নরসিংদী বন্ধ থাকলেও মাধবদীতে তোলা হচ্ছে চাঁদা

আশিকুর রহমান | ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ২০:১৭

নরসিংদী বন্ধ থাকলেও মাধবদীতে তোলা হচ্ছে চাঁদা
নরসিংদীতে পৌরসভার নামে সিএনজি অটোরিকশা, ভ্যান ও ট্রলি থেকে চাঁদাবাজি বন্ধ থাকলেও ব্যাতিক্রম দেখা গেছে মাধবদী পৌরসভায়। সেখানে কোনোরকম বাঁধা ছাড়াই নির্বিঘ্নে অটোরিকশা, ভ্যান, ট্রলি ও সিএনজি থেকে তোলা হচ্ছে চাঁদা।
 
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারী) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাধবদী পৌর এলাকা বাসস্ট্যান্ড, আনন্দীর মোড়, ম্যানচেস্টার চত্বর, নতুন ফায়ার সার্ভিসের মোড় ও স্কুল মার্কেট চত্বরে ঘুরে দেখা গেছে সিএনজি, অটোরিকশা, ভ্যান, ট্রলি থেকে পৌরসভার টোকেন দিয়ে এসব জায়গায় টোল বসিয়ে প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে চোখের সামনে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছেন। এসময় দেখা যায় বেশকয়েক জন লোক চাঁদা তোলায় ব্যস্ত।
এরা সবাই ইজারাদার মোঃ বিল্লাল হোসেন ভূঁইয়া'র লোক।
 
চাঁদা তোলার বিষয়ে জানতে ইজারাদার বিল্লাল হোসেনের লোকের সাথে কথা হলে তারা জানান এটা পৌরসভা কর্তৃক পার্কিং চাঁন্দা। আমরা পৌরসভার অনুমতি নিয়ে চাঁন্দা কালেকশন করি। এটার ইজারাদার মোঃ বিল্লাল হোসেন ভূঁইয়া। আমরা তার অধিনে থেকে চাঁন্দা তুলি। এর বিনিময়ে আমাদেরকে মাসিক বেতন দেয়। এটা বৈধ বা অবৈধ জানিনা। আমরা বেতনভুক্ত কর্মচারী। আপনারা তাহলে অটোরিকশা থেকে চাঁদা নেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবিষয়ে ভাল বলতে পারবেন ইজারাদার বিল্লাল ভাই। পরে ওই ব্যক্তির মুঠোফোনের মাধ্যমে ইজারাদার বিল্লালকে ফোন দিলে সাংবাদিক কথা বলবে বলে জানালে তিনি লাইন কেটে দেন। পরে ইজারাদার বিল্লালের সাথে প্রতিনিধি আর কথা বলা সম্ভব হয়নি। 
 
চাঁদার বিষয়ে একাধিক অটোচালক ও মালিক বলেন, কয়েক বছর ধরে প্রতিদিন পৌর পার্কিংয়ের নামে ২০ টাকা করে চাঁন্দা দিতে হয়। আমরা ৫ বছর ধইরা অটো চালাই। তখন থেকেই ২০ টেহা কইরা দিতাম।
 
কারা এ চাঁদা নিচ্ছে এমন প্রশ্নে করলে তারা প্রতিনিধিকে বলেন, কারা চাঁন্দার টাকা নিচ্ছে  তা পুলিশ প্রশাসন থাইক্যা শুরু কইরা সকলেই জানে। মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক লোক দিয়ে তুলে। সকালে গাড়িটা রাস্তায় বাহির হইলেই আগে চাঁন্দাবাজ গরে ট্যাহা দিতে হয়। না দিলেই লাড়ি দিয়া বারি মাইরা গ্লাস লাইট ভাইঙ্গা লায়। প্রতিবাদ করলে মারতে আয়ে। আমরা গরীব মানুষ পেটের দায়ে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজ্জা কষ্ট করে গাড়ি চালাই। তারা গরীবদের উপর জুলুম করছে। এটা দেখার কেউ নাই। আমরাও চাই নরসিংদীর মত মাধবদীতেও অটোরিকশার চাঁন্দা বন্ধ হোক। 
 
মাধবদীর স্থানীয় নেতাদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, এধরনের চাঁদা অবৈধ। এটা গরীব মারার চাঁদা। এসব চাঁদা বন্ধের দাবিতে আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। পৌরসভার এই অবৈধ চাঁদা বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে তা তিনি আর বন্ধ করেননি। নরসিংদী সদর-১ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরো (বীর প্রতীক) এর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নির্বাচনের পর তিনি চাঁদামুক্ত নরসিংদী গড়বেন। তার এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ফলশ্রুতি দেখা যায় নরসিংদী শহরে। বর্তমানে নরসিংদী শহরে সকল ধরনের চাঁদা বন্ধ রয়েছে। আশাকরছি আমরাও অল্পসময়ের মধ্যে মাধবদীতে সর্বস্তরের জনগনকে সাথে নিয়ে এধরণের অবৈধ চাঁদা বন্ধ করতে পদক্ষেপ গ্রহন করবো (ইনশাআল্লাহ)। 
 
স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমরাও নরসিংদী মতো মাধবদীতে সকল ধরনের চাঁদা বন্ধে একমত। মাধবদী বাংলাদেশের একটি অর্থনৈতিক জোন। তাই বিভিন্ন থানা থেকে মাধবদী শহরে প্রতিদিন প্রায় ৫/৬ হাজার  অটোরিকশা, ভ্যান, সিএনজি ও ট্রলি চলাচল করে। এসব গাড়ি থেকে প্রতিদিন ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। প্রতিমাসে প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে। এসব টাকার ভাগবাটোয়ারা করেন মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। 
 
সম্প্রতি নরসিংদীতে থ্রি হুইলার, পাসপোর্ট ও সাবরেজিস্টার অফিস থেকে সকল ধরনের  চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভের ডাক দেয় নরসিংদীর সর্বস্তরের জনগন। ওই মানববন্ধন ও বিক্ষোভে নরসিংদী সদর-১ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরো (বীর প্রতীক) এমপির অনুসারীরা চাঁদা বন্ধের সমর্থনে বক্তব্য রাখেন। মঞ্চ থেকে "যেখানেই চাঁদা সেখানেই প্রতিরোধ" বলে ঘোষণা দেওয়া হলে বর্তমানে শহরে চাঁদা তোলা বন্ধ রয়েছে।  


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: