৬টি আসনের ৩ আসনে স্বতন্ত্রে শঙ্কা নৌকা-লাঙলের , ৩টিতে নির্ভার

গোলাম সারোয়ার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০

৬টি আসনের ৩ আসনে স্বতন্ত্রে শঙ্কা নৌকা-লাঙলের , ৩টিতে নির্ভার

জমে উঠেছে ভোটের মাঠ। প্রচারণায় বেড়েছে গতি। আগ্রহ বাড়ছে ভোটারদের। জেলার ছয়টি আসনের তিনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তুমুল।

বাকি তিনটিতে লড়াইয়ে কোনো ধরনের সম্ভাবনা না থাকলেও আছে কেন্দ্রে ভোটার আনার চ্যালেঞ্জ। যে কারণে জয়ের দ্বারপ্রান্তে থেকেও কোনো প্রার্থীই নির্বাচনী প্রচারণায় বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে চাচ্ছেন না। তাঁদের প্রচারণায় মুখর প্রতিটি অলিগলি। এই চিত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার।

জেলার ছয়টি আসনে ৩৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২৩ লাখ ৮৩ হাজার ৫৩৩ জন।

নেতাকর্মী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১, ২ ও ৩ নম্বর আসনে ভোটের মাঠে বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। বাকি ৪, ৫ ও ৬ নম্বর আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত তিন প্রার্থীর জয় এক প্রকার নিশ্চিত! তিনটি আসনেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা নির্ভার।

তবে ওই ৩ আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থীই নির্বাচনী প্রচারণায় পিছিয়ে নেই।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে নৌকার প্রার্থী বদরুদ্দোজ্জা মো. ফরহাদ হোসেন এমপিকে চোখ রাঙাচ্ছে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী কলার ছড়ি প্রতীকের সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান। দল মনোনীত প্রার্থী হয়েও আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকে খুঁজে পাচ্ছেন না ফরহাদ হোসেন। এমনকি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রোমা আক্তার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ টি এম মনিরুজ্জামান প্রকাশ্যে একরামুজ্জামানের পক্ষে নেমেছেন। একরামুজ্জামান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন।
নির্বাচনের মাঠে নামায় দল তাঁকে বহিষ্কার করে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে ‘জোটসমর্থিত’ লাঙল প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান আলম মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। তবে আসনটিতে লাঙ্গলকে চোখ রাঙাচ্ছে কলার ছড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মঈন উদ্দিন।

লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়ার শ্বশুর সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির নেতা জিয়াউল হক মৃধা ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করায় বেশ সুবিধায় আছেন মাঈন উদ্দিন।

বেশ উত্তেজনা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনে। পোস্টার ছেঁড়া, পোস্টার ছিনতাই, সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার অভিযোগ—এসব মিলিয়ে জমে উঠেছে এই আসনের নির্বাচনী মাঠের লড়াই। এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা হচ্ছে আপিল করে মনোনয়ন ফিরে পাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা কাঁচি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিরোজুর রহমানকে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে তিনি এমপি প্রার্থী হয়েছেন। এর আগে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অন্যদিকে তিনবারের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। এবারের ভোটের এলাকায় করা তাঁর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিষয়টি ভোটারদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে।

একেবারেই নির্ভার আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম ও ফয়জুর রহমান বাদল। এই তিনজন যথাক্রমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ৪, ৬ ও ৫ নম্বর আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। তাঁদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে আইনমন্ত্রীর বিপক্ষে লড়াইয়ে থাকা বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের ছৈয়দ জাফরুল কুদ্দুছ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শাহীন খানের তেমন একটা পরিচিতি নেই। এর মধ্যে ছৈয়দ জাফরুল কুদ্দুছ জেলার মোট তিনটি আসনে প্রার্থী হয়েছেন।
সাতজন প্রার্থী রয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে। এই আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য দলীয় মনোনয়ন পাননি। এবাদুল হক এমপির বদলে এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি ফয়জুর রহমান বাদল। এবারে ভোটে জাতীয় পার্টির মোবারক হোসেন বাদে কেউ ফয়জুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবেন না।

উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে এলাকায় বেশ জনপ্রিয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এ বি তাজুল ইসলাম। এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া তাজুল ইসলামের সঙ্গে লড়ছেন আরো তিনজন প্রার্থী। তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. আমজাদ হোসেন বাদে আর কেউ তেমন সুবিধা করতে পারবেন না বলে মনে করা হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে লাঙল প্রতীকের প্রার্থী মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া মনে করেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাঁর হয়ে কাজ করবেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈন উদ্দিন বলেন, ‘জনগণ আমাকে যে ভালোবাসেন সেটা আগেও প্রমাণ দেখিয়েছেন। এবারও জনগণের চাওয়াতেই প্রার্থী হয়েছি।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সদর-বিজয়নগরে ব্যাপক উন্নয়ন করে মোকতাদির চৌধুরী সবার হৃদয়কোঠায় ঠাঁই করে নিয়েছেন। উন্নয়নের স্বার্থে, এলাকাকে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত করতে এই আসনে তাঁর কোনো বিকল্প নেই।’



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: