সেদিন আল্লাহ কীভাবে যেন হাতে তুলে বাঁচাল: শেখ হাসিনা

সময় ট্রিবিউন | ২১ আগষ্ট ২০২১, ২০:০৯

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- ছবি সংগৃহীত

১৭ বছর আগে ২১ আগস্ট রাজধানীতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে নারকীয় গ্রেনেড হামলার দুঃসহ স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন বলেছেন, ‘সেদিন দিন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা আমাকে নিজ হাতে বাঁচিয়েছেন।’

শনিবার (২১ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভায় তিনি এমন প্রশ্ন করেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটার পর একটা গ্রেনেড। আমি দেখলাম রক্ত। তিনটা ফোটার পর কয়েক সেকেন্ড, তারপর আবার। মনে হচ্ছে শেষ নেই। এ যেন কেয়ামতের মতো। আল্লাহ কীভাবে যেন হাতে তুলে বাঁচাল। আওয়াজে যা হলো, একটা কানে আমি শুনতে পাইনি। ট্রাকে একটা টেবিল দেয়া হয়েছিল। সাধারণত টেবিল থাকে না, ওই দিন ছিল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেখলাম হানিফ ভাই রক্তাক্ত। ওনার ছেলে খোকনসহ প্রত্যেকে আহত। যখন আমি গাড়িতে উঠতে যাব, দরজা খুলে মাহবুব দাঁড়ানো, তখনই গুলি হলো। মাহবুব মারা গেলো। গাড়ি একটানে চালিয়ে নিয়ে আসলো। আহত হয়ে মানুষ যখন ছটফট করছে, পুলিশ এসে লাঠি চার্জ করল। টিয়ারগ্যাস মারতে শুরু করল। যেখানে এরকম ঘটনায় পুলিশ এগিয়ে আসে সাহায্যে, সেখানে দূর থেকে যারা ছুটে আসছে তাদের বাধা দেয়া হলো।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের সহযোগিতা না থাকলে এরকম ঘটনা ঘটতে পারে না। আমার যে ড্রাইভার ছিল মতিন, সাহসী ছিল, সুধাসদনে আসার পরই গাড়িটা বসে গেল। রেহানা আমাকে দেখে চিৎকার। ওখানে দাঁড়িয়েই কে কোথায় তা খোঁজ নিতে শুরু করি। সবচেয়ে দুর্ভাগ্য সেদিন বিএনপি মাইন্ডের কোনো ডাক্তারই ঢাকা মেডিক্যালে ছিল না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (পিজি হাসপাতাল) কোনো আহতকে ঢুকতেই দেয়া হয়নি। আর ঢাকা মেডিক্যালে কোনো বিএনপির ডাক্তার চিকিৎসা দেয়নি। আমাদের মাইন্ডের যারা তারা ছুটে এসে চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করে।’

তিনি বলেন, ‘যারা গণতন্ত্রের কথা বলে, এটা কিসের গণতন্ত্র। একটা প্রকাশ্য জনসভায় কীভাবে আর্জেস গ্রেনেড মারতে পারে? একজন আর্মি অফিসার যখন পড়ে থাকা একটা গ্রেনেড নিয়ে বলল, এটা আলামত হিসেবে রাখতে হবে। তাকে ধমক দেয়া হলো। বিস্ফোরণ স্থান ধুয়ে মুছে সব পরিষ্কার করা হলো। কোনো আলামত তারা রাখতে চায়নি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওইদিন রাত ১১টায় সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে চারজনকে দেশ থেকে বাইরে পাঠিয়ে দেন খালেদা জিয়া (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী)। তার মধ্যে তাজউদ্দীনও ছিল। শোনা যাচ্ছে, তখন কর্নেল রশিদ ও ডালিম ঢাকায় এসেছিল। তাদের রক্ষা করে খালেদা জিয়া। যখন তারা জানলো- আমি মরি নাই। তখন দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও জড়িত ছিল।’

২১ আগস্টের ক্ষেত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগস্ট মাস আসেই শোক ব্যথা-বেদনা নিয়ে। ১৫ আগস্ট জাতির পিতা, আমার ভাই-বোনসহ সবাইকে হারালাম। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আমাদের চরম যন্ত্রণা ও কষ্টের। বিএনপির অত্যাচারটা শুরু হয়েছিল ২০০১ সালের ১ অক্টোবর থেকেই। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতোই নির্যাতন শুরু করেছিল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর হামলা হইলো। আমরা সেটার প্রতিবাদ করলাম। সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ ডাকলাম। মুক্তাঙ্গনে সভা হওয়ার কথা ছিল, অনুমতি দেয়নি। মধ্যরাতে পার্টি অফিসের সামনে করার অনুমতি দিলো। তখনই সন্দেহ হল কেনো এতো রাতে অনুমতি দিলো। প্রকাশ্যে দিবালোকে এভাবে গ্রেনেড হামলা করে মানুষ হত্যা করবে, তা কখনো ভাবিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি বাবার পথ ধরেই এ দেশের মানুষের জন্য কাজ করছি। গ্রেনেড, বোমা, বুলেট দিয়ে বারবার হত্যাচেষ্টা হয়েছে। আল্লাহর রহমতে নেতাকর্মীরা আমাকে বাঁচিয়েছেন।’

বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘তারা গুম-খুনের কথা বলে। তাদের হারিস চৌধুরী, সালাউদ্দিন আরও কে কে গুম হয়েছে বলে বেড়ায়। পরে বিদেশে খোঁজ পাওয়া যায়। কেউ ভারতে, লন্ডনে বা আমেরিকায়। আসলে তারা নিজেরা নিজেদের গুম করে রাখে। এটাও এ দেশে ঘটে, দুর্ভাগ্য।’

সভায় ২১ আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলার স্মৃতিচারণ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, কার্যনির্বাহী সদস্য ও বিএমএ’র সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী প্রমুখ।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: