রাবির শিক্ষক সুজিতের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারসহ এমপি শিমুলের শাস্তি দাবি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের

সময় ট্রিবিউন | ১৩ আগষ্ট ২০২১, ২২:৩৮

ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান, রাজশাহী মহানগর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. সুজিত কুমার সরকারের বিরুদ্ধে নাটোরের সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুল কর্তৃক দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং এমপি শিমুলের শাস্তির দাবিতে আজ ১৩ আগস্ট শুক্রবার বিকাল ৪ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচী পালন করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

বক্তব্যে অধ্যাপক ড. সুজিত কুমার সরকার বলেন, "নাটোরের ইতিহাস ইতিহাস ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধ বইটি লেখার পর ২o১২ সালে একবার নলডাঙ্গা উপজেলার বতর্মান চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বিষয়টি উল্লেখ করলে শফিকুল ইসলাম শিমুল মামলা করেন। আদালত সে অভিযোগ আমলে না নিয়ে খারিজ করে দেন। তার অর্থ তিনি সত্যিকারেই রাজাকার ছিলেন বলে আদালত তার মানহানির অভিযোগ গ্রহণ করেননি। ২o২১সালে ওই একই গ্রন্থে লিপিবদ্ধ তথ্য আবার কী করে তাদের সম্মানহানি করলো এবং আইসিটি আইন অমান্য করলো তা আমাদের বোধগম্য নয়।

অবশ্য আমি আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মহামান্য সক্রেটিসও আইনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল ছিলেন বলে হেমলক পান করে আত্মহনন করেছিলেন। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে আনন্দময়ীর আগমনে কবিতাটি কবি সম্পাদিত ধমকেতু পত্রিকায় প্রকাশিত হলে ইংরেজ সরকার কারাদণ্ড দিয়ে তার অনেক কাঁব্য গ্রন্থ ও পত্রিকা বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে। বিশ্বে এরকম অনেক লেখকের গ্রন্থ সরকার বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে লেখককে শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দিয়েছে। পরবর্তীতে তাঁদের রচনা বিশ্ব নন্দিত ও আদরণীয় হয়েছে। ১৯৯৬ সালের জুন মাসে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বাংলা একাডেমীর অর্থ দিয়ে জেলা ভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহ করার জন্য লেখকদের দায়িত্ব দেয়া হয়। একটি সাধারণ সভার মাধ্যমে বাংলা একাডেমির সে সময়ের মহাপরিচালক প্রফেসর সৈয়দ আনোয়ার হোসেন দেশের বিভিন্ন জেলার দায়িত্ব বন্টন করেন। আমাকে নাটোরের জেলা তথ্য সংগ্রহ ও লেখার দায়িত্ব দেয়া হয়। আমি তার আগেই প্রফেসর মুনতাসীর মামুনের আর্কাইভের জন্য তথ্য সংগ্রহ করার কাজ শুরু করি। বাংলা একাডেমী থেকে দায়িত্ব পাওয়ায় আমি দুটি কাজেই একসঙ্গে করতে থাকি। এভাবে তিন বছর নাটোর জেলার নয়টি থানার তথ্য সংগ্রহ করে পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করে বাংলা একাডেমিতে যথাযথ ভাবে জমা দেই। ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জামাত জোট ক্ষমতায় আসার পর বাংলা একাডেমির এই প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে আমাদের পান্ডুলিপি নষ্ট করে দেয়।যেহেতু পান্ডুলিপি আমাদের ফেরত দেয়া হয়নি অর্থও দেয়া হয়নি। তখন আমি নানা প্রকাশ প্রকাশকের দুয়ারে গিয়েছি বইটির মুদ্রণের জন্য। কেউ প্রকাশ করতে সম্মত হননি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দল ক্ষমতায় এলে বইটি প্রকাশের ব্যবস্থা করি। বইটি প্রথম সংগ্রহ করেন ধ্রুব প্রকাশনী এবং ২০২১ সালে বাংলাবাজারের আফসার ব্রাদার্স বইমেলায় বইটি প্রকাশ করেন। এই দীর্ঘ সময়ে মাননীয় সংসদ সদস্য বা তার পরিবার বইটিতে হাসান আলী ওরফে হাসান আলী সরদারের নাম অন্তর্ভুক্ত নিয়ে কোন কথা বলেননি। গ্রন্থ লেখককে অবহিত করেননি। দীর্ঘ ১২'বছর পর কেন মিথ্যাচার বলে উল্লেখ করে অভিযোগ করলেন? তিনি সত্যাসত্য তো জেনেছেন ২০১২ সালের মামলার রায়ে। এছাড়াও ২০২১ সাল পর্যন্ত তিনি কোন প্রতিবাদ করেননি। হঠাৎ এই বছরে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে আমাকে হুমকি দেন এবং আমার বিরুদ্ধে মামলা করারও হুমকি দেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ কলা ভবনের বাইরে চারজন অপরিচিত ব্যক্তি আমাকে সরাসরি হুমকি দিয়ে দ্রুত মোটরসাইকেল যোগে স্থান ত্যাগ করেন। তারা বলেন ওই লেখার জন্য আপনার শাস্তি হবে। হাত কেটে দেবো সাবধানে থাকিস মালাউনের বাচ্চা। তারপরে সংগঠনের বিভিন্ন নেতাকর্মীকে ঘটনা মৌখিক ও ফোনে অবহিত করি। রাজশাহীর মাননীয় মেয়র মহোদয় ও সংসদ সদস্য অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে অবহিত করি। শেষে ২৯ জুলাই ২০২১ তারিখে নিরাপত্তা চেয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি জিডি করি। জিডি পেয়ে বোয়ালিয়া থানা তদন্ত করে এবং তারা অভিযোগের সত্যতা নাকি পাননি। এই খবর পেয়ে সংসদ সদস্য শিমুল আমার বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ যথাক্রমে বোয়ালিয়া মডেল থানা ও নাটোর থানায় দায়ের করেন। একটি আইসিটি আইনে এবং অপরটি তার মানহানি করেছি মর্মে। আমি একজন সামান্য শিক্ষক। খুব যে বিদ্যা বুদ্ধি আছে এমন দাবি করবো না ।

তবুও শিক্ষকতা করি। আমার অধীনে কমপক্ষে ১৫ জন এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন। এমএ গবেষণা পত্রেও আমি তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করেছি অন্তত ২০ জন ছাত্র-ছাত্রীর। স্বভাবতই আমার ফিল্ডের নানা বিষয়ে লেখালেখি ও গবেষণা করতে পারবোনা? মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য এবং উল্লেক্ষিত ঘটনাবলির অনুসন্ধান করে আমি মাঠ পর্যায়ে এবং সমকালীন পত্র-পত্রিকা বই পড়ে কি গ্রন্থ রচনা করতে পারিনা? সেজন্য কি শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি বা সংসদ সদস্যের অনুমতি প্রয়োজন আছে? যদি থাকে তাহলে আমাদেরকে সেটা জানানো হোক। আর না থাকলে আমার জিজ্ঞাসা দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুধু নয় যে কেউ সাহিত্যের ইতিহাস বিজ্ঞান নিয়ে কি কেউ কোন গবেষণা করতে পারবেন না? ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিশেষের অনুমতি নিতে হবে? স্বাধীন ও মুক্তচিন্তার কি কোন অধিকার নেই? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি সে মর্মে কোন দায়িত্ব সংসদ সদস্যদের দিয়েছেন? যদি না দিয়ে থাকেন তাহলে আমি মনে করি দলে এবং সংসদে কিছু হাইব্রিড আজকে আওয়ামী লীগ দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা কেউ কেউ রাজাকার পরিবারের হলেও সেটা আড়াল করতে চান। তারা স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তান। নাটোরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গ্রন্থটি লেখার পর থেকে আমার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আমি একজন গবেষক। গবেষণা করে প্রকৃত সত্য তুলে ধরাই আমার কাজ। কোন হামলা-মামলা আমার কলম থামাতে পারবে না। মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আমি অংশগ্রহণ করেছি। প্রগতিশীল শিক্ষক হওয়ার কারণে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি দ্বারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য অতীতের ন্যায় আমার লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। হুমকি দিয়ে কেউ আমার কলম থামাতে পারবে না। আমি প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকি পাচ্ছি। কিন্তু অন্যায়ের নিকট আমি মাথা নত করবো না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবি, আমি ন্যায় বিচার চাই। আপনি বঙ্গবন্ধু কন্যা এবং সফল রাষ্ট্রনায়ক। আপনার সফল নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে কোন স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের বংশধররা থাকতে পারে না। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে হলে এদেরকে অবশ্যই আওয়ামী লীগ থেকে বের করে দিতে হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে এমপি শিমুলের লোকজন আমাকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। মালাউনের বাচ্চা বলে গালি দিয়েছে। কিন্তু আমি কোন বিচার পাইনি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করাটা কি আমার অপরাধ? আমি আশা করি বঙ্গবন্ধু কন্যা অবশ্যই ন্যায় বিচার করবেন।”

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুনের সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আরোও বক্তব্য রাখেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সুজিত কুমার সরকার, দেশবরেণ্য ভাস্কর শিল্পী রাশা, সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ মাসুদসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: