিনি আরও বলেন, ডিইও স্যারের কাছে গিয়ে প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন বলেছেন আমি নাকি বিষয়টি মিউচুয়াল করে ফেলেছি। পরে ডিইও স্যারকে আমি বলেছে জাল স্বাক্ষরের আবার মিউচুয়াল কি যা জাল তা তো জালই।

অভিযোগের বিষয়ে হাতিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

জানতে চাইলে হাতিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমাহ ভুট্টুর মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি বাজারে আছেন পরে কথা বলবেন বলে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।


এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শামছুল আলম বলেন, অভিযোগ পেয়ে আমি ডেকেছিলাম। প্রধান শিক্ষক কিছু কাগজপত্র নিয়ে আসছিলেন। তবে তিনি বলেছেন বিষয়টি ভুল বুঝাবুঝি যা আবু বক্কর সিদ্দিকি স্বীকার করেছেন এটা মিমাংসা হয়ে গেছে। তবে আবু বক্কর সিদ্দিকি বলেছেন এমন কিছুই বলেননি তিনি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। জাল কাগজপত্র দিয়ে নিয়োগ দেওয়া ও এমপিওভুক্তি হবার কোন সুযোগ নেই।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: