শেরপুরে 'বাংলাদেশের জীববৈচিত্র ও পরিবেশ রক্ষায় কুতথ্য প্রতিরোধের অপরিহার্যতা' শীর্ষক ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত

শেরপুর প্রতিনিধি | ২৮ মার্চ ২০২৪, ২০:১৪

ছবিঃ সংগৃহীত
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইইডি) এবং জনউদ্যোগের আয়োজনে শেরপুরে 'বাংলাদেশের জীববৈচিত্র ও পরিবেশ রক্ষায় কুতথ্য প্রতিরোধের অপরিহার্যতা' শীর্ষক ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
 
২৮ মার্চ (বৃহস্পতিবার) ১১.৩০ টা থেকে দুপুর ৩.০০ টা পর্যন্ত থানা মোড়ে অবস্থিত হোটেল আয়সার ইন এর সেমিনার কক্ষে এই ওয়ার্কশপ এবং গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
 
ওই সময় জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় কুতথ্যের প্রভাব, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যবহার এবং এর থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে এই ওয়ার্কশপে আলোচনা করা হয়েছে। ওয়ার্কশপের শুরুতেই 'বাংলাদেশের জীববৈচিত্র ও পরিবেশ রক্ষায় কুতথ্য প্রতিরোধের অপরিহার্যতা', শীর্ষক গবেষণাপত্রটি তুলে ধরেন এর গবেষক ও আইইডি'র কর্মকর্তা কামরুশ শহীদ হাফিজ আদনান। গবেষণাটিতে মূলত কুতথ্য, বন ও বন্য প্রাণী সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা এবং এর যোগসূত্রের ফলে জীববৈচিত্র ও পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
 
এ সময় জনউদ্যোগ শেরপুর জেলা শাখার আহবায়ক শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব সাংবাদিক হাকিম বাবুল এর সঞ্চালনায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরপুর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইফফাত জাহান তুলি।
 
আলোচক হিসেবে উপস্থিত হয়ে আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন, শেরপুর সরকারি কলেজ এর  সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল কাদের, ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন্যপ্রাণী ব্যাবস্থাপনা ও সংরক্ষণ  কর্মকর্তা মোঃ মঞ্জুরুল আলম, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ রেজুয়ান, বন কর্মকর্তা সুমন সরকার, গবেষক জ্যোতি পোদ্দার, শেরপুর ডিসট্রিক্ট ডিবেট ফেডারেশন এর সাধারণ সম্পাদক শাহ মুহাম্মদ ইমতিয়াজ চৌধুরী শৈবাল, এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম এর সদস্য লবকেশ মারে ও উকিল মিয়া, জেলা তথ্য কর্মকর্তা ইব্রাহিম মোল্লা সুমন, আদিবাসী নেতা সুমন্ত বর্মন, কেয়া নকরেক, সাংবাদিক সুরুজ্জামান, শেরপুর বার্ড কনজারভেশন ক্লাবের সভাপতি দেবদাস চন্দ বাবু প্রমুখ।
 
বক্তারা টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় করণীয় নিয়ে মতামত তুলে ধরেন। বিভিন্ন প্রকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কুতথ্য কিভাবে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য ধ্বংস করতে ব্যবহার করা হয় তা নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
বিভিন্ন প্রকার প্রাণী, উদ্ভিদ এবং জলাধার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ভ্রান্ত ধারণা এবং কুসংস্কার কিভাবে বন্যপ্রাণী, বন এবং জীববৈচিত্র ধ্বংসে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে তা আলোচনা করা হয়।
 
গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে ১৬ প্রজাতির জীব চিরতরে হারিয়ে গেছে এবং মহা বিপন্ন ও বিপন্নের তালিকায় রয়েছে তিন শতাধিক জীব। বিশেষ করে পরিবেশ বান্ধব গুইসাপ, তক্ষক, শুশুক দারাজ সাপ, ব্যাঙ এবং লক্ষ্মীপেঁচা পরিবেশ থেকে হারিয়ে যাওয়ার পেছনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়া কুতথ্যের ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব এই বৈঠকে আলোচিত হয়। একই সাথে এর ফলে পরিবেশের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে এবং এর থেকে উত্তরণে করণীয় আলোচনা করা হয়েছে।
 
আলোচকেরা জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায়  কুতথ্যের নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার রোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যপক জনসচেতনতা মূলক কর্মসূচি এবং আইনের কঠোর প্রয়োগের প্রতি জোর দেয়ার সুপারিশ করেন। একই সাথে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কম পক্ষে ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে শিল্পকারখানা নির্মাণের নিষেধাজ্ঞার দাবি জানান। এছাড়া হাতি ও বাঘের মতো মূল্যবান জীব রক্ষায় প্রয়োজনে ভারত সরকারের সাথে যৌথ পরিকল্পনা গ্রহণ ও আইনের কঠোর প্রয়োগের দাবি জানান।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: