যৌন হয়রানি রোধের অস্ত্র 'সেফটি পিন'

সময় ট্রিবিউন ডেস্ক | ২১ মার্চ ২০২৩, ০২:১০

সংগৃহীত

১৮৪৯ সালে উদ্ভাবনের পর থেকে নারীদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় অনুষঙ্গ সেফটি পিন। পোশাক সুন্দর করে পরতে বা শাড়ির ভাঁজ ঠিক রাখতে ব্যবহার হয় এই পিন- সাধারণত এমনটি জানা সকলের। তবে এই 'সেফটি পিন' এখন যৌন হয়রানি রোধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে- সম্প্রতি এমনটি দেখা গেছে ভারতে।

ভারতের প্রায় প্রতিটা নারী জনসমাগমস্থলে যৌন হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। এসব হেনস্তা থেকে বাঁচতে অনেকে ছাতা ব্যবহার করেন, লম্বা নখ রাখেন, আবার অনেকে জুতার হিলকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। তবে যৌন হয়রানি ঠেকাতে ভিন্ন এক অস্ত্রের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে সেফটি পিনের নাম। খবর বিবিসির

ভারতের বেশ কয়েকজন নারী টুইটারে জানান, তারা সবসময় তাদের হ্যান্ডব্যাগ বা গায়ে একটি পিন বহন করেন। জনাকীর্ণ জায়গায় বিকৃতদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটি তাদের পছন্দের অস্ত্র।

তাদের একজন ২০ বছরের দীপিকা শেরগিল জানান, তিনি অফিসে যাতায়াতের জন্য নিয়মিত একটি বাসে যেতেন। সেই বাসে ৪০ বছরের এক ব্যক্তিও যাতায়াত করতেন। তিনি সবসময় আমার পাশে এসে দাঁড়াতেন, ঝুঁকে পড়তেন। ড্রাইভার যখনই ব্রেক কষতেন, তখনই আমার ওপর পড়ে যেতেন।

তিনি বলেন, কিন্তু একদিন সব সীমা লঙ্ঘন করেন ওই ব্যক্তি। বাসে হস্তমৈথুন করে আমার কাঁধে বীর্যপাত করেন। সেদিনই সিদ্ধান্ত নিই, অনেক হয়েছে, আর না। এবার তাকে শাস্তি দিতেই হবে।

তিনি বলেন, নিজেকে ভীষণ অপবিত্র লাগছিল। বাড়িতে পৌঁছে অনেকক্ষণ গোসল করেছি। মাকেও বলিনি আমার সঙ্গে কি হয়েছে। সে রাতে ঘুমাতে পারিনি। চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবতে পারছিলাম না। তারপর প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ভাবতে শুরু করি। আমি তার ক্ষতি করতে চেয়েছিলাম, তাকে আঘাত করতে চেয়েছিলাম। পরদিন ফ্লাট জুতা ছেড়ে হাইহিল পরি। কাপড়ের সঙ্গে নিই সেফটি পিন।

শেরগিল আরো বলেন, ওই লোক এসে আমার পাশে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার আসন থেকে উঠে দাঁড়ালাম এবং আমার হিল দিয়ে তার পায়ের আঙুলগুলো পিষে ফেললাম। সে চিৎকার দিতে লাগলো, তার চিৎকারে প্রচণ্ড আনন্দ অনুভব করেছিলাম। তারপর সেফটি পিন দিয়ে তার কপালে খোঁচা দিই এবং বাস থেকে নেমে পড়ি।

পরের এক বছর ওই বাসে যাতায়াত করলেও, কেবল একদিন তাকে দেখতে পেয়েছিলেন শেরগিল। শেরগিলের গল্পটা শুনতে ভয়ংকর হলেও এমন ঘটনা সচরাচর ঘটে ভারতে।

নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা কর্মীরা বলছেন, এখানে আসলে ভয় বা লজ্জার কিছু নেই। সমাজের ভয়ে অনেক নারী প্রতিবাদ করে না। আর এটারই সুযোগ নেয় শ্লীলতাহানিকারীরা।

২০২১ সালে ভারতের ১৪০টি শহরে চালানো অনলাইন সমীক্ষা অনুসারে, ৫৬ শতাংশ নারী গণপরিবহনে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন। মাত্র ২ শতাংশ পুলিশের কাছে গিয়েছিলেন। একটি বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ বলেছে, তারা নিজেরাই পদক্ষেপ নিয়েছেন বা পরিস্থিতি উপেক্ষা করতে পেরেছেন। ৫২ শতাংশের বেশি বলেছেন, নিরাপত্তা শঙ্কায় শিক্ষা এবং চাকরির সুযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন তারা।

 


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: