রূপগঞ্জে কারখানায় অগ্নিকাণ্ড: কারখানা মালিকের ৪৯টি মামলা

সময় ট্রিবিউন | ১৩ অক্টোবর ২০২১, ০১:২১

হাসেম ফুড বেভারেজের সেজান জুস কোম্পানির কর্ণধার  মোহাম্মদ আবুল হাসেম-ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ৫১জন নিহতের ঘটনায় কারখানার মালিক আবুল হাসেমের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৪৯টি মামলা দায়ের হয়েছে।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জের উপমহাপরিদর্শক সৌমেন বড়ুয়া এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো শ্রমিক যদি দুর্ঘটনায় মারা যান তাহলে তার পরিবারকে শ্রম আদালতের মাধ্যমে পাওনাগুলো পরিশোধ করতে হবে। আমরা তাদের গত আগস্টে নোটিশ দিয়ে ছিলাম ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য। তবে এখনও পর্যন্ত শ্রম আদালতের মাধ্যমে কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি কিংবা আমাদের অবহিত করেনি। সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে প্রতিটি শ্রমিকের জন্য ৪৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ২ থেকে ৩ দিন আগে সর্বশেষ মামলাটি করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ৪৯জন শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ চেয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক নেছার উদ্দিন বাদী হয়ে ঢাকায় শ্রম আদালতে (তৃতীয়) মামলাগুলো করেন।

মামলার বাদী পরিদর্শক নেছার উদ্দিন বলেন, এখনও পর্যন্ত ৪৯জন শ্রমিকের জন্য পৃথক পৃথক মামলা করা হয়েছে। তবে পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর অন্যান্য শ্রমিকের নামেও মামলা করা হবে। ৩ দিনে পর্যায়ক্রমে ৪৯টি মামলা করা হয়েছে। মামলায় আসামি হলেন কারখানা মালিক আবুল হাসেম।

ক্ষতিপূরণের বিষয়ে তিনি বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী যদি শ্রমিকের মৃত্যু হয় তাহলে শ্রম আদালতের মাধ্যমে শ্রমিকদের ২ লাখ টাকা করে দিতে হয়। এছাড়া আহত শ্রমিকদেরও ক্ষতি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যেমন, শ্রমিক চিকিৎসা নিয়েছে সেক্ষেত্রে মালিক চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করবেন। আর যদি তাৎক্ষনিকভাবে মালিক সেটি না করেন সেক্ষেত্রে যে শ্রমিক আহত হয়েছেন পরবর্তীতে তিনি অভিযোগ করবেন খরচের টাকার পরিমাণ ও রিসিট সহ। তারপরও যদি মালিক চিকিৎসা খরচ না দেয় সেক্ষেত্রে সে মামলা করতে পারবে।

গত ৮ জুলাই বিকেলে উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানার ১৪ নম্বর গুদামের ৬ তলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তাৎক্ষনিক ভবন থেকে লাফিয়ে পরে ৩ জন নিহত এবং ১০ জন আহত হয়েছেন। প্রায় ১৯ ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরদিন শুক্রবার বিকেলে আগুন নিভিয়ে ফেলার পর ৪৮ জনের পোড়া মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানাধীন ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে কারখানার মালিক আবুল হাসেমসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে নিরাপত্তা না থাকাসহ বিভিন্ন অবহেলার অভিযোগ এনে রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখিত আসামি কারখানার মালিক মো. আবুল হাসেম সহ তার চার ছেলে ও ডিজিএম, এজিএম ও ইঞ্জিনিয়ার সহ ৮জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তাদের ৪ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালত থেকে কারখানার মালিক আবুল হাসেম, তার ৪ ছেলেসহ ৮ জামিনে বের হয়ে আসেন।

পরবর্তীতে এ মামলাটি তদন্তভার সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: