আচরণবিধি লঙ্ঘন করে অলি গলিতে ভোট চাইছেন নৌকার শাহজাহান

গোলাম সারোয়ার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি | ৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:৩৫

আচরণবিধি লঙ্ঘন করে অলি গলিতে ভোট চাইছেন নৌকার শাহজাহান

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্য শাহজাহান আলমকে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। তিনি প্রতিদিন নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে ভোট চাইছেন। এ-সংক্রান্ত স্থিরচিত্র ও ভিডিও ফুটেজ তিনি নিজেই তাঁর ফেসবুক আইডিতে প্রচার করছেন।

নির্বাচন কমিশনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালার ১২ ধারায় বলা আছে, ‘কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত তিন সপ্তাহ সময়ের আগে কোনো ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে পারবেন না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ হবে। এর আগে ভোটের প্রচার চালানোর সুযোগ নেই।’

গত ৫ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে শাহজাহান আলম নৌকার প্রার্থী হয়ে ৬১ হাজার ৮২৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাপার টানা দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা পান ৩৭ হাজার ৩৬১ ভোট। উপনির্বাচনটিতে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠে। এর আগে ১৯৭৩ সালে এখানে নৌকা জয় পেয়েছিল। বিএনপি ও জাপার দুর্গ হিসেবে পরিচিত এই আসনে বিএনপিবিহীন ভোটে ৫০ বছর পর নৌকার জয় আসে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে ১১ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। শাহজাহান আলম ছাড়া অন্য প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টির টানা দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা (স্বতন্ত্র), জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মো. মঈন উদ্দিন (স্বতন্ত্র), বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ছেলে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার ছেলে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মাইনুল হাসান, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, একই দলের যুগ্ম মহাসচিব আবদুল হামিদ, জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কাজী মাসুদ আহমেদ, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের ছৈয়দ জাফরুল কুদ্দুছ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির রাজ্জাক হোসেন।

দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোট ১১ প্রার্থীর মধ্যে শাহজাহান আলম তিন-চার দিন ধরে ব্যাপকভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে আছেন। তিনি এলাকায় এলাকায় গণসংযোগ ও সমাবেশ করে বেড়াচ্ছেন। ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে তাঁকে বিজয়ী করার জন্য এলাকাবাসীকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন এবং আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের জন্য ভোট চাইছেন। পাশাপাশি তিনি প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন। এসব কর্মসূচির স্থিরচিত্র ও ভিডিও ফুটেজ তাঁর নিজের এবং অনুসারীদের ফেসবুক আইডিতে প্রচার করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার শেষ বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শাহজাহান আলম সরাইল উপজেলার চুন্টা ইউনিয়নের লোপাড়া বাজারে সমাবেশ করেন। সমাবেশে তিনি নির্বাচনী এলাকায় মেঘনা নদীর তীরে বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘আমি এখানে বেড়িবাঁধ করব। বেড়িবাঁধ হলে এলাকার কোনো শিক্ষিত ছেলেমেয়ে বেকার থাকবে না। এখানে নতুন নতুন ভবন হবে, শিল্পকারখানা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে এমপি হিসেবে পার্লামেন্টে ধাক্কা দিয়া ঢুকাইয়া দেন। উন্নয়ন আমি দেখব। উন্নয়নের জন্য আবার নৌকায় ভোট দেন। আবার শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বানান। আমাকে ভোট দিলে সরাইল-আশুগঞ্জে এমন উন্নয়ন করব যে সরাইল-আশুগঞ্জকে মানুষ দেখতে আসবে।’

এর আগে গত বুধবার তিনি সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ও শাহবাজপুর এবং মঙ্গলবার পাকশিমুল ও অরুয়াইল ইউনিয়নের সাত থেকে আটটি গ্রামে গণসংযোগ ও সমাবেশ করে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চান।

এ বিষয়ে জাপার মনোনীত প্রার্থী আবদুল হামিদ বলেন, নির্বাচন আইন অনুযায়ী, কোনো প্রার্থীই প্রতীক বরাদ্দের আগে সভা-সমাবেশ করতে পারেন না। তিনি (শাহজাহান) যা করছেন, তাতে আচরণবিধি ভঙ্গ হয়েছে।

তবে নিজে কোনো নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন না বলে দাবি করেছেন শাহজাহান আলম। তিনি বলেন, ‘গত উপনির্বাচনের পর আমি এলাকায় ঘুরে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। এখন এলাকায় গিয়ে আমার লোকজনের সঙ্গে দেখা করছি, চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছি।’ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গত নির্বাচনের ইশতেহারের কথাগুলো বলছি, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি না।’

সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো প্রার্থী ভোট চাইতে সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ বা প্রচারণা করলে নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে। আইন অনুযায়ী, কেউ তা করতে পারেন না। গত বুধবার একজন সাংবাদিক বিষয়টি আমাকে বলেছেন। এ ছাড়া এখানে এ রকম ঘটনার কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: