আখেরি মোনাজাত শুরু, ‘আমিন আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত তুরাগ তীর

সময় ট্রিবিউন | ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ০৯:২১

সংগৃহীত ছবি

ইহকালের শান্তি, পরকালের মাগফেরাত এবং বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ ও সমৃদ্ধি কামনায় শুরু হয়েছে মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ জমায়েত বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত। রাজধানীর অদূরে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে আজ রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা ১০ মিনিটে শুরু হওয়া এই আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন কয়েক লাখ মুসল্লি।

বাংলাদেশের তাবলিগের প্রধান মারকাজ কাকরাইলের মুরব্বি হাফেজ মাওলানা মো. জোবায়ের হাসান এ মোনাজাত পরিচালনা করছেন।

আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে টঙ্গী ময়দান ও আশপাশের এলাকায় স্থান না পেয়ে যে যেখানে পেরেছেন বসে পড়েন রাস্তায়, খোলা মাঠে বা বাসার ছাদে কিংবা যানবাহনেই। তবুও তাদের কোনো আক্ষেপ নেই। আখেরি মোনাজাতে যেকোনোভাবে অংশ নিতে পেরেই তারা খুশি।

আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে আজ রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) ভোর থেকে দলে দলে যোগ দেন হাজার হাজার মানুষ। মধ্যরাত থেকে ইজতেমা ময়দান এলাকায় বাস চলাচল বন্ধ থাকায় হেঁটেই রওনা হন মুসল্লিরা। তবে ঢাকার দক্ষিণাঞ্চল থেকে মেট্রোরেলে করে ইজতেমা এলাকায় এসেছেন অনেকে। এতে অফিস সময়ে হাজার হাজার মানুষের ভিড় দেখা গেছে মেট্রোরেল স্টেশনগুলোতে।

মতিঝিল, প্রেসক্লাব, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, মিরপুর-১০ এর মুসল্লিরা মেট্রোরেলে উঠে উত্তরা স্টেশনে আসেন। গতকাল মধ্য রাত থেকে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস, চান্দনা চৌরাস্তা, বোর্ড বাজার, কলেজ গেট, বিমানবন্দর, উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর, কামারপাড়া ও টঙ্গী রেলস্টেশন এলাকা হয়ে ঢাকা ও গাজীপুরের আশপাশের জেলার মুসল্লিরা দলে দলে ইজতেমা ময়দান এলাকায় এসেছেন।

আখেরি মোনাজাতে মুসল্লিরা দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য দোয়া করছেন। বিশ্বশান্তি ও কল্যাণ চেয়ে মহান আল্লাহর দরবারে আকুতি জানাচ্ছেন। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবারের ইজতেমায় সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চাদ, ইথিওপিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, পাকিস্থান, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, মালয়েশিয়া, মরক্কো, নেপাল, কেনিয়া, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, জর্দান ও দুবাইসহ বিশ্বের ৬১টি দেশের প্রায় এক হাজার ৯০০ জন বিদেশি মুসল্লি অংশ নিয়েছেন।

এদিন আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মুসল্লিদের ঢল নেমেছে। সবাই আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে ছুটে এসেছেন। ভোগড়া বাইপাস থেকে ইজতেমা মাঠের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। এই পুরো পথ হেঁটেই মুসল্লিরা রওনা হন ইজতেমা মাঠের উদ্দেশে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে।

জাকারিয়া নামে এক মুসল্লি বলেন, ভোর রাত ৪টায় পিকআপ ভ্যানে করে কালিয়াকৈর থেকে থেকে রওনা হয়ে ভোগড়া বাইপাসে এলাকায় আসেন সাড়ে ৬টায়। কিছু সময় পরিবহণের জন্য অপেক্ষা করেন। পরিবহণ না পেয়ে অন্যান্য মুসল্লিদের মতো হাঁটা শুরু করেন।

আখেরি মোনাজাতের দিন আজ রোববার ফজরের নামাজের পর থেকেই শুরু হয় হেদায়েতি বয়ান। হেদায়েতি বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক। এরপর কিছু সময় নসিহতমূলক আলোচনা করেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা।

ইজতেমা ময়দানের মুসল্লিদের যাতায়াত সহজ করতে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টা থেকে গাজীপুরের তিনটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় গাজীপুর মহানগর ট্রাফিক পুলিশ। মোনাজাত শেষে আজ রোববার দুপুর ২টার পর সড়কগুলো আবার খুলে দেওয়া হবে।

সড়ক তিনটি হলো ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আবদুল্লাহপুর থেকে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস, টঙ্গী-ঘোড়াশাল আঞ্চলিক সড়কের মিরের বাজার থেকে টঙ্গীর স্টেশন রোড পর্যন্ত এবং রাজধানী ঢাকার কামারপাড়া মোড় থেকে টঙ্গীর মন্নুগেট সড়ক। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এসব সড়কে ইজতেমার মুসল্লি বহনকারী যানবাহন ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি চলতে পারবে না। তবে জরুরি প্রয়োজনের গাড়ি যেমন অ্যাম্বুলেন্স, গণমাধ্যমকর্মী বা বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।

এ বছরও দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। তাবলিগের আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বিরোধী পক্ষ মাওলানা জুবায়ের ইজতেমা করছেন ২, ৩ ও ৪ ফেব্রুয়ারি। এর চার দিন বিরতির পর সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা ইজতেমা করবেন ৯, ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারি।

গত শুক্রবার শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এদিন ফজর নামাজের পর আম বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা আহমদ বাটলা। আর তা বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা নুরুর রহমান। পরে বিভিন্ন সময় ভাগ করে তাবলীগ জামায়াতের আলেমরা বয়ান করেন। শনিবারও একইভাবে বয়ান হয়। এদিন যৌতুক ছাড়া বিয়ের একটি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পর্বের ইজতেমায় গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত বার্ধক্য ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে কয়েকজন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: