দেশের চলচ্চিত্র যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে, সেটিই আমার চাওয়া : প্রধানমন্ত্রী

সময় ট্রিবিউন | ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ২২:০৪

দেশের চলচ্চিত্র যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে, সেটিই আমার চাওয়া : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন বা বিএফডিসির উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন দেখা যায়নি। তবে বর্তমানে সেখানে অত্যাধুনিক কমপ্লেক্স নির্মিত হচ্ছে। যা পূর্ণতা পেলে বদলে যাবে দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির রূপ। বিশাল এই প্রকল্পের পেছনে প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে।

তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি টাকার হিসাব করেন না। বরং দেশের চলচ্চিত্র যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে, শিল্পীরা যাতে ভালোভাবে কাজ করতে পারে, সেটাই তার চাওয়া।

মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২২ প্রদান শেষে সিনেমা নিয়ে অনেক কথা বলেন তিনি।

বিএফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণের ব্যয় প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বলেছেন, ‘টাকার অঙ্ক দিয়ে হিসাব করি না, আমাদের শিল্পীরা যাতে ভালো করে কাজ করতে পারে, সেটাই চাই। আমরা গাজীপুরে ফিল্ম সিটি প্রতিষ্ঠা করেছি। এটাও বঙ্গবন্ধু চিন্তা করেছিলেন। এটার প্রথম পর্বের কাজ শেষ হয়ে গেছে। দ্বিতীয় পর্বের কাজও হচ্ছে। সেখানে সব ধরনের শুটিং যাতে করা যায়, সেই ব্যবস্থা থাকবে। আমরা চাই দেশের অঙ্গন ছাড়িয়ে আমাদের চলচ্চিত্র বিদেশেও সমাদৃত হোক। সেই সঙ্গে শিল্পী-কুশলী সবাইকে আমি এই আহ্বান জানাই, এদিকে আরও মনোযোগ দিন। যেহেতু মানুষের জীবনে সচ্ছলতা এসেছে, তাই তারা বিনোদনের দিকে ঝুঁকছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করেন, ‘একটি দেশের সমাজকে চলচ্চিত্র সচেতন করতে পারে, আনন্দ দিতে পারে, সংস্কার করতে পারে, ইতিহাসকে ধারণ করতে পারে, দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে।’


বক্তব্যের এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ ছবির শিল্পীদের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘নির্মাতা-শিল্পীরা প্রত্যেকেই চমৎকার কাজ করেছেন। বিশেষ করে অভিনয়শিল্পীরা, তারা এত চমৎকার অভিনয় করেছে। সম্পূর্ণ অন্তর দিয়ে কাজ করেছে। এজন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আশা করি এটা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে বড় অর্জন হয়ে থাকবে।’

 

যদিও খুব একটা অবসর মেলে না। তবু মাঝে মধ্যে ছবি দেখেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তার ভাষ্য, ‘হলে যেহেতু সিনেমা দেখা হয় না, যখন বিমানে চড়ি, তখন কিন্তু বাংলাদেশের সিনেমা দেখি। কিছু দিন আগে সাউথ আফ্রিকায় যাওয়ার সময় পরপর দুইটা সিনেমা দেখলাম। মাঝে মাঝে অনেকে আমাকে পেনড্রাইভে ছবি পাঠায়, সেগুলাও দেখার চেষ্টা করি। কিন্তু সরকার চালানোর পাশাপাশি তো অতো সময় পাওয়া যায় না।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি তার বক্তব্যে বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হাত দিয়ে এফডিসি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এবং তার হাত দিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে এই অঞ্চলে চলচ্চিত্রের যাত্রা হয়েছিল। তিনি জানতেন, অনুধাবন করতে পেরেছিলেন, আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর পশ্চিমাদের হিংস্র থাবা পড়েছে। সে জন্য তিনি এফডিসি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এরপর থেকে বহু কালজয়ী চলচ্চিত্র যেমন নির্মিত হয়েছে, বহু কালজয়ী শিল্পী তৈরি হয়েছেন। চলচ্চিত্র এমন একটি মাধ্যম যেখানে সাহিত্য-শিল্পের সব শাখার সমন্বয় হয়েছে। এবারের আসরে যারা পুরস্কার পেয়েছেন, তাদের সকলকে অভিনন্দন।’

এ বছর আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন যৌথভাবে চিত্রনায়িকা রোজিনা ও অভিনেতা কামরুল আলম খান খসরু। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে রোজিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দেশের শিল্প-সংস্কৃতি বিকাশে এফডিসি প্রতিষ্ঠাসহ অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। যার ফলে আমরা অনেকেই কাজের সুযোগ পেয়েছি, আমি আপনাদের রোজিনা হতে পেরেছি। এই পুরস্কার পেয়ে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদানের জুরি বোর্ডকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমার দীর্ঘ পথচলায় যারা সহযোগিতা করেছেন, পরিচালক-প্রযোজক, সহকর্মী, সাংবাদিক ও দর্শক সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার পুরস্কার তাদের সবার প্রতি উৎসর্গ করলাম।’

পুরস্কার প্রদান ও বক্তব্য শেষে ছিলো সাংস্কৃতিক পর্ব। যেখানে চিত্রনায়ক ফেরদৌস ও চিত্রনায়িকা পূর্ণিমার সঞ্চালনায় বিখ্যাত বেশ ক’টি গানের সঙ্গে মঞ্চে নেচেছেন সাদিয়া ইসলাম মৌ, নুসরাত ফারিয়া, মাহিয়া মাহি ও তমা মির্জা। এছাড়াও ছিলো সাইমন সাদিক-দীঘি, আদর আজাদ-পূজা চেরী, সোহানা সাবা-গাজী নূর ও জায়েদ খান-আঁচলের দ্বৈত পরিবেশনা। এছাড়াও গান শুনিয়েছেন বালাম ও কোনাল।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: