সাংবাদিকের পাওনা টাকা না দেওয়ায় প্রতারণার অভিযোগ আনভীরের বিরুদ্ধে

সময় ট্রিবিউন | ৪ মে ২০২১, ০৭:৩২

ছবিঃ সংগৃহীত

বসুন্ধারা গ্রুপের অনলাইন গণমাধ্যম বাংলানিউজের এক সাংবাদিকের বকেয়া ২৩ লাখ টাকা পরিশোধ না করে প্রতারণা করার অভিযোগ উঠেছে বসুন্ধারা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে। বকেয়া টাকা না পেয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক ইউনিয়নকে এ বিষয়ে জানিয়ে প্রেসক্লাবে মানববন্ধনের ডাক দিলে টাকা দিতে প্রথমে রাজি হয় আনভীর। তারপর মানববন্ধন স্থগিত করে অফিসে পাওনা টাকা নিতে গেলে আবারও প্রতারিত হন সেই সাংবাদিক।

পাওনা টাকা বুঝে না পেয়ে সেই সাংবাদিকের অনেক সহকর্মী বসুন্ধারার বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন। গত ছয় বছরেও ভুক্তভোগী এই সাংবাদিক তার পাওনা ২৩ লাখ টাকা বুঝে পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। ভুক্তোভোগী এই সাংবাদিকের নাম আহমেদ রাজু। তিনি বাংলানিউজের সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি ও বর্তমানে জাতীয় দৈনিক আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার উপ-সম্পাদক।

সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধারের পর বসুন্ধারা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে আত্মপ্ররোচনা মামলা করেন মুনিয়ার বোন তানিয়া। এরপর থেকেই আনভীরের বিরুদ্ধে একে একে কথা বলতে শুরু করেছেন তার প্রতিষ্ঠানের সাবেক সাংবাদিক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ ভুক্তভোগীরা। সোমবার রাতে আহমেদ রাজু তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্ট থেকে স্ট্যাটাসে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন।
পাঠকের পড়ার সুবিধার্থে তা হুবহু তুলে ধরা হলো-
“প্রতারণা করেছিলেন বসুন্ধরা এমডি”
“প্রাপ্য পাওনা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করি। কিন্তু টানা তিনমাস চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হই। আমার এই প্রচেষ্টার সঙ্গে বাংলানিউজের সাবেক বিশ পঁচিশজন সহকর্মীও ছিলেন।”
“এমডির সঙ্গে দেখা করার সবচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর আমরা সাংবাদিক ইউনিয়নকে জানাই এবং জাতীয় প্রেসক্লাবে মানববন্ধন করার সিদ্ধান্ত নিই।”
“পরে মানববন্ধনের জন্য প্রেসক্লাবে সমবেত হলে বসুন্ধরার উপদেষ্টা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব আমাকে ফোন করে বলেন এমডি আপনাদের পাওনা পরিশোধের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আপনারা মানববন্ধন করবেন না। এখনই আসুন। আলোচনা করি।”
“আমরা আলোচনায় গেলে উপদেষ্টা আবু তৈয়ব জানান, আপনারা আপনাদের মতো হিসাব দিন। আমরাও হিসাব করি। পুরোটা দিতে পারবো না। কিছুটা কাটছাঁট করে পরিশোধ করা হবে। আমারা তাতেও রাজি হই।”
“কিন্তু সপ্তাহখানেক পর (ওইদিন রোববার) তিনি আমাকে ফোন করে জানান, ‘আপনাদের চেক রেডি। বুধবার এসে নিয়ে যাবেন”।’
“তার কথামতো বুধবার চেক আনতে যাবো বলে রেডি হয়েছি। এমন সময় তিনি আমাকে ফোন করে জানান, ‘কর্তৃপক্ষ আপনাদের পাওনা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন”।’
“আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারি— বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম আমাদের প্রাপ্য পরিশোধ করতে এমডিকে নিষেধ করেছেন। কারণ, তখন নঈম নিজাম বাংলানিউজ লুকআফটার করতেন।”
“আমরা এমডির আশ্বাস পেয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি বাতিল করলেও তিনি তার দেয়া প্রুতিশ্রুতি রাখেন নি, তিনি আমাদের সঙ্গে প্রতারনা করেন।”
“শেষে আমরা প্রেসক্লাবে মানববন্ধন করি। তাতে সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল, আবু জাফর সূর্য, সোহেল হায়দার চৌধুরী, অমীয় ঘটক পুলক ও খায়রুজ্জামান কামাল বক্তব্য রাখেন।”
“ইউনিয়ন থেকে পাওনা পরিশোধে চাপ দিলেও বসুন্ধরা আমাদের টাকা দেয় নি। প্রাপ্য বুঝে না পেয়ে আমার সহকর্মীদের অনেকে মামলা করেছেন।”
“বসুন্ধরার মিডিয়া গ্রুপের বাংলানিউজে আমি পাঁচবছর কর্মরত ছিলাম। চাকরিতে ইস্তফা দেয়ার পর আমার প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়ার জন্য যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করি। অনুলিপি বসুন্ধরার চেয়ারম্যান ও এমডিকেও দিই। কিন্তু গত ছয় বছরেও আমার প্রাপ্য পাওনা ২৩ লাখ টাকা বুঝে পাই নি।”

সাংবাদিক আহমেদ রাজুর এমন স্ট্যাটাসের পর অনেক সাংবাদিক ও রাজুর পরিচিত ফেসবুক বন্ধুরা বিভিন্ন মন্তব্য করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মান্নাফ মারুফ নামের এক সাংবাদিক সেই পোস্টে লিখেছেন, “আহমেদ রাজু যা বলছেন সব সত্যি। ঐ সম্পাদকের ব্যবহারে মনে হয়েছে আমরা কোন তুচ্ছ প্রানী। আমরা তার কাছে ভিক্ষা চাইতে গিয়ে ছিলাম। তিনি দিতে নারাজ। আমার ৩৭ লাখ টাকাসহ প্রায় ২০ জনের মত আছে যারা টাকা পাবে।”

তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করে আরেকটি মন্তব্যে লিখেন, “আমার আবেদন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তার হস্তক্ষেপ চাই তা হলেই টাকাটা (৩৭লাখ) পাওয়া সম্ভব।”


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: