কলেজ ও সাবজেক্ট চয়েজে শিক্ষার্থীদের করণীয়

সাত কলেজের বিজ্ঞান অনুষদে কলেজ ও সাবজেক্ট চয়েজ কেন গুরুত্বপূর্ণ

সাখাওয়াত আল হোসাইন, ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক | ২১ আগষ্ট ২০২২, ১৮:৩৪

সংগৃহীত

গত ১৭ আগস্ট প্রকাশিত হয়েছে সাত কলেজ বিজ্ঞান অনুষদ ২১-২২ সেশনের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল।

এবার বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৬১ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তির উপযোগী হয়েছেন। অনেক শিক্ষার্থী না জানার কারণে কলেজ ও সাবজেক্ট চয়েজ দুটোতেই দিতে ভুল করে থাকেন। আমার আজকের এই লেখায় সাত কলেজের বিজ্ঞান অনুষদের ভর্তিচ্ছু ভাইবোনদেরকে বাস্তবতার আলোকে কিছু পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করবো।

এবার দেখা যাক কলেজ গুরুত্বপূর্ণ নাকি সাবজেক্ট গুরুত্বপূর্ণ। সাত কলেজের বিজ্ঞান অনুষদে কলেজ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাত কলেজের নিচের দিকে কয়েকটা কলেজ আছে, সেগুলোতে ল্যাব সংকট, ক্লাস রুম সংকট, সেইসাথে শিক্ষক সংকটও চরমে। কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও বাংলা কলেজে রয়েছে শিক্ষক সংকট, ল্যাব ও ক্লাস রুম সংকট। সাত কলেজের অনার্সের ফলাফলে সিজিপিএ কম বা বেশি খারাপ করে এই কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরাই। আর এই কলেজগুলোর যে এরিয়াতে অবস্থিত, এসব এরিয়াতে সুযোগ-সুবিধাও কম। সাত কলেজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজে। ফলাফল ভালো করাসহ অন্যান্য বিভিন্ন কার্যক্রমে এগিয়ে আছে এই দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা।

সাত কলেজের মধ্যে ছেলেদের জন্য সবচেয়ে ভালো কলেজ হলো ঢাকা কলেজ। এই কলেজে কিছু কিছু সংকট আছে। সাত কলেজের মধ্যে সামগ্রিকভাবে ঢাকা কলেজের অবস্থা খুবই ভালো। ঢাকা কলেজের পাশেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন মহিলা কলেজ, বুয়েট। একটু দূরে গেলেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজ।

আর মেয়েদের জন্য ভালো কলেজ হলো ইডেন মহিলা কলেজ। এই কলেজে ছয়টি হল রয়েছে। ইডেন কলেজের সামগ্রিক পড়াশোনার পরিবেশ বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও ভালো। এই কলেজের মেয়েরা যেমন পড়াশোনায় মনোযোগী, তেমনি বিসিএস সহ অন্যান্য চাকরিতে কম এগিয়ে নেই। আরেকটা কথা এই কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া অনেক বিখ্যাত নারী এই কলেজে শিক্ষার্থী ছিলেন, এদিক থেকেও ইডেন মহিলা কলেজ পিছিয়ে নেই।

মেয়েদের পছন্দের তালিকায় ইডেন কলেজের পরে থাকা উচিত বেগম বদরুন্নেসা কলেজ। কারণ ঢাকা কলেজ আর ইডেন কলেজের সাথে ভাগাভাগি করে চলার চেষ্টা করে বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ। তারাও কিন্তু চাকরির বাজারে পিছিয়ে নেই। কিছুদিন আগে প্রকাশিত বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের ফলাফলে সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে পেছনে ফেলে প্রথম হয়েছে বদরুন্নেসা কলেজের এক শিক্ষার্থী।

ঢাকা কলেজ আর ইডেন কলেজের মতো সমান তালে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে তিতুমীর কলেজও। তিতুমীর কলেজে মোট পাঁচটি হল রয়েছে। মেয়েদের জন্য রয়েছে তিনটি আর ছেলেদের জন্য রয়েছে দুটি। রাজধানীর যানজট এরিয়াগুলোর অন্যতম হলো মহাখালী অর্থাৎ তিতুমীর কলেজের এলাকা। রাজধানীর অনেক সুবিধা পায় না, এই কলেজের শিক্ষার্থীরা। তবে এই কলেজ সাত কলেজের অন্যান্য নিচের দিকের কলেজের তুলনায় ভালো। এই কলেজের শিক্ষার্থীরা বিসিএসসহ অন্যান্য চাকরিতে ভালো এগিয়ে আছে।

বাংলা কলেজের অবস্থান মিরপুর এরিয়াতে। একজন বাম নেতার ভাষ্য অনুযায়ী, বাংলা কলেজের একটি বিভাগের রুম রয়েছে মাত্র একটি। শিক্ষক রয়েছে তিনজন, ল্যাব সংকট চরমে। এই কলেজের কর্তৃপক্ষ খুবই দুর্বল। কয়েকদিন আগে এই কলেজটি অনার্সের শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড দিয়েছিল। আইডি কার্ডের এমন অবস্থা যে, শিশু শ্রেণির একটা বাচ্চা এই কার্ড ব্যবহার করতে লজ্জাবোধ করবে। কারণ আইডি কার্ডের কোয়াটিলি খুবই খারাপ। পড়াশোনা আর রেজাল্টের অবস্থা কতটা খারাপ বলে বুঝানো লাগবে না। এটা বুঝে নিবেন।

কবি নজরুল আর সোহরাওয়ার্দী কলেজের কথা বলি। সাত কলেজের মধ্যে একমাত্র কলেজ হলো সোহরাওয়ার্দী কলেজ, যেটার কোনো আবাসিক হল নেই। কবি নজরুল আর সোহরাওয়ার্দী কলেজ এরিয়াতে সর্বদা যানজট বিরাজমান। এই দুটি কলেজে অনার্সের ফলাফল ভালো হয় না। আর ভালো ফলাফল শিক্ষার্থীরা করবেই বা কিভাবে এখানে রয়েছে শিক্ষক সংকট, ক্লাস রুম সংকট, ল্যাব সংকট। নেই শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ।

অতএব, ছেলেদের পছন্দের তালিকায় রাখতে হবে ঢাকা কলেজ। সাবজেক্ট যেটাই হোক। এরপর তিতুমীর কলেজ, বাংলা কলেজ, কবি নজরুল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজ। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে পছন্দের তালিকায় শুরুতে ইডেন মহিলা কলেজ। এরপর বদরুন্নেসা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, বাংলা কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ।

এবার আসি সাবজেক্ট চয়েজের হিসেব নিকেশে। তোমরা যারা নিয়মিত পড়াশোনা করবা, রুটিন অনুযায়ী দিনের পড়া দিনে শেষ করবা, টিউশনি করানো লাগবে না, পার্ট জব-চাকরি করা লাগবে না বা আর্থিক কোনো দুর্বলতা নেই। তারা নিতে পারো কঠিন সাবজেক্টগুলো। তারপরও কঠিন সাবজেক্টও পছন্দের তালিকায় রাখার ক্ষেত্রে হিসেব নিকেশ করে নিতে হবে। আর না হয় কিন্তু সারা জীবন পচতাতে হবে। কারণ তোমার অনার্সের ফলাফল ভালো হবে না। আর যাদের আর্থিক দুর্বলতা রয়েছে, পার্ট জব-চাকরি করা লাগবে। তারা একটু সহজ সাবজেক্টগুলো নিলে চলার পথ সহজ হবে। সেইসাথে অনার্সে ভালো ফলাফলও থাকবে। এটাও বলে রাখি আগের চেয়ে সাত কলেজের মান অনেক উন্নয়ন হয়েছে। সাত কলেজের ফলাফল দিতে তেমন দেরি হয় না। শিক্ষার্থীরাও ভালো ফলাফলও করে। নেই কোনো সেশনজট। চার বছরে শেষ হবে অনার্স লাইফ।

বিজ্ঞান অনুষদের কোন সাবজেক্টে কেমন ফলাফল হয় জেনে আসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৩ জুন প্রকাশিত হয়েছে সাত কলেজ প্রথম বর্ষ উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ফলাফল, তাতে পাসের হার ছিল ৭১ দশমিক ৯২ শতাংশ। মৃত্তিকা বিজ্ঞানের ফলাফলে পাসের হার ছিল ৯০ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত ২১ জুন দ্বিতীয় বর্ষের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রকাশিত ফলাফলে পাসের হার ছিল ৮৯ দশমিক ২৯ শতাংশ আর দ্বিতীয় বর্ষের রসায়ন বিভাগের প্রকাশিত ফলাফলে পাসের হার ছিল ৯০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। গত ১৫ জুন প্রকাশিত দ্বিতীয় বর্ষ পদার্থ বিজ্ঞানের ফলাফলে পাসের হার ছিল ৬৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। প্রথম বর্ষের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রকাশিত ফলাফলে পাসের হার ৭৯ দশমিক ৬৭ শতাংম। গত ৫ জুন প্রথম বর্ষ পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রকাশিত ফলাফলে পাসের হার ছিল ৫৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ আর প্রথম বর্ষের রসায়ন বিভাগের ফলাফলে পাসের হার ছিল ৫০ দশমিক ১২ শতাংশ। দ্বিতীয় বর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের পাসের হার ৯৮ দশমিক ২০ শতাংশ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের পাসের হার ৯১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। দ্বিতীয় বর্ষের গনিত বিভাগে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৬২ শতাংশ। গত ১৮ মে অনার্স প্রথম বর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত ফলাফলে পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ। দ্বিতীয় বর্ষের মৃত্তিকা বিভাগের পাসের হার ৯৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। গত ১১ মে প্রকাশিত অনার্স প্রথম বর্ষ ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ফলাফলে পাসের হার ছিল ৯০ দশমিক ৫৪ শতাংশ, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের পাসের হার ৯৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

এ ছাড়া বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা বিভাগ পরিবর্তন করে নিতে পারবে বানিজ্য ও কলা অনুষের সাবজেক্টও। কলা অনুষদের দর্শন বিভাগের ফলাফল খুবই খারাপ হয়। এ ছাড়া বাংলা আর ইংরেজি কঠিন হওয়ায় শিক্ষার্থীরা এই দুটি সাবজেক্ট খারাপ ফলাফল করে থাকে। চাকরি বাজারে ফাস্ট ক্লাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সাবজেক্ট যাই হোক। সবশেষ, একটি কথা বলতে চাই, সাত কলেজের অবস্থান জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে ভালো। আজকের লেখাটা এই পর্যন্তই, তোমরা সবাই ভালো থাকবে। আর যেকোনো পরামর্শের জন্য তোমরা আমাকে ফোন বা ফেসবুকে নক করতে পারো, যতটুকু সম্ভব তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: