ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় রাবিতে প্রতিবাদ

আসিফ আজাদ সিয়াম, রাবি প্রতিনিধি | ২২ জুলাই ২০২২, ০০:১৪

সংগৃহীত

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর, মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে 'সনাতনী ধর্মাবলম্বী শিক্ষক-শিক্ষার্থী'র ব্যানারে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

মানববন্ধনে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বলেন, ব্যক্তির বিষয়কে কেন্দ্র করে যখন সমষ্টির উপর দোষারোপ করে হামলা চালানো হয় তখন সেটি কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এর থেকে নেক্করজনক কাজ আর হতে পারে না। এদের বিরুদ্ধে আমাদের এক হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে। রাষ্ট্রীয় আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে অতি দ্রুত বিচারের আওতায় আনা উচিত। না হলে এ ধরণের ঘটনা ঘটতে থাকবে। আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে এবং যারা এ ধরণের ঘটনা ঘটায় তাদেরকেই বরং সমাজচ্যুত করা দরকার।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। বিশ্ববিদ্যালয় একটি অসাম্প্রদায়িক চর্চার জায়গা। শিক্ষার্থীরা যেনো এখানে এসে সেটি বুঝতে পারে এবং তা অনুসরণ করতে পারে। পারস্পারিক মিলে মিশে মহানবীর মদিনা রাষ্ট্র যেমন ছিল সেইভাবে যেনো তারা এখানে নিরাপত্তার সাথে থাকতে পারে। একজন মুসলমান হিসাবে আমি কোন ভাবেই মনে করি না সনতন ধার্মাবালম্বীদের উপর এ আঘাত করা ইসলাম অনুমোদন করে।

মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় ধর্মীয় সংখ্যা লঘুদের সুরক্ষার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়েছিল সেগুলো অতিসত্তর বাস্তবায়ন করা দরকার। সবাই যেনো শান্তি পূর্ণ ভাবে মিলে মিশে থাকতে পারে আমরা সেই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চাই।

আনন্দ কুমার সাহা বলেন, বর্তমান সরকার যেভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে, রাষ্ট্রের উন্নয়ন করছেন কিন্তু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য যে সকল পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সেটি করছেন না। আমাদের প্রতি তাদের কোন নৈতিক দায়িত্ব নেই। পুলিশ প্রশাসন রাষ্ট্রীয় আদেশ ছাড়া স্বতঃস্ফুর্তভাবে কোন কাজ করে না। নড়াইলে যখন হিন্দুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে তারা চলে যায় ঠিক তার পরক্ষণই পুলিশ এসে চারিদিক ঘেরাও করে রাখে। আপনারা মন্দিরে কোরআন শরীফ রেখে আসলেন কিন্তু সে তো সেটা করেনি। তার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে স্ট্যাটাসটি দেওয়া হয়েছে বিষয়টি আপনারা জেনেও আপনারা এটা করলেন। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী বলেন, স্বাধীনতা পক্ষের শক্তি যখন ক্ষমতায় তখনও আমাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক হামলা হচ্ছে। আমরা আবেদন নিবেদন করছি কিন্তু কোন রকম দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে আমরা দেখছি না। ১০ বছর ধরে, ১৫ বছর ধরে যে বিচার হয় সে বিচার বিচার নয়, অবিচার। আমরা এই অবিচার চাই না। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাই তারা যেন অতিসত্বর দৃশ্যমান কোন বিচারের ব্যবস্থা করে।

এসময় শিক্ষার্থীদের হাতে ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধ কর’, ‘জাতীয়তাবাদ সমাজতন্ত্র গণতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা?’, ‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ?’ লিখা সম্বলিত প্লাকার্ড দেখা যায়।

মানববন্ধনে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অমিত কুমার দত্তের সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক কমল কৃষ্ণ বিশ্বস সহ প্রায় অর্ধ-শতাধিক শিক্ষার্থী।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: