নোয়াখালীতে পুলিশ-আ.লীগ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, আহত ১৬

সময় ট্রিবিউন | ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৫:৫২

নোয়াখালীতে পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালী জেলা শহরে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী সভা-সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।

এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ ও গুলি ছোঁড়ে পুলিশ। পুলিশের লাঠিচার্জ এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগের ছোঁড়া ইটপাটকেলে পথচারীসহ ১৬ জন আহত হয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগামীকাল সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নোয়াখালী পৌরসভা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

রোববার বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত জেলা শহর মাইজদীর টাউন হল মোড় থেকে রশিদ কলোনি পর্যন্ত আবদুল মালেক উকিল প্রধান সড়কে এই ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, আগামীকাল সকাল ১০টায় শহরের টাউন হল মোড়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সমাবেশের ডাক দেয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন।

একই সময় জেলা আওয়ামী লীগ কার‌্যালয়ের সামনে ২০১৯ সালের সম্মেলনে ঘোষিত জেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি পূর্নাঙ্গ করার দাবিতে সমাবেশ ডাকেন স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী।

অপর দিকে সকাল ১০টায় নোয়াখালী পৌরসভায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও র‌্যালীর আয়োজন করেন পৌর মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেল।

আওয়ামী লীগের সমাবেশ ও আলোচনা সভা সফল করতে আজ বিকেলে শহরের রশিদ কলোনি থেকে মোটরসাইকেল শোডাউন বের করেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীনের সমর্থিত নেতাকর্মীরা। তারা শহরের বড় মসজিদ মোড়ে পৌঁছালে এতে বাঁধা দেয় পুলিশ। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেওয়া সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর অনুসারীরা পুলিশের সঙ্গে যোগ দিয়ে শাহীনের অনুসারীদের ধাওয়া দিলে তারা পাল্টা ধাওয়া দেয়। এ সময় লাঠিচার্জ করে পুলিশ।

এতে শাহীন অনুসারীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে বেশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছোঁড়ে। ঘটনার সময় বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে এবং আহত হন পথচারী আলমগীর, জনি, ইসতিয়াক, নাসিমা বেগম, সদর উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান নুর আলম ছিদ্দিকী রাজু, আওয়ামী লীগ নেতা কামাল উদ্দিন, যুবলীগ কর্মী মোহন, ছাত্রলীগ নেতা রাজুসহ অন্তত ১৬ জন।

নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেল অভিযোগ করে বলেন, আমার নেতাকর্মীরা আগামীকাল মুজিববর্ষের আলোচনা সভা ও র‌্যালি সফল করার লক্ষ্যে বিকেলে শোডাউন বের করে। শোডাউনটি টাউন হল মোড়ে পৌঁছালে সংসদ সদস্য একরামের লোকজন ইট-পাটকেল নিয়ে হামলা চালায়। এতে আমার পাঁচ নেতা-কর্মী আহত হয়েছে।

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন বলেন, আমরা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনায় আগামীকাল সকালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নিয়েছি। ওই কর্মসূচি সফল করতে আমাদের দলের নেতা-কর্মীরা বিকেলে শহরে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রাটি বড় মসজিদ মোড়ে পৌঁছালে সুধারাম থানার ওসি শাহেদের নেতৃত্বে পুলিশ বাঁধা দেয়। এ সময় ওসির সহযোগিতায় একরাম চৌধুরীর কিছু সমর্থক আমার কর্মীদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে আমাদের কর্মীরা পাল্টা প্রতিরোধ করলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে, এলোপাথাড়ি গুলি ছোঁড়ে।

এ বিষয়ে নোয়াখালী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর মন্তব্য জানতে চেষ্টা করলে তার পক্ষে আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু বলেন, ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন। ওই আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার দাবিতে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এই সমাবেশ পণ্ড করতে প্রতিপক্ষের লোকজন আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করেছে।

সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহেদ উদ্দিন বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৯ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুঁড়েছে। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: