বিলবোর্ডে বেপরোয়া গতির বাসের ধাক্কায় নিহত ৪, আহত ৫২

সাইফুল ইসলাম তরফদার, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি | ৭ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:০৫

বিলবোর্ডে বেপরোয়া গতির বাসের ধাক্কায় নিহত ৪, আহত ৫২

ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে আসা বাসটির গতি ছিল বেপরোয়া। শুরু থেকেই চালক ছিলেন অস্থির। পথে পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে যাচ্ছিল বাসটি। যাত্রীরা বার বার চালককে সাবধান করলেও কর্ণপাত করেননি চালক। শেষ পর্যন্ত চালকের একঘুয়েমির কারণে ময়মনসিংহ নগারীর প্রান্তে এসে শেষ রক্ষা হয়নি। দুর্ঘটনায় পড়ে বাসটি। প্রাণ হারান বাসের সুপারভাইজার, চালকের সহকারীসহ ৪ জন। আহত হন অন্তত ৫২ জন।

সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ময়মনসিংহের বাইপাস শিকারিকান্দা এলাকায় বেপরোয়া গতিতে চলমান বাসটি ওভারটেক করতে গিয়ে একই সময়ে একটি পিকআপ, একটি অটোরিকশা ও রাস্তার পাশের বিলবোর্ডে ধাক্কা দিলে ঘটে দুর্ঘটনা। এতে নিহত হন বাসটি ৪ যাত্রী।

মঙ্গলবার সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন যাত্রীরা দুর্ঘটনার বর্ণনা দেন।

ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আহত যাত্রী রংপুর উপজেলার কাউনিয়া উপজেলার ফার্ণিচার ব্যবসায়ী মো. জিয়াউর রহমান জানান, গতকাল রাতে ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলার কাশিগঞ্জে বন্ধু বাড়িতে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে শেরপুরগামী ফায়াজ ট্রাভেলসের একটি বাসে তিনি গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে উঠেন। বাসটি বেপোরোয়া গতিতে চালাচ্ছিলেন চালক। বাসটি চৌরাস্তা থেকে ছেড়ে শালনা এলাকায় আসতেই অপর একটি গাড়ি ওভারটেক করতে গিয়ে উল্টে যেতে চায়।

এসময় গাড়ির বেপোরোয়া গতি দেখে অনেক যাত্রী চালক বকাবকি ও মারধর করতে চায়। গাজীপুর সিডস্টোর এলাকার বাঘের বাজার এলাকার জন ৪ যাত্রী ছিলেন বাসে। তাদের শাসানিতে বাঘের বাজার পর্যন্ত ঠিকমত চালান চালক। এরপর তারা নেমে গেলে আবারও বেপোরোয়া গতিতে বাস চালাতে থাকেন চালক। তখনও যাত্রীরা চালককে সতর্ক করে, কিন্তু চালক কোন কথা শুনেনি। এসময় তিনি সিটে বসে ঘুমিয়ে পড়েন। হঠাৎ বিকট শব্দে তার ঘুম ভাঙে। তারপর শুধু চারদিকে কান্না আর চিৎকার বাঁচাও বাঁচাও শব্দ শুনতে পান। এসময় স্থানীয়রা দৌড়ে এসে বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করে। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আহতদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

তিনি আরও বলেন, চালকের বাস চালানোর ধরণ দেখে মনে হয়েছে তিনি নেশাগ্রস্থ ছিল। চালক এমন বেপোরোয়া গতিতে বাস চালিয়েছে যে, একজন সুস্থ চালক কখনোই এভাবে বাস চালাতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

একই ওয়ার্ডে ভর্তি আহত মো. মোতালেব মিয়া (৩২) তার স্ত্রী মোর্শেদা আক্তার (২৫) ও তার বোন মর্জিনা বেগম (৩৬)। মোতালেব জানান, তারা বাসে উঠার পর থেকেই চালক বেপোরোয়া গতিতে বাস চালাচ্ছিলেন। তার ধারণা বাস চালক নেশাগ্রস্থ ছিল।

ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রুহুল আমিন (৩০) বলেন, চালক বেপোরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। এতে বাসের অনেক যাত্রীর ঘুম ভেঙ্গে যায়। অনেকেই চালককে সতর্ক হয়ে গাড়ি চালাতে বলছিলেন। কিন্তু চালক কারোর কথাই শুনছিল না।
এর আগে সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর শিকারীকান্দা এলাকায় বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পিকআপকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে পিকআপটি ছিটকে গিয়ে রাস্তার পাশে পড়ে। পরে বাসটি মহাসড়কের ডিভাইডারে উঠে সেখানে থাকা বিলবোর্ডের পিলারে ধাক্কা খায়। এতে বিলবোর্ডটি ভেঙ্গে পরে এবং বাসটির সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে আরও একজনের মৃত্যু হয়।

এই ঘটনায় আহত হয় ৫২ জন। এর মাঝে ৩৩ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ১৯ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। নিহত ৪ জনের মাঝে দুই জনের নাম ঠিকানা জানা গেছে। তারা হচ্ছেন, বাসের সুপারভাইজার রকিব মিয়া (৩২)। তিনি জেলার ত্রিশাল উপজেলার ধানীখলা চর কুমারিয়া এলাকার শাহজাহান সরকারের ছেলে। চালকের সহকারী আবুল হোসেন সাদ্দাম (৫৫)। তিনি কুমিল্লা জেলার কচুয়া উপজেলার রুস্তম আলীর ছেলে।

এ বিষয়ে কোতোয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ, মো. শাহ কামাল আকন্দ বলেন, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা শেরপুরগামী ফাইয়াজ এন্ড তাজ নামের একটি যাত্রীবাহী বাস ময়মনসিংহ নগরীর শিকারীকান্দায় দুর্ঘটনা কবলে পড়ে। এতে চারজন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: