২৭ বছর ঘুরেও স্বামীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেখে যেতে পারলেন না আছিয়া

পাবনা প্রতিনিধি | ৩ জুলাই ২০২১, ০৪:৫৯

নজরুল ইসলাম

স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিবাহিত হলেও পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার লক্ষিপুর গ্রামের মৃত জাহেদ উদ্দিন আহম্মেদের ছেলে এসআই নজরুল ইসলাম পাননি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। তার মৃত্যুর পরে ২৭ বছর ধরে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন নজরুলের অসুস্থ বৃদ্ধা স্ত্রী আছিয়া খাতুন। অবশেষে স্বামীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না দেখেই হার মানতে হলো মৃত্যুর কাছে।

গত ২৬ জুন অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন বৃদ্ধা আছিয়া বেগম (৭৬)। বৃদ্ধা বয়সে আছিয়া আশায় বুক বেঁধে ছিলেন সরকার তার পুলিশ স্বামীকে মুক্তিযুদ্ধার স্বীকৃতি দিবে। তিনি তা দেখে যেন মৃত্যুবরণ করতে পারেন, তা বেঁচে থাকাকালীন বার বার স্মরণ করেছিলো অসুস্থ আছিয়া।

এসআই নজরুল ইসলাম ১৯৭১ সালে দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর (হিলি) থানায় পুলিশের এএসআই (নিঃ) পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় সাতই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ভারতের বালুরঘাটে যান। সেখান থেকে সশস্ত্র অবস্থায় ফিরে নিজ থানায় এবং আশপাশের এলাকায় পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পর নজরুল ইসলাম স্বপদে পুলিশের চাকরিতে পুণরায় যোগদান করেন। পরে পুলিশের এসআই পদে পদোন্নত হন। যার ব্যাচ নং ১৮২১।

১৯৮৭ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। যার মেমো নং ১০১৮ (আর/ও)। ১৯৯৫ সালে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে নজরুল ইসলাম মৃত্যুবরণ করেন। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও, মৃত্যুর ২৬ বছরেও তিনি পাননি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত পুলিশ বাহিনীর ভারতীয় মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় দিনাজপুর জেলায় নজরুল ইসলামের নাম রয়েছে। যার ক্রমিক নং ০৬৭১৯। ২০১৪ সালে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই প্রক্রিয়ায় অনলাইনে তার ছেলে শহিদুল ইসলাম(তিতু) আবেদন করেন। যার ডিজি নং উএও১৪১২৪৩।

পরবর্তিতে আবেদনটি স্থানীয়ভাবে যাচাই ও বাছাই কমিটির নিকট ন্যায় বিচার না পাওয়ায় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে আপীল করা হয় যার নং ১৪৩৮০। নজরুল ইসলামের বড় ছেলে শহিদুল ইসলাম(তিতু) বলেন, আমার মায়ের আশা ছিলো বাবার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি যেন দেখে মরতে পারে। দীর্ঘ বছর পার হলেও সে বাবার স্বীকৃতি দেখে যেতে পারলেন না। ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধে যে সমস্ত আনসার ও পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীতে কর্মরতরা অংশ নিয়েছিল তাদের ভাতা প্রদান করার ঘোষণা দিলেও আমরা তার সুফল থেকে বঞ্চিত রয়েছি।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: