বাচ্চাদের ব্রেইনের ৯৫ শতাংশ গঠন হয় প্রথম ৫ বছরে

অধ্যাপক ডা. নিয়ামত হোসেন রিপন | ১৭ মে ২০২৩, ২২:১৭

ছবিঃ সংগৃহীত

আমাদের বাচ্চাদের ব্রেইনের ৯৫% গঠন হয় প্রথম ৫ বছরে। বাকি ৫% গঠন হয় পরের ৩ বছরে। তাই প্রথম ৮ বছর আপনার সন্তানের জন্য - সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এর ভিতর ৫ বছর বেশী গুরুত্বপূর্ণ! ফলে এই সময়ে সবচেয়ে সচেতন থাকা উচিৎ! এই গঠন বলতে বুঝায় - ব্রেইনের কানেকশন তৈরী হওয়া। যার যত কানেকশন তৈরী হবে, সে তত ব্রিলিয়ান্ট হবে!

আর এই কানেকশন তৈরীতে রঙিন খেলনা, পুষ্টিকর খাবার, বাচ্চার সাথে খেলা করা, গল্প বলা - এমনই অনেক কিছু নির্ভরশীল। অবাক করার বিষয় হলো আমাদের দেশে - বাচ্চা কথা বলা শেখার আগেই - সবাই লাঠি নিয়ে বসে - ঠিকমত পড়ালেখা শিখছে তো?

খাবার:

একসময় এদেশে মায়েদের বাচ্চার খাবারই ছিল - বার্লি আর সাগু। তখন বার্লি ফেস বলে, একটা অপুষ্টির লক্ষ্মণ দেখা যেত। বাচ্চা হতো মোটাতাজা, মা মনে করতো - বেশ ভাল স্বাস্থ্য হয়েছে। আর আজ সেই জায়গাটা নিয়েছে, সুজি! সুজি হয় চালের গুড়া, নাহলে গমের। আবার এর সাথে কোন না কোন দুধ মিশ্রিত করে, সাথে থাকে চিনি। অথচ এর সবগুলোই অপুষ্টির জন্য যথেষ্ট।

কারণ গরীব হলে, গরুর দুধ মিশ্রিত করে - আর টাকা থাকলে ইনফ্যান্ট ফর্মূলা, অথচ দুটোই বাচ্চার জন্য ক্ষতিকারক!
ইনফ্যান্ট ফর্মূলাতে কোন কিছু মিশানো নিষেধ। এমনকি কোন চিকিৎসক লিখে দিলে - শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আমরা জানি সবসময়ই সুষম খাবার প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে খিচুড়ি হলো, বাচ্চার সুষম খাবার। অথচ মা'দের বুঝানো কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাথে যোগ হয়েছে - দাদা/দাদি, নানা/নানি।

মুরুব্বিদের ধারণা - তারাও তো বাচ্চা মানুষ করেছে, কখনো তো সমস্যা হয় নাই!

এর উত্তরে অনেক সময় বলি, দেশ যে ব্রিলিয়ান্ট জনসংখ্যার সংকটে ভুগছে, তা আপনাদের দান!

জাপানে প্রাইমারি স্কুলে কোন পরীক্ষা নেয় না! ওরা আরলি চায়িল্ডহুড ডেভেলপমেন্টের উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আর তাই সেরা ব্রিলিয়ান্ট ঐদেশে তৈরী হয়। আমাদের মত লাঠি হাতে নিয়ে শিক্ষা দেয় না।

কেন খিচুড়ি সেরা?

আমরা সবাই বা অনেকেই জানি এসেনশিয়াল এমিনো এসিড বলে, একটা শব্দ আছে। যা শরীর তৈরী করতে পারে না। ফলে বাহিরের খাবার খেয়ে সেই অভাব পূরণ করতে হয়।

একমাত্র খিচুড়িতেই সবগুলো পাওয়া সম্ভব (চালে আটটি আর বাকিগুলো ডালে থাকে)। ফলে চাল-ডাল একসাথে থাকলেই শুধু সবগুলো এসেনশিয়াল এমিনো এসিড পাওয়া সম্ভব!

এছাড়াও ডিমে এইসবগুলো এসেনশিয়াল এমিনো এসিড থাকে।

বাচ্চার খাবার হওয়া উচিৎ:

১) মায়ের বুকের দুধ ২ বছর পর্যন্ত, এর বাহিরে আর কোন দুধ নয়।
২) খিচুড়ি (চাল+ডাল+সয়াবিন/অলিভ ওয়েল+সবজি)
৩) ডিম
৪) মা যখন যা খাবেন - সেখান থেকে মাছ/মাংস/সবজি বাচ্চাকে দিবেন। (ফ্রেশ হতে হবে)
৫) সারাদিনে একবার ফল খাবে। #আঙ্গুর বাদে। বাচ্চা সকাল/দুপুর/রাত, প্রচুর ফল খায় - এটাও ভাল লক্ষ্মণ নয়। কারণ পেট ভরা থাকায়, অন্য প্রয়োজনীয় খাবার খাবে না।
সবশেষে মা'দের বলি - আপনার সন্তান যদি পড়ালেখা নাও করে - আরলি চায়িল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট ঠিক থাকলে, রিক্সা চালক হলে - সেরা রিক্সা চালক হবে। বা চোর হলেও সেরা চোর হবে!
তাই সবাই আরলি চায়িল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট এর উপর সময় দিন। সঠিক খাবার নিশ্চিত করুন! সুজি/গরু/ছাগলের (২ বছর বয়স পর্যন্ত) দূধ খাওয়ানো বন্ধ করুন।

লেখক:
সহকারী অধ্যাপক (নিওনেটোলজী), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুর।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: