শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষার্থীদের যতো ভাবনা 

সিয়াম মাহমুদ | ২৮ জুলাই ২০২২, ২০:১০

সংগৃহীত

বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশে মুখস্ত বিদ্যার মূল্য অনেক। কারন পাঠ্য সূচিটাই এমন যে, গদবাঁধা মুখস্ত ছাড়া উপায় নেই। তাছাড়া, বর্তমানে সরকারি বেসরকারি চাকরি লাভের উদ্দেশ্যে কিংবা বিসিএস পরীক্ষার জন্য, মুখস্ত বিদ্যা ছাড়া অন্য কোনো উপায়ই নেই।

শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য সরকার পর্যায়ক্রমে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার, পরিবর্তন, সংযোজন, বিয়োজন চলছে। কিন্তু এতে করে শিক্ষার্থীরা কতটুকু লাভবান হয়েছে? শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে নতুন নতুন শিক্ষানীতি কতটুকু উপকার করেছে? সরকারের ভালো শিক্ষানীতির সাফল্য না হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, যারা আমাদের শিক্ষা দিচ্ছেন তারা নিজেরায় শিক্ষার্থীদেরকে বিষয়গুলো বুঝাতে পারছেন না। যার ফলে সৃজনশীল কার্যক্রমের বদলে পুরোনো আদিম যুগের মুখস্থ বিদ্যাতেই রয়ে গিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

একটা সদ্য জন্মলাভ করা সন্তান যখনই কথা বলতে শেখে বাবা-মা উন্নত ভবিষ্যত এর চিন্তায় তাদেরকে নিয়ে হাজির হন কিন্ডারগার্টেন কিংবা চাইল্ড কেয়ার এর মতো নানান প্রতিষ্ঠানগুলোতে। শুরু থেকেই বাচ্চাদের বুঝানো হয়- তোমাকে ১০০ তে ৯৯ পেতে হবে। প্রাথমিকের মোটামুটি শেষ পর্যায়ে শুরু হয় আরেকটি চ্যালেঞ্জ। তারপর পিএসসি, জিএসসি, এসএসসি, এইচএসসি। পেতে হবে গোল্ডেন জিপিএ। কিন্তু নিজের সন্তান কতটুকু শিখতে পারলো, তার প্রচেষ্টা কারো নেই। পড়, মুখস্ত করো, পরীক্ষার খাতায় লিখো আর জিপিএ এনে দাও। এভাবেই চলে আসছে। সেই, মুখস্থ বিদ্যার পরিত্রাণ ঘটাতে সরকার শিক্ষানীতিতে পরিবর্তন এনে সৃজনশীল পদ্ধতি নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু তারপরও সন্তোষজনকভাবে শিক্ষার মেধা বিকাশ ঘটেনি। যার ফলে, আমরা রয়ে গিয়েছি- আই এ্যাম জিপিএ ৫ (I am GPA 5) দুনিয়ায়। শিক্ষা শুধু সার্টিফিকেটেই থাকছে, শিক্ষার্থীর ব্রেইনে নয়। ফলাফল, দেশে দক্ষ জনবলের অভাবে দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থান পায় বিদেশীরা। 

আমাদের প্রত্যেকেই স্কুল জীবনের শুরুতে "I go to school এবং She goes to school" এই দুটি ইংরেজি বাক্য পড়েছি। কিন্তু আমাদের মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই এই দুটি sentence(বাক্য) এর ব্যাখা জানে না। কারণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমাদেরকে এর প্রায়োগিক ব্যাখার পরিবর্তে এমনভাবে শিখিয়েছে, যা আমরা অনেকটা মুখস্থ করে ফেলেছি। কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস এ্যান্ড টেকনোলজি এর শিক্ষার্থী মাহবুবা ইসলাম মিম। জানাচ্ছিলেন, নিজের শিক্ষা জীবনের অভিজ্ঞতার কথা।

শিক্ষার্থী মাহবুবা আরও বলেন, বর্তমানে দেশের স্বাক্ষরতার হার প্রায় ৭৫%(৭৪.৬৬%)। প্রতিবছর বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় পাশের হার ৮০%-৯০%। গোল্ডেন এ+ তো অহরহ। কিন্তু এই পাশের সাথে শিক্ষার মানের যৌক্তিকতা কতটুকু? আদৌত আমরা সমানতালে শিক্ষিত হতে পেরেছি? তাছাড়া, আমাদের ক্লাসগুলোতে মেধা যাচাইয়ের সহজ উপায় হলো- ভুল হলেও অনর্গল ২-৪ লাইন ইংরেজিতে কথা বলতে পারা। এক্ষেত্রে ক্লাসের ২/৩ জন শিক্ষার্থীকে হাইলাইট করে মেধাবী হিসেবে বেছে নিয়ে বাকি শিক্ষার্থীদেরকে বৈষম্যের ন্যায় বঞ্চিত করা হয়। শিক্ষকদের উচিত এমনভাবে তাদের লেকচারগুলো দেওয়া যেন, ক্লাসের সকল শিক্ষার্থীরা তার কথাগুলো বুঝতে পারে। সহজ সরল সাবলীল ভাষায় যুক্তিসঙ্গত ব্যাখা ও বাস্তবিক উদাহরণ দিয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে পাঠদান করলে প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীই ক্লাসে পড়া বুঝবে এবং নিয়মিত ক্লাসে মনোযোগী হবে। শুধু মেধাবীদের বুঝার স্বার্থে ক্লাস করিয়ে গেলে শিক্ষা বৈষম্য চিরদিনই রয়ে যাবে। তাছাড়া, শিক্ষার্থীরা তাদের অর্জিত জ্ঞান কিভাবে প্রয়োগ করবে সে বিষয়েও ক্লাসে ধারণা দেওয়া প্রয়োজন। কারণ, শিক্ষার্থীরা যদি না জানতে পারে সে একটি বিষয় কেনো শিখলো, তাহলে এই শিক্ষা দিয়ে সে কি করবে? শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের প্রতি যতো যত্নবান হবেন, শিক্ষার্থীরা ততো ভালো করবে।

এ বিষয়ে রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার তাজিন বলেন, আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে একটা ট্র্যাকের হলো, সাবজেক্টিভ ট্র্যাক। যখন শিক্ষার্থীরা নবম শ্রেণিতে ভর্তি হতে যায়, তখনই তাদের মধ্যে একটা প্রবণতা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তোমার রেজাল্ট ভালো তুমি সায়েন্স, তোমার রেজাল্ট মোটামুটি তুমি কমার্স আর তোমার রেজাল্ট কোনোরকম তুমি আর্টস নিয়ে পড়বা। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা হিংসা প্রবণতা চলে আসে, তারা দাম্ভিক ভাব ধারণ করে। আর সাবজেক্টিভ এর এটার জন্য অনেক বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন সেক্টর থেকে হচ্ছে বঞ্চিত। অনেক সময় দেখা যায় যে সায়েন্স নিয়ে পড়ার স্টুডেন্ট তার অষ্টম শ্রেণির রেজাল্ট একটু কারণ বশত খারাপ হলে তার ভবিষ্যৎ হয়ে পরে কিছুটা অনিশ্চিত। কিন্তু যে ভালো রেজাল্ট করে তার বেলায় প্রেক্ষাপট ভিন্ন, সে চাইলে সব দিকে যেতে পারবে। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিৎ না। এতে অন্য শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। সাথে তাদের ভবিষ্যৎ-ও অনিশ্চিতের দিকে। তারপর আবার স্কুল কলেজের গণ্ডি না পেরোতেই তাদের প্রস্তুতি নিতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি যুদ্ধে। এখানেও ঝড়ে পড়ে লাখ লাখ শিক্ষার্থী। মানসম্মত ভাবে ভর্তি পরিক্ষায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেয়ে ঝড়ে পড়ে অনেক শিক্ষার্থী। এতে দেখা যায় যে, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ একরকম অনিশ্চিত। তখন সে না পারে দেশের জন্য কিছু করতে আর না পারে নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী একটা চাকরি পেতে।

লামিয়া আরও বলেন, আমাদের দেশে আরো একটি প্রেক্ষাপট আছে তা হলো মুখস্থ বিদ্যা। যে যত ভালো মুখস্থ করতে পারবে তার মার্কস তত বেশি সে তত ভালো স্টুডেন্ট। কিন্তু এটা এমন হওয়া উচিৎ নয়। শিক্ষার্থী পড়া বুঝে তা প্রয়োগ করবে এতে সে সারাজীবন মনে রাখবে। উন্নত দেশে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের প্রোজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়া হয়, এতে সে নিজ চোখে দেখে সব কিছু মনে রাখতে ও আয়ত্ত করতে পারছে। কিন্তু আমাদের দেশে গাদা গাদা বই কাঁধে চাপিয়ে স্কুল কলেজ করা লাগে, এতে নাকি সে অনেক শিখবে। যার ফলে যারা মুখস্থ করতে না পারে তারা পিছিয়ে পরছে, যার ফলে দেশ চলে যাবে আরো অন্ধকারের দিকে। 

লামিয়া আরও জানান, আমরা যখন স্কুল কলেজে পড়তাম, তখন একটা জিনিস প্রায় লক্ষ্য করতাম, যে সারাবছর প্রথম হয়, সে সবসময়ই প্রথম হয় আর শিক্ষকদের নজর কারে। আর যে ফেইল করে সে সবসময়ই ফেল করে কিন্তু শিক্ষকরা কিন্তু তাকে এক্সট্রা যত্ন করত না। কিন্তু শিক্ষকরা তো মানবতার ফেরিওয়ালা। তারা শিক্ষার্থীদের এক দাঁড়িপাল্লায় ওজন করবেন, কিন্তু এখানে কিছু শিক্ষার্থী বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের উচিৎ সকল শিক্ষার্থীদের এক ভাবে যতন নেওয়া, এতে সবাই ভালোর দিকে এগিয়ে যাবে। নয়তো শিক্ষার্থীরা অকালে ঝরে পরবে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহফুজুল ইসলাম বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরো কার্যকরী এবং ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজনীয় বলে মনে করি। আমরা দেখতে পাই, প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার মানের দিকে তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। বিশেষত, গ্রামের শিক্ষার্থীরা এই ক্ষেত্রে বেশি বৈষম্যের শিকার বলে আমি মনে করি। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলগুলোতে যেই শিক্ষকবৃন্দদের নিয়োগ প্রদান করা হয় তাদের যোগ্যতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন এবং বাস্তব দিক বিবেচনা করলে, এটাই সত্য। তাই গ্রামীন পর্যায়ে প্রাথমিক স্কুলগুলোতে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের সুবিধা আরও বৃদ্ধি করতে হবে, যেনো মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা শেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ায় আগ্রহী হয়। একটা কথা প্রচলিত আছে তা হলো, "যেমন গুরু, তেমন শিষ্য"। তাই বলা যায়, আমরা যদি শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাকে আরো মজবুত ভিত্তির উপর স্থাপন করতে চাই তাহলে প্রথমেই যোগ্য শিক্ষক নিশ্চিত করতে হবে। নতুন শিক্ষানীতিতে(২০২২) বেশ পরিবর্তন এসেছে, যে সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, তা যৌক্তিক বলে মনে করি। আসন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে একটি আলোচিত বিষয় হলো, এসএসসি পর্যন্ত সকল ধরনের পরীক্ষা অর্থাৎ পিএসসি এবং জেএসসির মতো বোর্ড পরীক্ষাগুলো বাতিল করা। আমি এই সিদ্ধান্তের সাথে একমত পোষণ করতে পারছি না। কারণ, বোর্ড পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের মাঝে লেখাপড়ার আগ্রহকে বাড়িয়ে দেয় বলে আমি মনে করি। ২০১০ সালের শিক্ষা নীতিমালায় পিএসসি এবং জেএসসির মতো বোর্ড পরীক্ষাগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তারপর আমরা দেখতে পাই শিক্ষার্থী ও অভিভাবক বৃন্দের মাঝে এক ধরনের উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। এই উদ্দীপনাকে অবশ্যই আমরা ইতিবাচকভাবে নিতে পারি। একজন শিক্ষার্থীকে যতো স্তরে পরীক্ষা নেওয়া হবে, ততো বেশি উদ্দীপনা এবং লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হবে বলে মনে করি। তাই, এই বিষয়ে আরো বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধ থাকবে।

মাহফুজুল আরও বলেন, বর্তমান সময়ে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীন কারিগরি শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করার মাধ্যমে তার পরাশক্তি দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিকভাবে অতিক্রম করতে যাচ্ছে। তাই, আমাদেরও ষষ্ঠ শ্রেণী থেকেই কারিগরি শিক্ষার উপর জোর দেওয়া উচিত বলে মনে করি। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত, আমাদের শিক্ষার্থীরা কারিগরি শিক্ষাকে এখনও গুরুত্ব দিচ্ছে না এবং অবজ্ঞার চোখে দেখছে। তাই তাদেরকে এই বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে মাধ্যমিক স্তর থেকেই কারিগরি বিষয় অন্তর্ভুক্ত রাখা উচিত বলে মনে করি।

সরকারি তিতুমীর কলেজের আরও একজন শিক্ষার্থী নৌরিন জাহান প্রিয়া বলেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা তুলনামূলক ভালো। যেমন- প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, বৃত্তি প্রদান, সৃজনশীল বিকাশ। তবে, সব পর্যায় শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন হয় নি। প্রযুক্তির ব্যবহার থেকে নির্ভরশীল বেশি দেখা যায়। অনেক বিদ্যালয় তো শুধু পাঠ বই আছে কিন্তু তথ্য প্রযুক্তির কোনো সরঞ্জাম নেই, দক্ষ শিক্ষক এর অভাব। সৃজনশীল বিকাশের সুযোগ কম। তাছাড়া, চাকরির বাজার যেহেতু এখন প্রতিযোগিতা। তাই, কারিগরি শিক্ষা বা গবেষণা যদি শিক্ষা জীবনেই করা যায়, তাহলে তো চাকরি জীবনে সহায়তা করবে।

রাজধানীর গার্হস্থ অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থী আদিবা হোসেন মিলা বলেন, বর্তমানে আমরা শিক্ষায় সাফল্য বলতে পরীক্ষার খাতায় এ(+) এবং রেজাল্ট জিপিএ-৫ পাওয়া কে বুঝি। এখন শিক্ষার্থীরা গোপনে না বুঝে মুখস্ত করে হোক কিংবা অসাধু উপায় অবলম্বন করেও যদি A+ পায়, আমরা তার শিক্ষার মানকে যথাযথ বলেই গণনা করি। অথচ, মানুষের অন্তর্নিহিত গুনাবলিগুলোর বিকাশ সাধনের উদ্দেশ্যে পড়াশোনা করাই শিক্ষার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য। কিন্তু বর্তমানে চাকরির বাজারে সবার আগে সবচেয়ে ভালো চাকরি পাওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে। যদি সার্টিফিকেট এর এ(+) কে মূল লক্ষ্য হিসেবে না দেখে জ্ঞান লাভ ও শেখা কে গুরত্ব দেয়া হয় তাহলে মুখস্ত বিদ্যার কথা ভুলে গিয়ে শিক্ষার্থীরা শেখার আগ্রহ পাবে; হতাশগ্রস্থ হয়ে থাকতে হবে না।

সর্বোপরি বলা যায়, মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাকে মূল কাঠামো হিসেবে গ্রহণ করে যথেষ্ট সুশিক্ষিত হওয়া যায়, তা উন্নত বিশ্বে প্রমাণিত হলেও আমরা এ শিক্ষায় যত্নবান হতে পারিনি। তাছাড়া, শিক্ষক স্বল্পতাও শিক্ষা ব্যবস্থার একটি বড় সমস্যা। বিদ্যালয় সমূহে ৬০:১ অনুপাতে শিক্ষক থাকার নিয়ম থাকলেও কোনো বিদ্যালয়েই সে অনুপাতে শিক্ষক নেই। 

নতুন শিক্ষাক্রমে(২০২২) প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিদ্যমান পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন (শিখনকালীন) বেশি হবে। এর মধ্যে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হবে না। পরবর্তী শ্রেণিগুলোর মূল্যায়নের পদ্ধতি হিসেবে পরীক্ষা ও ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রম—দুটোই থাকছে। দশম শ্রেণির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা থাকছে না। দশম শ্রেণি পর্যন্ত সবাইকে ১০টি বিষয় পড়তে হবে, এখনকার মতো মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থাকবে না। বিভাজন হবে একেবারে উচ্চ মাধ্যমিকে গিয়ে। আর পরীক্ষা ও সনদকেন্দ্রিক পড়াশোনার পরিবর্তে পারদর্শিতাকে গুরুত্ব দিয়ে একেবারে দশম শ্রেণি শেষে পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীর ওপর চাপ কমানোর জন্য একাদশ শ্রেণির শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে একাদশ শ্রেণি শেষে একটি পরীক্ষা এবং দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে দ্বাদশ শ্রেণি শেষে আরেক পাবলিক পরীক্ষা হবে। এ ছাড়া পারদর্শিতা অর্জন নিশ্চিত করা এবং মুখস্থনির্ভরতা কমানোর জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিখনকালীন বা ধারাবাহিক মূল্যায়নব্যবস্থা চালু হবে। নবম ও দশম শ্রেণিতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য কৃষি, সেবা বা শিল্প খাতের একটি পেশার ওপর দক্ষতা অর্জন বাধ্যতামূলক করা এবং দশম শ্রেণি শেষে যেকোনো একটি পেশায় কাজ করার মতো পেশাদারি দক্ষতা অর্জনের ব্যবস্থাও রয়েছে নতুন শিক্ষাক্রমে। সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন করা, অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন-শেখানো কার্যক্রম বিদ্যালয়ের বাইরেও পারিবারিক ও সামাজিক পরিসরে অনুশীলন করা এবং সব শিক্ষার্থীর অভিন্ন মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের জন্য শিক্ষাক্রম রূপরেখার ১০টি বিষয়ের সঙ্গে মাদ্রাসা ও কারিগরি শাখার বিশেষায়িত বিষয়গুলোর যৌক্তিক সমন্বয় সাধন করার কথা রয়েছে এই শিক্ষাক্রমে।

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শিক্ষাব্যবস্থায় বড় সংস্কারের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। যেমন শিক্ষার্থীদের মুখস্থবিদ্যার বদলে বাস্তব অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষাদানের দিকে এগিয়ে যাওয়া হবে। শিক্ষকদেরও প্রচলিত শিখনপদ্ধতির বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াতে হবে।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: