ইবির ৭৩ ছাত্রীকে সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ !

সময় ট্রিবিউন | ২১ আগষ্ট ২০২১, ২১:৫৮

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) একটি ফেইসবুক পেইজের বিরুদ্ধে সাইবার বুলিং এর অভিযোগ উঠেছে। পেইজটিতে গতকাল শুক্রবার (২০ আগস্ট) রাতে আনুমানিক ১১ টার দিকে আপত্তিকর ক্যাপশন জুড়ে ৭৩ জন নারী শিক্ষার্থীর ছবি প্রকাশ করেছে পেইজটি। এতে ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে। এতে ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় ক্ষমা প্রার্থনা করেছে পেইজ কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্তের পরিচয় পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ‘Crush & Confession, Islamic University, Bangladesh’ নামে একটি ফেইসবুক পেইজে আপত্তিকর ক্যাপশন জুড়ে ৭৩ জন নারী শিক্ষার্থীর ছবি প্রকাশ করা হয়। এতে ক্যাপশনে লেখা ছিল ‘ইবি কাঁপানো সকল সুন্দরী একসাথে, ইমো নাম্বার পেতে লাভ রিয়েক্ট দিয়ে সঙ্গেই থাকুন।’ এরপর শিক্ষার্থীরা কমেন্টে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলে আনুমানিক ১২ টার দিকে পেজটি থেকে পোস্টটি সরিয়ে ফেলা হয়। একই সাথে দুঃখ প্রকাশ করে পুণরায় পেজটিতে পোস্ট করা হয়।

পেইজ কর্তৃপক্ষের দাবি, ছবিগুলো বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীরা কনফেশন লেখার সময় পাঠিয়েছিল। নিছক মজার ছলে তারা পোস্ট করেছে। পরে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পেইজটি ‘আনপাবলিশ’ করে তারা। তবে পেইজ কর্তৃপক্ষের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। এছাড়া পেইজটিতে এর আগেও অসংখ্যবার বিভিন্ন মেয়েকে নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে গতকাল শুক্রবার (২০ আগস্ট) থেকেই ব্যাপক তোলপাড় উঠেছে। ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা ও শিক্ষার্থীরা অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে আজ শনিবার (২১ আগস্ট) সকাল ৯ টার দিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফেইসবুক গ্রুপ ‘IUian-ইবিয়ান’ এ হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ভুক্তভোগী এক ছাত্রী শাস্তি দাবিতে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এতে তিনি লেখেন, ‘ঘুম থেকে উঠেই আমার ছবি সহ ৭০-৮০ জন মেয়ের ছবি ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পেজে অশ্লীল ঈঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট দেখে হতবাক হয়ে গেছি। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে খোলা ফান পেজে কিভাবে এতগুলো মেয়ের ছবি ব্যবহার করে তাদের ইমো নম্বর দিতে চেয়ে পোস্ট করতে পারে এডমিনরা? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আগেকার হয়রানির ঘটনার বিচার করেনি জন্য এর পুনরাবৃত্তি ঘটছে, আরো ঘটবে।’

পোস্টের কমেন্টে বনি আমিন নামে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘যে/যারা এমন কুরুচিপূর্ন কর্মটি করেছে তাদের আইনানুসারে কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

ছাত্র ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক জি কে সাদিক এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ইবিতে এই পেইজ কে বা কারা চালায় তা কারো জানা থাকলে অবশ্যই জানতে সহযোগিতা করবেন। আর এই ঘটনা নিয়ে কোন ভুক্তভোগী যদি সাইবার আইনে মামলা করেন তাহলে তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে। অসভ্যতার একটা সীমা থাকা উচিত। এই পেইজ থেকে এর আগেও অসংখ্যবার বিভিন্ন মেয়েকে নিয়ে নোংরামি পোস্ট করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে মানসিকতা, চিন্তা-চেতনা এতো নোংরা আর নিচু হয় কি করে ভাবেও শিউরে উঠি। এই পেইজ থেকে যা করা হয়েছে তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।’

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শ্যামলী তানজিন অনু বলেন, ‘ক্যাম্পাসে একের পর এক ঘটনা ঘটছে কিন্তু প্রশাসন নিরব। ক্যাম্পাসেরই একটা পেজ থেকে ৭০+ মেয়ের ছবি দিয়ে বাজে ক্যাপশনে পোস্ট করা হলো। এটা রীতিমতো হয়রানি করা। এসব আর কতো চলবে? মেয়েরা কোথায় নিরাপদ আমরা? প্রশাসন এমন অথর্ব কেন?’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী এক ছাত্রী বলেন, ‘এমন কুরুচিপূর্ণ কাজ নিচু মানসিকতার মানুষরা ছাড়া পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা এদের কারণেই অনিরাপদ। এই পোস্ট যারা করেছে তার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই।’

পেইজেটির একজন অ্যাডমিন অর্থনীতি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের মিজান বিশ্বাস বলেন, ‘অনেকদিন পেজে কিছু পোস্ট করা হয় না। তাই আমি মজা করে ওই পোস্টটি করেছিলাম। কিন্তু আমার কোন অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না। বিষয়টি এতোদূর গড়াবে আমি বুঝে উঠতে পারিনি। আমি সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। ২১ আগস্টের প্রোগ্রাম শেষে কে বা কারা পেইজটি চালায় তা দেখতে আইসিটি সেলের সাথে বসবো। পরিচয় পেলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিব।’


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: