লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শোক

সময় ট্রিবিউন | ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ০০:০৭

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-ফাইল ছবি

উপমহাদেশের বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) পৃথক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সংগীতশিল্পী লতার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোকবার্তায় বলেন, এই সুরসম্রাজ্ঞীর মৃত্যুতে উপমহাদেশের সংগীতাঙ্গনে এক বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হলো। নিজের কর্মের মধ্য দিয়ে চিরদিন এ অঞ্চলের মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন লতা মঙ্গেশকর। প্রধানমন্ত্রী শোকবার্তায় তার আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

লতা মঙ্গেশকর ৯২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। চার সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে মধ্য মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালের আইসিইউতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার মারা যাওয়ার খবরে শোকাহত গুণী এই শিল্পীর ভক্ত-অনুরাগীরা।

মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে চিকিৎসক প্রতীত সমদানির তত্ত্বাবধানে ছিলেন লতা মঙ্গেশকর। এরপর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালের ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রয়াত সুরসম্রাজ্ঞীর জন্য চিকিৎকদের লড়াই কাজে এলো না, কোটি কোটি অনুরাগীর প্রার্থনা বিফলে গেল। ৯২ বছর বয়সে না-ফেরার দেশে চলে গেলেন 'ভারতের কোকিলকণ্ঠী'।

লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুসংবাদ নিশ্চিত করেছেন ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার এন সান্থানাম। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোভিড-পরবর্তী জটিলতার ফলেই সকাল ৮টা ১২ মিনিটে মৃত্যু হলো লতা মঙ্গেশকরের। আপাতত তার দেহ শিবাজি পার্কে নিয়ে যাওয়ার আয়োজন করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, সেখানেই শেষ শ্রদ্ধা জানানো হবে লতা মঙ্গেশকরকে।

এএনআই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জানুয়ারির শুরুতেই করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে লতার। করোনার মৃদু উপসর্গ থাকলেও নিউমোনিয়ার কারণে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর ৯ জানুয়ারি থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মাঝে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও হঠাৎ আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। টানা ২০ দিনের বেশি সময় হাসপাতালে ছিলেন লতা মঙ্গেশকর।

তবে শনিবার লতা মঙ্গেশকরের শারীরিক পরিস্থিতির আবারও অবনতি হয়। এদিন দুপুরে চিকিৎসকেরা জানান, গায়িকার অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক। এরপরই বরেণ্য এই শিল্পীর পরিবারের সবাই তার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করতে থাকেন। চিকিৎসকেরাও চেষ্টা করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত সব চেষ্টা ব্যর্থ করে চলে যান কিংবদন্তি এ শিল্পী। লতার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকের ছায়া নেমেছে ভারতসহ বাংলাদেশে।

১৯২৯ সালে ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন লতা। পিতা নাট্যাভিনেতা ও গায়ক পণ্ডিত দিননাথ মঙ্গেশকরের মেয়ের নাম হেমা রাখলেও পরে হেমার নাম বদল করে রাখা হয় লতা। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে ছিলেন সবার বড়। বাবার মৃত্যুর পর ১৯৪২ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে মারাঠি সিনেমায় গান গেয়ে সংগীতজীবন শুরু লতার। পরের বছর কণ্ঠে তোলেন হিন্দি সিনেমার গান। ১৯৪৯ সালে হিন্দি সিনেমা 'মহলের' 'আয়েগা আনেওয়ালা' গানটি দিয়ে পেয়ে যান ব্যাপক পরিচিতি।  এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। লতার সুরেলা কণ্ঠের জাদুতে বুঁদ থেকেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম।

সাত দশকের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ৩০ হাজারের বেশি গান রেকর্ড করেছেন তিনি। শুধু যে গুণী ব্যক্তিদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন তা নয়, ছোটখাটো থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার–কী নেই সে তালিকায়। তিনবার পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। মধুমতী সিনেমার 'আজারে পরদেসি' গানের জন্য ১৯৫৮ সালে পান শ্রেষ্ঠ সংগীতশিল্পীর পুরস্কার। তারপর ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড, ফিল্মফেয়ার স্পেশাল অ্যাওয়ার্ড, ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননাসহ বহু পুরস্কারে অর্জন করেন তিনি। বাংলায় তার অসংখ্য জনপ্রিয় গান আছে।

২০০১ সালে তাকে ভারতের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান, ভারতরত্নে ভূষিত করা হয়েছে। এর আগে ‘পদ্মভূষণ’, ‘পদ্মবিভূষণ’-এর মতো নাগরিক সম্মানও দেওয়া হয়েছে লতা মঙ্গেশকরকে। চলচ্চিত্র জগতের সর্বোচ্চ পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে দ্বারাও সম্মানিত হয়েছেন তিনি।

জাদুকরী কণ্ঠের লতা মঙ্গেশকর চেয়েছিলেন নিজের মতো করে হারিয়ে যেতে। ৯২ বছর বয়সে তিনি চলে গেলেন পার্থিব এই মায়া ছেড়ে। কিন্তু যুগ যুগ ধরে তার কণ্ঠ বেঁচে থাকবে শ্রোতার মন-মননে।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: