দরজি মনিরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা

সময় ট্রিবিউন | ৪ আগষ্ট ২০২১, ০৮:৩৩

দরজি মনির-ফাইল ছবি

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন নামে সংগঠন দাঁড় করিয়ে প্রভাব বিস্তার ও চাঁদাবাজির অভিযোগে মো. মনির খান ওরফে দর্জি মনিরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থানায় মঙ্গলবার ইসমাইল হোসেন নামের এক ব্যক্তি এই মামলা করেন।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ মঙ্গলবার রাতে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ নামের একটি ভুঁইফোড় সংগঠন খুলে সংগঠনের সভাপতি দাবি করে বিভিন্ন অপকর্ম করার অভিযোগে গত সোমবার দরজি মনিরকে আটক করে ডিবি পুলিশ।

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, দরজি মনিরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাও হয়েছে। তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে।

মামলায় মনির খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, তিনি একেক সময় একেক রাজনৈতিক পদবি ব্যবহার করেন। নিজেকে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দাবি করেন। দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ছবির সঙ্গে নিজের ছবি এডিট করে বসিয়েছেন আসামি মনির খান।

মামলার বাদী ইসমাইল হোসেন প্রথম আলোকে জানান, মনির খানকে তিনি ১৫ বছর ধরে চেনেন। একসময় মনির কামরাঙ্গীরচর এলাকার একটি দরজির দোকানে কাটিং মাস্টার হিসেবে কাজ করতেন। পরে তিনি এলিফ্যান্ট রোডের একটি দোকানে চাকরি নেন। পরে মনির নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, মনিরের সহযোগীরা ঢাকা মহানগর ও বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় কমিটি দেওয়ার নাম করে অনেকের কাছ থেকে টাকাও নিচ্ছেন। গত ৩০ জুলাই মনির খান মামলার বাদী ইসমাইল হোসেনের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদাও দাবি করেন।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ বলেন, “দর্জি মনির এখন ডিবির হেফাজতে আছেন। তিনি তো একটা টাউট লোক। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকদের অনুমতি ছাড়া তিনি একটি দোকান (সংগঠন) খুলেছেন। সংগঠনটির নাম হচ্ছে ‘বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ’। এই সংগঠনের নাম দিয়ে তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন লোককে কমিটিতে নেওয়া ও বাদ দেওয়ার কাজ করেছেন। শুধু এটা না, তিনি আরও ১০-১৫টি সংগঠন খুলেছেন। তিনি ওটিজমের চেয়ারম্যান, রূপসী বাংলার চেয়ারম্যান, ওমুকের চেয়ারম্যান, তমুকের চেয়ারম্যান, হাজারও চেয়ারম্যান; কিন্তু কোনোটার কোনো কাগজপত্র নেই। তাঁর কাছে কিছু প্যাড পেয়েছি। মানে, নানান ধরনের অনিয়ম।’

দর্জি মনিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবির এমন একটি সূত্র জানিয়েছেন, দর্জি মনির বিয়ে করেছেন তিনটি। এর মধ্যে একটি বৌ থাকে কামরাঙ্গীচরর। তাঁর কোনো খোঁজ-খবর নেই। চার ছেলে-মেয়ে। তিনি একজন বয়স্ক নার্সকেও বিয়ে করেছেন। বিয়ে করার পরে নার্সের কাছ থেকে টাকা নিয়ে একটি মুজিব কোট, একটি সুন্দর পায়জামা ও আরেকটা নৌকার চেইন বানিয়েছেন। এটা নিয়ে ঘোরেন। এই হলো দর্জি মনিরের পরিচয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতার সঙ্গেই মনির খানের ‘ওঠা-বসার ছবি’ আছে। অভিযোগ আছে, এসব ছবির অধিকাংশই ফটোশপে কারসাজি করে তৈরি করা। যদিও তিনি তাঁর ফেসবুকে দাবি করেছেন, ছবিগুলো সত্যি।

মনির খান জমির দালালি ও তদবির-বাণিজ্য করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে কেরানীগঞ্জ ও সাভারের অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেছিলেন। তবে তিনি মনোনয়ন পাননি।

আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করেছেন, ‘বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ’-এর মতো সংগঠনের সঙ্গে দলটির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যারা এ ধরনের ভুঁইফোঁড় সংগঠন চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে।

এর আগে ‘চাকরিজীবী লীগের’ নামে সংগঠন দাঁড় করানো এবং জেলা-উপজেলায় কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার পর পরই আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরকে। পরে গত শুক্রবার রাতে তাঁকেও গ্রেপ্তারও করা হয়। এখন তিনি রিমান্ডে রয়েছেন।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: