কেরানীগঞ্জে দুপক্ষের সংঘর্ষ; আহত আট

কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি | ১০ জুলাই ২০২১, ০৪:৪৬

ছবিঃ সংগৃহীত

পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কলাতিয়া ইউনিয়নের আহাদিপুর গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে মহিলা সহ আটজন আহত হয়েছে। আহতদের কেরানীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এ ঘটনায় পারভিন আক্তার বাদী হয়ে ৭ জনকে আসামী করে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। গত সোমবার (৫ জুলাই) দুপুরে উপজেলার আহাদিপুর গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে।

মামলার বাদী পারভিন ইসলামের স্বামী আহত সিরাজুল ইসলাম

কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ইউসুফ (৬০), ওয়াসিম(৩০), শামসুল হক (৪৪), জসিম (৩৬), মঙ্গল (৫৫) এর নেতৃত্বে ১৫/২০ জনের সঙ্গবদ্ধ দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আচমকায় পারভীন ইসলামের স্বামী সিরাজুল ইসলামের ওপর হামলা চালায়। তার স্বামীকে রক্ষা করতে গেলে পারভিন ইসলাম ও তার তিন মেয়ে সম্পা ইসলাম, সেমা ইসলাম ও সুমাইয়া কে মারধর করা হয়। এ সময় তাদের গলায় থাকা সোনার অলংকার ছিনতাইসহ তার বড় মেয়ের জামা ছিড়ে ফেলে এবং তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করা হয়। এ সময় তাদের হামলায় পারভিন ইসলামের পুরো পরিবার আহত হন। পারভিন ইসলামের স্বামী গুরুতর আহত হওয়ার ফলে তাকে কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।

 

প্রতিপক্ষ হামলায় আহত সিরাজুল ইসলাম বলেন, পূর্ব শত্রুতার জেরে এই হামলার ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিতভাবে তারা ঘটিয়েছে। ঘটনার দিন আমি দেখতে পাই এলাকার কিছু লোক জড়ো হয়ে কথা কাটাকাটি করছে। আমি সেখানে উপস্থিত হই ঘটনা দেখার জন্য কিন্তু হঠাৎই আমার ওপর আক্রমন করে কয়েকজন দুর্বৃত্ত। কিছু বুঝে উঠার আগে আমার মাথায় আঘাত করে আর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। যারা আমাদের ওপর হামলা করেছে তাদের সাথে পূর্বেও আমাদের দ্বন্দ্ব ছিল। এরই প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে প্রতিপক্ষের লোকরা আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের রক্তাক্ত করে। আমার মেয়েকে শ্লীলতাহানী ঘটায়। আমার স্ত্রীর গায়ে থাকা সোনার অলংকার, হাতের ব্রেসলেট যেসব এর মূল্য প্রায় দেড় লক্ষ টাকা এসবই তারা ছিনিয়ে নেয়। প্রায় সময় রাতে দেখা যায় তারা অনেক লোকজন নিয়ে এসে আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে এবং নানা হুমকি-ধমকি দিয়ে থাকে এসব কারণে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমরা চাই এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার হোক।

সিরাজুল ইসলামের ক্ষতবিক্ষত মাথা

অপরদিকে প্রতিপক্ষের ইউসুফ আলী জানান, আমাদের বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ করেছে সবই ভিত্তিহীন। আমরা তাদেরকে কোনরকম আঘাত করিনি কারণ আমরা নিরস্ত্র ছিলাম। উক্ত দিনে আমার ছেলে তার কর্মস্থলে যাচ্ছিল তখন ও দেখতে পায় এলাকার বাহিরের কিছু লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। আমার ছেলে ভয় পেয়ে বাসায় চলে আসে এবং বিষয়টি আমাকে অবগত করে। পূর্বের শত্রুতা থাকায় প্রতিপক্ষ কিছু লোকের বিরুদ্ধে আমরা আগেই থানায় জিডি করে রেখেছিলাম কারন তাদের সাথে আমাদের প্রায় দ্বন্দ্ব হতো। কলাতিয়া পুলিশ ফাঁড়ির এসআই শামীম আমার কথা শুনে তাৎক্ষণিক এখানে আসে। তিনি দেখতে পায় রাস্তায় দুটি বাইক থামানো বাইকের পুলিশের লোগো লাগানো কিন্তু এটা কোন পুলিশের বাইক না এমন সন্দেহের প্রেক্ষিতে পুলিশ এলাকার লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যে বাইকটা কার, পরক্ষণে কিছু লোকের সাথে কথা-কাটাকাটির সৃষ্টি হয়। তখন পুলিশের সামনে বহিরাগত কিছু লোক আমার ছেলের মাথায় আঘাত করে। আমি আর আমার স্ত্রী ছেলের চিৎকার শুনে দৌড়ে ছুটে গেলে দেখলাম আমার ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এর পরেও প্রতিপক্ষের লোকেরা তাকে আঘাত করছিল। আমরা থামাতে গেলে আমি এবং আমার স্ত্রীকে লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। এছাড়াও মারামারির ঘটনা শুনে আমার ছোট ছেলে যখন এগিয়ে আসে তাকেও মারধর করা হয়।

কিন্তু এ বিষয়ে পারভিন ইসলাম বলেন, আমরা তাদেরকে আঘাত করিনি তারাই আমাদের হামলা করে। আমার স্বামীকে যখন মাথায় আঘাত করে, তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে ইউসুফ আলীর ছেলে কে মারধর করে কিন্তু তখন আমরা সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। ততক্ষণে আমার স্বামীকে নিয়ে মেডিকেলে চলে যাই। পরক্ষণে আমরা জানতে পারি আমাকে এলাকাবাসী তাদেরকে মারধর করেছে।

এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আবু সালাম মিয়া জানান, উক্ত ঘটনায় দুই পক্ষের সদস্যরা আহত হয়েছে। এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা চলমান রয়েছে। আমরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে মামলার সমাধান করবো।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: