প্রযুক্তির রাজধানী সিলিকন ভ্যালি

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক | ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:৩০

সংগৃহীত

বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বা প্রযুক্তিপণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত একটি জরুরি উপাদান সিলিকন। এই সিলিকন থেকেই সারাবিশ্বের প্রযুক্তির রাজধানী সিলিকন ভ্যালির নামকরণ করা হয়েছে। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত সিলিকন ভ্যালিতে আছে প্রায় কয়েক হাজার প্রযুক্তি-প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। ফেসবুক, গুগল ও অ্যাপলের মতো প্রযুক্তি দানবের সদরদপ্তরও এই সিলিকন ভ্যালিতে। বর্তমান প্রযুক্তি বিশ্বের সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করা হয় সরাসরি সিলিকন ভ্যালি থেকে।

১৯৯৫ সালের পর সিলিকন ভ্যালি প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়। কিন্তু এর শুরুটা হয়েছিল তারও বহু আগে। তখন থেকেই ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাপলে নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার, উৎপাদন গবেষণার অগ্রগতি এবং প্রযুক্তিগত কোম্পানি গঠনের জন্য বিখ্যাত ছিল।

১৯৩৯ সালের দিকে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফ্রেডরিক টারম্যান এবং তার সাবেক ছাত্র ডেভিড প্যাকার্ড ও উইলিয়াম হিউলেট মিলে একটি ছোট্ট ইলেকট্রনিক কোম্পানি গড়ে তুলেছিলেন। তারাই প্রথম গবেষণার উদ্দেশ্যে এখানকার পলো আল্টোর এই ছোট্ট গ্যারেজ একটি কোম্পানি গড়ে তোলে। পরবর্তীকালে এই পলো আল্টোর গ্যারেজই সিলিকন ভ্যালি নামে পরিচিতি পায়।

১৯৪৭ সালে প্রফেসর উইলিয়াম ডব্লিউ হ্যান্ডসিন নতুন মাইক্রোওয়েভ ল্যাবরেটরি নির্মাণ করেন। এরপর ১৯৫১ সালে জ্যরিয়েন্ট অ্যাসোসিয়েট উদ্ভাবন ও গবেষণার জন্য স্ট্যামফোর্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরি করেন। ১৯৭০ সালে ইন্টারনেটের জনক অধ্যাপক ভিনটন জি কার্ফ তার এক সহপাঠীকে নিয়ে সিলিকন ভ্যালিতেই ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর গবেষণা চালান।

এরপর ১৯৮০ সালে জন কিউফি ও তার ছাত্র টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ডাটা ট্রান্সফারের কাজ শুরু করেন। এখান থেকেই আধুনিক ইন্টারনেট ব্যবস্থার উৎপত্তি ঘটে। তখন থেকে আজ পর্যন্ত অনেক নোবেলজয়ী গবেষক এবং অধ্যাপকদের নানা গবেষণা আর আবিষ্কারের মাধ্যমে হাইটেক তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন চলতে থাকে সিলিকন ভ্যালিতে। যার ফলে নয়নাভিরাম সেই পাহাড়ে ঘেরা এলাকাটি আজকের বিশ্বের হাইটেক বা উচ্চ প্রযুক্তির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

সিলিকন ভ্যালি নামটি রূপ এবং আক্ষরিক উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়। অতীতে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের এই অঞ্চলটি ফল উৎপাদন ও কৃষি কাজের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। সারিসারি ফল ও ফুলের বাগানের কারণে এই অঞ্চলকে বলা হতো ভ্যালি অব দ্য হার্টস ডিলাইট বা হৃদয়ের আনন্দ উপত্যকা।

১৯৭১ সালে ডন হফলার তার ইলেক্ট্রনিক পত্রিকার একটি প্রবন্ধে এই অঞ্চলটি সিলিকন ভ্যালি নামে উল্লেখ করেন। এরপর থেকেই নামটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং পরবর্তীতে নামটি আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যালিফোর্নিয়ার মানচিত্রের ব্যবহার হতে থাকে। বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিস্কো এবং সান জোস শহরের মধ্যবর্তী অঞ্চলটি সিলিকন ভ্যালি নামে পরিচিত।

সিলিকন ভ্যালির মধ্যে আবার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি এলাকা হলো- পলো আল্ট্রো, কোপাটিনো, মেনলো পার্ক, মাউন্টেন ভিউ ইত্যাদি। পলো আল্ট্রোতে রয়েছে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি। মেনলো পার্কে রয়েছে ফেসবুকের অফিস। কোপাটিনোতে অ্যাপলের অফিস আর মাউন্টেইন ভিউতে গুগলের অফিস।

বর্তমানে বিশ্বের সিংহভাগ কম্পিউটার ও প্রযুক্তি পণ্য এই সিলিকন ভ্যালি থেকেই উদ্ভাবিত হয়। কম্পিউটার প্রযুক্তি সফটওয়্যার মাইক্রোচিপস বা ইন্টারনেট ভিত্তিক সেবা প্রদানকারী প্রায় সকল বৃহৎ প্রতিষ্ঠানেরই এখানে কার্যালয় রয়েছে। ধীরে ধীরে বড় কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি অনেক ছোট ছোট সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে সিলিকন ভ্যালিতে।

এক পর্যায়ে এই স্থানটি হয়ে ওঠে ইন্টারনেট অর্থনীতি এবং উচ্চ প্রযুক্তির সংক্রান্ত প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র। সিলিকন ভ্যালি ছোট-বড় বিভিন্ন স্টার্ট-আপ কোম্পানি বা তরুণ উদ্যোক্তাদের এক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। বর্তমান প্রযুক্তি বিশ্বে রাজত্ব করা ফেসবুক, গুগল, অ্যাপল ও এইচপির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সিলিকন ভ্যালির র্স্টাট আপ হিসেবে তাদের যাত্রা শুরু করেছিল। এছাড়া বর্তমানে সিলিকন ভ্যালিতে আছে- মাইক্রোসফট, অ্যামাজন, টুইটার, নেটফ্লিক্স, পেপাল, উবার, এডোবি, এএমডি, ইয়াহু, এনভিডিয়া, এইচপি, ইনটেল, ইবে, টেসলা, ওরাকল, সনি, ওপেরা, সিমেন্স ইত্যাদি।

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ২৭০ কোটি মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করে। অতীতে কোনো প্রযুক্তিপণ্য স্মার্টফোনের মতো এতোটা বিস্তার ঘটেনি। স্মার্টফোন সহজলভ্য হওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় অবদান রয়েছে চীনের কারণ বিশ্বের সিংহভাগ স্মার্টফোনই তৈরি হয় সেখানে। আরও সুনির্দিষ্ট করে বলা যায় বিশ্বের ৭০ ভাগ স্মার্টফোন তৈরি হয় শুধু চীনের সেনজেন শহরে। সেনজেনে তৈরি স্মার্টফোনের কারণে পৃথিবীর অধিকাংশ মধ্যবিত্ত অতিআধুনিক এই যন্ত্রটি এত সস্তায় ব্যবহার করতে পারছে।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: