বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চুল কেটে টাকা নেন না তিনি

সময় ট্রিবিউন | ১৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০৬:২৩

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের গোপাল চন্দ্র শীলের সেলুন-ছবি সংগৃহীত

রাজধানীর আগারগাঁও। গোপাল চন্দ্র শীলের সেলুনের দোকানে সারাদিন ভীড় পড়েই থাকে। তবে ওই রাস্তা দিয়ে গেলে একটা সাইনবোর্ড চোখে পড়বে। সেই সাইনবোর্ড নজর কাড়ে সবার। সেখানে লেখা "এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের ফ্রি চুল কাটা হয়।"

সেলুনের ভেতরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে জাতীয় চার নেতাসহ বেশ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার ছবি টাঙানো আছে। নিয়মিত এসব ধুয়েমুছে রাখা হয় বলে জানালেন সঞ্জিত ও সুমন নামের গোপালের দুই সহকারী। গোপালের মতো এঁরা দুজনও বিনা মূল্যে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চুল কাটেন। তাঁরা জানালেন, এই সেলুনে চুল কাটাতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো সিরিয়াল লাগে না। অসুস্থ কিংবা বয়সের ভারে ন্যুব্জ যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রয়োজনে তাঁদের বাড়িতে গিয়েও চুল-দাড়ি কেটে দেওয়া হয়। তবে সব বীর মুক্তিযোদ্ধা যে বিনা মূল্যে চুল কাটাতে আসেন তা নয়, খুশি হয়ে গোপালকে আশীর্বাদ জানাতেও আসেন অনেকে।

গোপালের এমন সিদ্ধান্তের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'অনেক দিন আগের কথা, বছর বিশেক তো হবেই। এই শহরে তখন চুল-দাড়ি কামাতে খরচ হতো সাকল্যে ১৫ টাকা। পশ্চিম আগারগাঁও এলাকায় আমার সেলুনে এসে চুল-দাড়ি কাটার খরচ জানতে চান বয়স্ক একজন লোক। ১৫ টাকা লাগবে শুনে আক্ষেপ করে লোকটা বললেন, ‘'কেন যে দেশটা স্বাধীন করলাম!'’ এমন কথা শুনে লোকটার পরিচয় জানতে চাইলাম। পরে জানতে পারলাম, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা তিনি। তাঁর আক্ষেপভরা সেই কথা গভীর দাগ কাটে আমার মনে। আমি তখনই সিদ্ধান্ত নেয়, আজীবন বিনা মূল্যে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চুল-দাড়ি কাটব।'

সেই সিদ্ধান্তে আজও অটল আছেন গোপাল। গত ২০ বছরে প্রায় এক হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার চুল-দাড়ি কেটেছেন বিনা পয়সায়। শুধু তা-ই নয়, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম, ঠিকানা, স্বাক্ষর এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতার কথাও তিনি টুকে রেখেছেন একটি স্মারক বইতে। গোপালের সেলুনে সংরক্ষিত সেই বই রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের খণ্ড খণ্ড অভিজ্ঞতার এক অসামান্য দলিল হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ছবিও সংগ্রহ করছেন গোপাল। স্মারক বইটির পাতা ওলটালেই তার প্রমাণ মেলে, অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধাই গোপালের প্রশংসা করে বইটিতে নানা কিছু লিখেছেন।

গোপাল বলেন, ‘যে মানুষগুলো জীবন বাজি রেখে স্বাধীন দেশ এনে দিয়েছেন; তাঁদের জন্য তো তেমন কিছু করতে পারিনি। তাই নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী যতটুকু করা যায়, তা করছি। এর বিনিময়ে কোনো প্রত্যাশা নেই। দেশ ও দেশের সূর্যসন্তানদের প্রতি ভালোবাসা থেকেই এই উদ্যোগ। চুল কাটার সময় বীর মুক্তিযোদ্ধারা যখন তাঁদের যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতার গল্প বলেন, তা শুনতে ভালো লাগে।’


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: