সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে যা করবেন

সময় ট্রিবিউন | ১৮ জুন ২০২২, ২৩:১০

সাইবার বুলিংয়ের শিকার-প্রতীকী ছবি

ছদ্মনাম বনলতা। দেশের একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। হঠাৎ একদিন ফেসবুকে অপরিচিত আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে। বনলতা তা গ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে কথাবার্তা হতে থাকে। একপর্যায়ে ওই ফেসবুক বন্ধু বনলতাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। বনলতা রাজি হয়ে যান। তাঁদের মধ্যে ভিডিও কলেও কথা চলতে থাকে। ছবিও আদান–প্রদান করা হয়।

একদিন ছেলেটি বনলতাকে ব্যক্তিগত ছবি দিতে বলেন। তিনি ছবি দিতে রাজি হন না। পরে বনলতাকে দেখা করতে বলেন ছেলেটি। বনলতার মনে সন্দেহ জাগে। তাই তিনি দেখা করতে যাননি। তখনই ছেলেটি বনলতাকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তোমার ছবি এডিট (সম্পাদনা) করে “নোংরা ছবি” বানিয়ে ফেসবুকে ছেড়ে দেব। বনলতা তাঁকে অনেক বোঝান। কিন্তু ছেলেটি তাঁর কাছে টাকা চান।’ উপায় না পেয়ে বনলতা টাকা দেন ছেলেটিকে। বনলতা বলেন, ‘তিনবার টাকা দেওয়ার পর আমার কাছে অনেক বেশি টাকা দাবি করলেন। যেটা আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব ছিল না। তখন তিনি আমার ছবি এডিট করে ফেসবুকে ছেড়ে দেন। কী করব বুঝতে পারছিলাম না।’

এরপর বনলতা ৯৯৯ কল সেন্টারে যোগাযোগ করলেন। প্রয়োজনীয় প্রমাণ, তথ্য পাঠালেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অনলাইন থেকে সব মুছে ফেলা হলো। ছেলেটিকেও আইনের আওতায় আনা হয়।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. হায়দার তানভীরুজ্জামানের কাছে তারকাসহ অনেকে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে আসেন। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে নিকটস্থ থানায় অভিযোগ বা জিডি করার পরামর্শ দিই। কোনো অশ্লীল, মানহানিকর বা হুমকিমূলক ই–মেইল আপনাকে পাঠানো হয় কিংবা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হলে থানায় অভিযোগের সঙ্গে সেগুলোর প্রিন্ট জমা দিতে হবে। আপত্তিজনক সাইটের ঠিকানা সংরক্ষণ করুন এবং তদন্ত কর্তৃপক্ষকে সরবরাহ করুন। তবে ফেসবুক বা অন্য সাইটের লগ ফাইলের ডেটা অক্ষত থাকা দরকার।

থানায় কোনো কারণে মামলা করা না গেলে, কোনো আইনজীবীর মাধ্যমে জেলা সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে সাইবার মামলা দাখিল করতে পারবেন।

সাইবার অপরাধের শিকার হয়ে একজন ভুক্তভোগী সিআইডির সাইবার পুলিশে যেতে পারেন বা ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটেও যেতে পারেন। জরুরি পুলিশ সেবার জন্য ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস ৯৯৯–এ ফোন করতে পারবেন।

করণীয়:

  • সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে প্রথমে নিজেকে বোঝাতে হবে, এর জন্য আপনি দায়ী নন।
  • সাইবার বা ডিজিটাল অপরাধের শিকার হলে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না, ভয় পাওয়া যাবে না। মাথা ঠান্ডা রেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে।
  • সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে কখনোই আপনি সাড়া দেবেন না। নিজে পাল্টা আক্রমণ করবেন না।
  • আপনি আক্রমণের শিকার—এর পক্ষে যথাযথ প্রমাণ সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করবেন।
  • প্রাথমিকভাবে যে বা যার দ্বারা বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন, তাকে বুঝিয়ে বলতে পারেন। আপনি না পারলে আপনার বন্ধু বা আত্মীয়কেও এই আলোচনাটুকু করতে অনুরোধ করতে পারেন।
  • বুলিংয়ের শিকার যেহেতু নারীরা বেশি হন এবং সাধারণত তাঁরা তাঁদের সমস্যাগুলো এখনো পরিবারের সঙ্গে শেয়ার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না, তাই বুলিংয়ের শিকার হলে অবশ্যই একজন আপনজনকে জানাতে হবে।
  • সামাজিক যোগাযোমাধ্যমের সব অ্যাকাউন্টেই ব্লক করার সুবিধা থাকে। প্রাথমিক বুলিং হলে বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও অসংলগ্ন কথা বললে তাকে ব্লক করে দিতে পারেন।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: