বয়কট করতে চাওয়া টিস্যু থেকেই বসুন্ধরার আয়ের রেকর্ড

সময় ট্রিবিউন | ৭ মে ২০২১, ০৭:০৬

ছবিঃ সংগৃহীত

সম্প্রতি গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের পর থেকেই বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর নতুন করে সমালোচনায় এসেছেন। কলেজছাত্রী মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান সায়েম সোবহান আনভীরকে একমাত্র আসামী করে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দানের জন্য মামলা দায়ের করেন। পুলিশও মামলাটিকে খুবই গুরুত্ব সহকারে দেখছে।

এমন অবস্থায় মুনিয়া ও আনভীরের বেশ কয়েকটি ঘনিষ্ট ছবি ও ফোনকল রেকর্ড প্রকাশ পাওয়ায় সারা দেশে সায়েম সোবহান আনভীরকে নিয়ে সমালোচনা আরও ঘনীভূত হয়। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সহ বিভিন্ন সংগঠন মুনিয়া হত্যার বিচার চেয়ে শাহবাগে মানববন্ধন ও সভা সমাবেশ করে। মুনিয়ার আত্মহত্যায় প্ররোচনা প্রতিবাদস্বরূপ দেশের যুব্সমাজ বসুন্ধরার বিভিন্ন পণ্য বিশেষ করে বসুন্ধরা টিস্যু বর্জনের আহ্বান জানায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তবে বর্জনের আহ্বান জানানো সেই বসুন্ধরা টিস্যু থেকেই ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে বসুন্ধরা পেপার মিলের রেকর্ড পরিমাণ আয় হয়েছে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে আগের প্রান্তিকগুলোয় কমলেও চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বসুন্ধরা পেপার মিলস’র আয় বেড়েছে ৭ শতাংশ। এ সময়ে কোম্পানিটির নিট মুনাফা বেড়েছে তিন গুণের বেশি। অতিমারি করোনাভাইরাসে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যাহত হওয়া সত্ত্বেও বসুন্ধরা পেপার মিলস’র টিস্যু ও স্বাস্থ্যসুরক্ষা পণ্যের চাহিদা বেড়ে রাজস্ব ও মুনাফা উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে, রাজস্ব আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ শতাংশ বেড়েছে এবং নিট মুনাফা বেড়েছে ২২২শতাংশ। টিস্যু এবং স্বাস্থ্যসুরক্ষা পণ্যগুলো বসুন্ধরা পেপার মিলস’র মোট আয়ের দুই-তৃতীয়াংশ অবদান রেখেছে, যা ২০১৮ সালে স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে তালিকাভুক্ত হয়েছিল। টিস্যু ও স্বাস্থ্যসুরক্ষা পণ্য, কাগজ এবং কাগজ সম্পর্কিত পণ্যের বাজার ৭৫ শতাংশই বসুন্ধরা পেপার মিলস’র দখলে।

গত বছরের মার্চ মাসে দেশে করোনভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পরে বসুন্ধরার টিস্যু এবং স্বাস্থ্যসুরক্ষা পণ্যগুলোর চাহিদা বেড়ে যায়। বসুন্ধরার সমকক্ষ কোম্পানী সোনালী পেপার এবং বোর্ড মিলস আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে ১৫ শতাংশ এবং ২২.৩৯ শতাংশ কম লাভ করেছে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কাগজ ও কাগজ সম্পর্কিত পণ্যের ব্যবসা প্রচুর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।

বসুন্ধারা পেপার মিলের সূত্রমতে, সাধারণ সময়ে প্রায় অর্ধেক রাজস্ব পেপার পণ্য এবং বাকী অর্ধেক টিস্যু ও স্বাস্থ্যসুরক্ষা পণ্য থেকে আসে। কিন্তু মহামারী সময়ে এই প্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আয় শুধুমাত্র টিস্যু এবং স্বাস্থ্যসুরক্ষা পণ্য থেকে এসেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারী-মার্চ প্রান্তিকে বসুন্ধরা পেপা্র মিলস'র রাজস্ব নিবন্ধিত হয়েছে ২৭৫.৪৯ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ২৫৬.৬৬ কোটি টাকা ছিল। আগের বছরের একই সময়কালে নিট মুনাফা ২২২% বৃদ্ধি পেয়ে ৭.২৯ কোটি টাকা হয়েছে যা বিগত বছরে ছিল ২.২৬ কোটি টাকা। এছাড়াও শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ০.৪২ টাকা।

এ বিষয়ে বসুন্ধরা পেপার মিলস-এর জেনারেল ম্যানেজার ও কোম্পানির সেক্রেটারি এম বি মাজেদুল ইসলাম বলেন, “মহামারীটির সময়ে এই পণ্যগুলির বিক্রয় বেড়েছে, মূলত টিস্যু ও স্বাস্থ্যকর সেক্টরগুলোর কারণে এই কোম্পানির আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।”

তিনি বলেন, “ট্যাক্স ইস্যুতে লাভ ভালোভাবে উঠেছে। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানকে আয়কর দিতে হবে না।”

চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে এর মোট আয় ১.৯৩% হ্রাস পেয়ে ৭১৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ৭২৭ কোটি টাকা ছিল। এবং ২০২০-২০২১ অর্থবছরে, জানুয়ারি-জুন সময়কালে মহামারীজনিত কারণে বসুন্ধরার নিট রাজস্ব আগের অর্থবছরের ১১০৩.৯১ কোটি টাকা থেকে ২২.৫৯% কমে দাঁড়ায় ৮৫৪.৪৪ কোটি টাকা হয়েছে।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: