৭ মার্চ আমাদের অনুপ্রেরণা

সময় ট্রিবিউন ডেস্ক: | ৭ মার্চ ২০২৩, ১১:১০

ইমরুল কবির

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাঙ্গালীর জীবনে একটি অবিস্মরণীয় দিন, এই দিনে দেশের চরম ক্রান্তিকালে জাতির পিতা পাকিস্তানি শাসকদের অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে জাতির আলোর দিশারী হয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন।

ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার সম্মুখে তার কালজয়ী ভাষণ প্রদান করেন, সেই ভাষণের মাধ্যমে তিনি জনগণকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দেন। ৭ মার্চের ভাষণ বাঙ্গালী জাতিকে কখনও অন্যায়কারীর সঙ্গে আপস নয় এই আদর্শের শিক্ষা দিয়েছে। দিনটি ছিল বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জনসভা এবং জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সেই সভায় একমাত্র বক্তা।

জাতির পিতার দেওয়া ১৯ মিনিটের সেই ঐতিহাসিক বক্তব্য নানা দিক দিয়ে তাৎপর্য বহন করে । বক্তব্যে তিনি সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে ষড়যন্ত্র এবং নিরস্ত্র জনতার ওপর সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণের তীব্র নিন্দা জানান।

তিনি জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে বসার জন্য চারটি শর্ত দিয়েছিলেন- সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে হবে, সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে, নিরস্ত্র জনতার ওপর গুলি বর্ষণের তদন্ত করতে হবে, নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এই চারটি শর্ত পূরণ হলে তবেই তিনি অধিবেশনে যোগদান করবেন বলে ঘোষণা দেন। সেদিনের বক্তব্যে তিনি পরোক্ষভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সবাইকে ‘ ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার’ আহ্বান করেন এবং যার যা আছে তা নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকতে বলেন।

ভাষণের শেষ লাইনে, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সুংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম'-কথাটির মাধ্যমে মূলত তিনি বাঙ্গালি জনতার মাঝে স্বাধীনতার বীজ বপন‌ করেছিলেন। জাতির পিতার আহ্বানে উজ্জীবিত হয়ে বীর বাঙ্গালি জাতি আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানী বাহীনিকে পরাজিত করে ছিনিয়ে এনেছিল লাল সবুজের বাংলাদেশ। জাতির পিতার সেদিনের ভাষণ আমাদের ঐক্যবদ্ধ করেছিল শত্রুর বিরুদ্ধে এবং সেদিনের ৭ কোটি বাঙ্গালির হৃদয়ে বুকভরা সাহসের সঞ্চার করেছিল, যার ফলশ্রুতিতে আমরা মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছিলাম।

জাতির পিতার প্রতিটি বাণী ছিল সাম্যের বাণী, নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ের বাণী এবং আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস। ৭ মার্চের ভাষণের মূল কথাটি ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে দুর্নিবার প্রতিরোধ গড়ে তোলা ও সংগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এক তর্জনীর মাধ্যমে কিভাবে গোটা জাতিকে পরিচালিত করা যায় তার প্রকৃত উদাহরণ জাতির পিতার সেই অমোঘ বাণী।

৭ মার্চ আমাদের শিক্ষা দেয় দেশকে ভালোবাসার, দেশের মানুষকে ভালোবাসার এবং অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাধ্যমে সাম্যের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার। ৭ মার্চ আজীবন আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে বেঁচে থাকবে যেকোনো আন্দোলন সংগ্রামের পথ প্রদর্শক হয়ে। যতদিন পৃথিবীর বুকে লাল সবুজের পতাকা উত্তোলিত হবে ততদিন এই অমর বাণী আমাদের অন্তরে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে গেঁথে থাকবে। আমরা ৭ মার্চকে লালন করি ও ধারণ করি আমাদের চিরন্তন সংগ্রামের দিগন্তের সূচক হিসেবে।

লেখক,
প্রভাষক,
সমাজকর্ম বিভাগ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: