বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠ ছিলো শোষিতদের শক্তি

নূর ই আলম  | ৭ মার্চ ২০২৪, ১৬:৪৩

সংগৃহীত ছবি

একটি নিপীড়িত, নিষ্পেষিত, শোষিত শৃঙ্খলার শিকলে আবদ্ধ বাঙালিকে শোষণের কারাগার থেকে স্বাধীন জাতিতে রূপান্তরের যে অবিস্মরণীয় অধ্যায়ের সর্বাপেক্ষা তাৎপর্যপূর্ণ পটভূমি ৭ ই মার্চের রেসকোর্স ময়দান। বঙ্গবন্ধু এদিন বাঙালির স্বাধীনতার চেতনা বোধকে উজ্জীবিত করেনি বরং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাঙালির স্নাইপার হিসেবে কাজ করেছে ভাষনটি। ফলস্বরূপ বাঙালি পেয়েছে স্বাধীনতা, লাল সবুজের নিজস্ব পতাকা ও একক অস্তিত্ব। পরবর্তীতে ইউনেস্কো ভাষণটিকে দিছে ঐতিহাসিক মর্যাদা।

 
টুঙ্গিপাড়ার খোকা থেকে বাঙালির বঙ্গবন্ধু জীবনের সবটা সময়েই ভেবেছেন বাঙালির মুক্তি, অসাম্প্রদায়িকতা ও জাতীয়তাবাদ। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর সেই ১৮ মিনিটের অগ্নিঝড়া ভাষণ বাঙালিকে যতটা পেরেছে সঙ্গবদ্ধ করতে তারচেয়ে বেশী শৃঙ্খলার শিকল ভাঙার দৃঢ় মনোভাব তৈরি করেছে। 
 
শোষকের সম্মুখে মাথানত বাঙালিকে কারার ওই লৌহকপাট ভেঙে বীরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার যে মানসিকতা তার সিংহভাগই এসেছিলো বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে 'জয়বাংলা' স্লোগান শোনা ও অন্তরে ধারণা করার পর থেকেই।
 
                                           বল বীর 
                                   বল উন্নত মম শির!
                  শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!
                                           বল বীর 
নজরুলের এই বিদ্রোহী কবিতার এই পঙক্তিগুলো ও বঙ্গবন্ধুর আগুন ঝড়া আঠারো মিনিটের যুগান্তকারী ভাষণ একই সূত্রে গাঁথা। যা বাঙালিকে করেছে ক্রমাগত সঙ্গবদ্ধ, শির উঁচু করে চলার মানসিকতা ও স্বাধীনচেতা মনোভাব। নিঃসন্দেহে রেসকোর্স ময়দানের ভাষণটি মুক্তিকামী মানুষের পথের পাথেয়।
 
বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে ধ্বনিত জয়বাংলা স্লোগানের পরপরই শোষণের ভাটা সরে যেয়ে স্বাধীনতার জোয়ার আসে বাংলাদেশের মানচিত্রে। 
                    তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,
                    হদৃয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার
                    সকল দুয়ার খোলা৷ কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠ বাণী?
                    গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি।
 
নির্মলেন্দু গুণ এর 'স্বাধীনতা, এ শব্দটি আমাদের কিভাবে হলো' কবিতার লাইনগুলো বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সীমিত প্রতিচ্ছবি। তবে উভয়ের কণ্ঠেই ছিলো স্বাধীনতার গান।
 
৭ মার্চ এর সকালে শেখ মুজিব তাঁর শরীরে জ্বর অনুভব করেন। কিন্তু এই কিংবদন্তী, বজ্রকন্ঠী, ইস্পাতদেহীকে জ্বর কেন কোনো কিছুতেই কাবু করতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঘোষণা মুক্তিকামী মানুষের কাছে লাল-সবুজ পতাকাকে মূর্তিমান করে তোলে। আর এরই মাধ্যমে বাঙালির ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হয়। বাঙালির অধিকার, অস্তিত্ব ফিরে পাওয়ার এই ভাষণ আজও বাঙালি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।
 
লেখক: নূর ই আলম, 
সাংবাদিকতা বিভাগ,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া। 

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: