নিষেধাজ্ঞা ভেঙ্গে রাবি ভিসির শেষ দিনেই ছাত্রলীগের ১৩৭ জনকে নিয়োগ

সময় ট্রিবিউন | ৭ মে ২০২১, ০১:৫৯

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান-ফাইল ছবি

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকা ভেঙ্গে ১৩৭ জনকে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান।

এতে দেখা যায়, শিক্ষক পদে ৯ জন, কর্মকর্তা পদে ১৯ জন, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী পদে ৮৫ জন, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে ২৪ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাঁরা সকলেই ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদধারী নেতা ও কর্মী।

বুধবার (৫ মে) স্বাক্ষরিত নিয়োগ তালিকা থেকে বিষয়টি জানা গেছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার চাকরি নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ও মহানগর ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে মহানগর পুলিশ দ্রুত লাঠিচার্জ করে দু’পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। সংঘর্ষ ও পুলিশের লাঠিচার্জে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশ পাহারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান ক্যাম্পাস ছেড়ে নগরীর চৌদ্দপাই এলাকার বিশ্ববিদ্যালয় হাউজিং সোসাইটির নিজের বাসায় যান।

এর আগে গত ৫ মে তারিখে উপাচার্য শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী পদে ১৩৭ জনের নিয়োগপত্র ইস্যু করেন। যারা উপাচার্য ভবনে গিয়ে যোগদানপত্র জমা দেন।

উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান সাংবাদিকদের বলেন, ‘৬ মে রাত ১২টা পর্যন্ত আমার নিয়োগ আছে। তার আগেই সরকারি বাড়ি ছেড়েছি। আমি পুলিশের পাহারা চাইনি, পুলিশ ইচ্ছা করেই আমাকে নিরাপত্তা দিয়েছে। তার সময়ে শত বিতর্কের পরও নিজেকে সফল দাবি করে তিনি বলেন, আমি মনে করি সফলভাবে দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি। এই চেয়ারটি অনেক চ্যালেঞ্জের। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই কাজ করতে হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৭ মে দ্বিতীয় মেয়াদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে যোগদান করেন অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান। বৃহস্পতিবার (৬ মে) তার শেষ কার্যদিবস ছিল। শেষদিন বিভিন্ন পদে ১৩৭ জনকে এডহক নিয়োগ দিয়ে গেছেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চাকরি প্রত্যাশী মহানগর ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী ক্যাম্পাসে এসে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সেকশন অফিসার মাসুদের উপর হামলা চালায়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। এ সময় রাবি শাখা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের প্রতিহত করতে এগিয়ে গেলে তাদের উপরও হামলা করা হয়। পরে রাবি ছাত্রলীগ সংগঠিত হয়ে ধাওয়া করলে মহানগর ছাত্রলীগের সাথে সংঘর্ষ বাধে। এসময় পুলিশ লাঠিচার্জ করলে মহানগর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে যান।

রাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী পরিচালক জানান, আজ রাবি ভিসি আব্দুস সোবহানের মেয়াদের শেষ দিন। তিনি চাকরি প্রত্যাশী ১৩৭ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে নিয়োগ দিয়েছেন বলে প্রচার হলে মহানগর ছাত্রলীগের চাকরি প্রত্যাশীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। এ সময় তারাও চাকরি দাবি করে এবং তাদের এমন ভাব যেনো এখনই তাদের নিয়োগ দিতে হবে। এ নিয়ে সেকশন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তার হামলা চালায়। এ সময় আমি এগিয়ে গেলে তারা আমাকেও লাঞ্ছিত করে।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার সময় রাবি ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী সেখানে ছিল। তারা এগিয়ে আসলে তাদের উপরও হামলা করা হয়। পরে রাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সংগঠিত হয়ে তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় পুলিশ এসে লাঠিচার্জ শুরু করলে দুই পক্ষেই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

প্রসঙ্গত, উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি বিরোধী শিক্ষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্তের পর অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতবছর ডিসেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরণের নিয়োগ স্থগিত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: