ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় ইদ্রিস আলী (৪৫) হত্যায় থানা ও আদালতে পৃথক দুইটি হত্যা হয়েছে। মামলার এক মাস পার হলেও আসামী ধরছে না পুলিশ। মামলার বাদীদের অভিযোগ পুলিশের তাড়াহুড়ার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, গত ২৯ অক্টোবর সকাল ১০ টার দিকে জমি সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাধাকানাই ইউনিয়নের রঘুনাথপুর বাজার এলাকার রিয়াজ উদ্দিন লোকজন ও একই এলাকার আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে ইদ্রিস আলী ও তার লোকজনের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনায় আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে ইদ্রিস আলী (৪৫), আফাজ উদ্দিন (৪৫) ও সেলিমসহ (৩৫) কয়েকজন আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে ইদ্রিস আলীর অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলে পথিমধ্যে মারা যান ইদ্রিস আলী।এদিকে, আফাজ উদ্দিন ও সেলিম ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এদিকে, ঘটনার দিন সকালে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন গুরুতর আহত হওয়ার খবর পায় ফুলবাড়িয়া থানার পুলিশ। এমন খবর পেয়ে পুলিশ তাড়াহুড়া করে আহত আফাজ উদ্দিনের স্ত্রী শেফালী আক্তারকে জোড় করে থানায় এনে ৪ জনকে আসামী করে আসামী মারামারি মামলা নেয়। মামলার পর ওই দিন রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ইদ্রিস আলী মারা যায়। ইদ্রিস আলী মারা যাওয়ার পর শেফালী আক্তার মামলার বাদী হতে অস্বীকৃতি জানায়। এদিকে, ইদ্রিস আলী হত্যার পরদিন তার পিতা আবু বকর সিদ্দিক থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। দ্বিতীয়বার মামলা নেয়া যাবে না।
পরে নিহত ইদ্রিস আলীর পিতা আবু বকর সিদ্দিক গত ৭ নভেম্বর ৯ জনকে আসামী করে আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর আদালত থানায় করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই) ফেরদৌস আলমকে ডাকে আদালত এবং আগামী ২৮ ডিসেম্বরের মাঝে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ। একই সাথে আদালতে করা মামলা ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করেন।
এবিষয়ে মামলা তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই) মো. ফেরদৌস আলম বলেন, ঘটনার দিন সকালে মারামারি হলে নিহত ইদ্রিস আলী, আফাজ উদ্দিন, সেলিম গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এই ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে শেফালী আক্তার বাদী হয়ে মামলা করতে রাজি হয়। পরে শেফালী আক্তার ওই দিন বিকালে থানায় মামলা দায়ের করেন। এদিকে, ওই দিন রাতে ইদ্রিস আলী মারা যায়। পরদিন ইদ্রিস আলী মারা যাওয়ার বিষয়টি আদালতকে অবগত করি। তবে, তিনজনই গুরুতর আহত হয়েছিল। কে মারা যাবে। তা তো মানুষের পক্ষে বলা সম্ভব না। যে কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আদালত ২৮ ডিসেম্বর প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে। ওই দিন প্রকৃত ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে।
এবিষয়ে শেফালী আক্তার বলেন, পুলিশ আমাকে জোড় করে বাড়ি থেকে নিয়ে মামলা নিয়েছে। আমি কেন দেবর হত্যা মামলার বাদী হব। আমি এই মামলা বাদী থাকতে চাই না।
নিহত ইদ্রিস আলীর বাবা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমার ছেলে মারা যাওয়ার পর দিন থানায় গেলে মামলা না নিয়ে আমাকে ফিরিয়ে দেয়। পরে উকিলদের সাথে আলোচনা করে আদালতে মামলা দায়ের করি। আদালত থানার মামলার প্রতিবেদনের জন্য ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলা স্থগিত করেছে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ আসে আর ঘুরে ফিরে চলে যায়। কিন্তু ছেলে হত্যার প্রায় এক মাস পর হলেও পুলিশ কোন আসামী ধরছে না। আমি আমার ছেলে হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।
ফুলবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহীনুজ্জামান খান বলেন, মামলা তদন্ত চলছে, পাশাপাশি আসামী ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। শীঘ্রই আসামীদের গ্রেফতার করা হবে বলেও জানান তিনি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: