ঝুঁকিতে বোয়ালমারীর মুজুরদিয়া-কমলেশ্বরদী সেতু, হেঁটে চললেও কাঁপছে

এহসান রানা, ফরিদপুর প্রতিনিধি | ২৪ জুন ২০২১, ০৮:২৬

ছবিঃ সংগৃহীত

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে কুমার নদীর উপরে অবস্থিত মুজুরদিয়া-কমলেশ্বরদী ব্রীজটি এখন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যানবাহন চলাচল তো দুরের কথা পাঁয়ে হেঁটে চলতেও ভয় পাচ্ছে মানুষজন। ব্রীজের মাঝে বাঁশের খুঁটি গেড়ে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু যান চলাচল বন্ধ লেখা সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। যে কোন সময় ব্রীজটি ধ্বসে পড়তে পারে জেনেও অত্র অঞ্চলের মানুষ জীবনের তাগিদে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত পারাপার হচ্ছে।

জানা যায়, একপাড়ে সাতৈর ইউনিয়নের মুজুরদিয়া বাজার আরেকপাড়ে দাদপুর ইউনিয়নের কমলেশ্বরদী বাজার আর মাঝে প্রবাহমান কুমার নদী। ওপাড় থেকে এপাড় আর এপাড় থেকে ওপাড় অত্র অঞ্চলের লোকজনের দৈনন্দিন জীবনধারার যাতায়াতের অন্যতম প্রধান মাধ্যম এটি। এই দুই পাড়ের দুইটি ইউনিয়ন ছাড়াও বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের মেল বন্ধন এ সেতুটি। পাশাপাশি জেলা সদর ও কয়েকটি উপজেলায় যাতায়াতের একমাত্র পথও এটি।

অত্র এলাকার বাসিন্দা, রাকিব হোসেন জীবন ও ফোরকান মোল্লা জানান, ব্রীজের এক প্রান্তে অবস্থিত কমলেশ্বরদী এয়াকুব আলী উচ্চ বিদ্যালয় এবং সাথে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আরেক প্রান্তে কাদিরদি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ছাড়াও সাধারণ মানুষদেরও নিত্য যাতায়াত এই ব্রীজটির উপড় দিয়েই, জীবনের রসদ জোগাতে নিত্য প্রয়োজনীয় নানা প্রকার পণ্য সামগ্রী পরিবহন সহ প্রতিদিন দু প্রান্তের হাজারো লোকের চলাচলের ভার বহন করে এই সেতুটি।

জানাগেছে, ১৯৮২ সালে হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য ৮ ফুট চওড়া ও প্রায় ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের এ সেতুটি নির্মিত হয়। নির্মাণ সময়ের বয়স আর অতিরিক্ত ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য বিগত কয়েক বছর ধরেই সেতুটির এমন বেহাল দশা ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা। বর্তমানে সেতুর একটি স্পান দেবে যাওয়া সহ সামান্য ভার প্রয়োগেই কেঁপে উঠছে। দুই পাশের রেলিং ভাঙ্গা, সেতুর মাঝখানে ফাটল সহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত।

মুজুরদিয়া ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য, রুহুল আমিন,ব্যবসায়ী এনামুল হক এবং কাদিরদি এলাকার স্বপন দত্ত,জানান, ব্রিজটির অবস্থা ভয়াবহ খারাপ। কিন্তু তবুও থেমে নেই মানুষের প্রয়োজনীয় পাড়াপাড়। এমন অবস্থায় যেকোন সময় ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ কোন দূর্ঘটনা এবং সেই সাথে বন্ধ হয়ে যেতে পারে দুই পাড়ের মানুষের সহজ মিতালী।

দাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন মুশা জানান, এই সেতুটি দিয়ে আমার দাদপুর ইউনিয়নের প্রায় ১০ টি গ্রামের ১০/১৫ হাজার মানুষের যাতায়াত। ব্রিজটি বর্তমান অবস্থা খুবই বেহাল ও ঝুঁকিপূর্ণ। সাইনবোর্ড লিখে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ব্রিজটি নতুন করে করার জন্য আরো কয়েক বছর(২০১৮-১৯ সাল) আগে এলাকার সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান অনেক চেষ্টা করেছেন। তৎকালীন স্থানীয় প্রকৌশলী, ফরিদপুর নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ঢাকা থেকেও সংশ্লিষ্ট অফিসারদের সরেজমিনে এনে একাধিকবার দেখিয়েছেন। কিন্তু বিশেষ করে আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন মুজুরদিয়া পাশে এপ্রোচ রোডের কারনে সমস্যা দেখা দেয়। তিনি আরও বলেন বর্তমান উপজেলা প্রকৌশলীসহ কর্মকর্তারাও বিষয়টি আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করছেন। তবে ব্রিজটি ভেঙ্গে গেলে আমার এলাকার প্রায় ১৫ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়তে হবে। জেলা উপজেলা সদরে যেতে কমপক্ষে ৮/১০ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হবে।

এব্যাপারে সাতৈর ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, বছর দুয়েক আগে তিনি নিজে ব্রিজ নির্মাণের জন্য ওই সংযোগ (অ্যাপ্রোচ) সড়কের জায়গা মাপঝোক করেন। কিন্তু সেখানে রাস্তার একপাশে একটি মসজিদ এবং অপরপাশে কিছু দোকানপাট রয়েছে। সেগুলো অপসারণ করতে না পারায় ব্রিজের কাজ শুরু করা যায়নি। তিনি আরও বলেন, জানামতে এসব সরকারি খাসজমিতে গড়ে তোলা হয়েছে। তবে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে এসব স্থাপনা অপসারণ করা দুস্কর। তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের হস্তক্ষেপে এসব স্থাপনা অপসারণ করা গেলে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু করা যাবে।

এ প্রসঙ্গে বোয়ালমারী উপজেলা প্রকৌশলী( স্থানীয় সরকার বিভাগ) এ কে এম রফিকুল ইসলাম জানান, ব্রীজটি ১৯৮২-৮৩ সালে হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য তৎকালীন প্রকল্প হিসেবে নির্মিত। সরেজমিনে ব্রীজটি পরিদর্শন করে লিখিতভাবে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে এর সমাধান করার। তবে পুরনো ব্রীজটি সংস্কার করার মতো অবস্থা নেই। নতুন ব্রীজ করতে হবে। এছাড়াও নদীর উপর বড় ব্রীজ করতে বিআইডব্লিউটিএর অনুমোদন নেওয়াসহ অনেক কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে দুই পাশে বিশেষ করে মুজুরদিয়া পাশের এপ্রোচ রোডের কারনে ব্রীজটি নির্মাণ করতে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে বলেও তিনি আরও জানান।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: