ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বাইক নিয়ে ট্রাকের নিচে যুবক

ঝিকরগাছা (যশোর) প্রতিনিধি | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৫:৪০

সংগৃহীত

যশোরের ঝিকরগাছায় বোনের বাড়িতে এসে বাইক দূর্ঘটনায় আকাশ বিশ্বাস (১৯) নামের এক যুবক মারা গেছে। তবে মারা যাওয়ার আগে তার ফেসবুক প্রোফাইলে দুইটা পোস্টে স্পষ্ট আত্মহত্যার কথা বলা হয়েছে।

প্রথম পোস্টে লেখা হয়েছে ‘আমাকে যেন ওই পাপের শহরে নেওয়া না হয়, কবরটা যেন এই শহরের গোরস্থানেই দেওয়া হয়’। দ্বিতীয় এবং সর্বশেষ পোস্টে স্পষ্ঠভাবে পিতার উপর অভিমান করে আত্মহত্যার কথা লেখা হয়েছে।

রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর দুইটার দিকে ঝিকরগাছা বাজারে রাজাপট্রি এলাকায় যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে এক দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই নিহত আকাশ বিশ্বাস নড়াইল জেলার কালিয়া থানার বি-পাটনা গ্রামের আবুল বিশ্বাসের ছেলে।

তবে তিনি বিদ্যুৎ বিভাগে চাকরীসূত্রে খুলনার খান জাহান আলী থানা এলাকায় বসবাস করতেন। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষন করে দেখা যায়, বেনাপোল গামী পণ্যবাহী ট্রাক (ঢাকা মেট্রো ট ১৮-৭২২০) ধীরগতিতেই রাস্তার বাম পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো।

তবে বিপরীত দিক থেকে রাস্তার ডান পাশ দিয়ে দ্রুত গতিতে একটি সুজুকি জিক্সার বাইক ট্রাকের সামনে মেরে দেয়। এসময় স্থানীয়রা বাইক চালক আকাশকে উদ্ধার করে ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা ধারণা করছেন এইটা নিছক দূর্ঘটনা ছিলোনা, বরং আত্মহত্যার উদ্দেশ্যেই ট্রাকের সামনে বাইক চালিয়ে দেয়া হয়েছিল। নিহত আকাশের বোনজামাই, ঝিকরগাছা কাটাখাল এলাকার আব্দুর রহিমের কথাতেও সেই কথার সত্যতা মেলে। ঘটনাস্থলে এসে তিনি এবং তার ভাই জানান, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আকাশ এই কাজ করেছে। তবে বিষয়টা তারা খোলাশা করেননি।

নাভারণ হাইওয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান মিজান জানান, রবিবার দুপুরে ঝিকরগাছায় ট্রাক—মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে আকাশ বিশ্বাস নামের এক যুবক মারা গেছে। লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এঘটনায় ট্রাক (ঢাকা মেট্রো ট ১৮-৭২২০) জব্দ করা হয়েছে তবে চালক পলাতক আছে।

এদিকে নিহত আকাশের ফেসবুক প্রোফাইলে মেলে আত্মহত্যার তথ্য। মারা যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে সে তার প্রোফাইলে ইংরেজি শব্দে বাংলায় একটা দীর্ঘ লেখা লেখে।

লেখার সারমর্ম হলো-

‘কী আব্বু বলেছিলাম না এমন কাজ করোনা, ছেলেকে হারিয়ে ফেলবে। আমি চলে যাচ্ছি আমার মায়ের কাছে, তোমরা তোমাদের সম্মান নিয়ে ভাল থেকো। রেগুলার মরে যাওয়ার থেকে একেবারে মরে যাওয়া অনেক ভাল। তোমার অবাধ্য কখনো হইনি আব্বু, কিন্তু আমার একটা রিকুয়েস্ট রাখলে আজ আমি বেঁচে থাকতাম। আর হ্যাঁ, অনেকের সাথেই অনেক অন্যায় করেছি সবাই আমাকে মাফ করে দিও প্লিজ। ভাইয়া তোমার কাছে একটা রিকোয়েস্ট আমার কবরটা গোরস্থানে দিও। বাপের ওই জমিনে আমাকে রেখো না ভাইয়া। অনেকটা ইচ্ছা ছিল বেঁচে থাকার, কিন্তু ওরা আমাকে বাঁচতে দিলোনারে ভাইয়া’ আর কেও তোমাকে বলবেনা, ও ভাইয়া তোমরা থাকতে আমাকে ওরা হুমকি দেয় কিভাবে। ভাল থাকুক প্রিয় ভালবাসার মানুষগুলো।'


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: