রোয়াংছড়িতে হেডম্যানের নৈরাজ্য স্বীকার কারবারী

বান্দরবান প্রতিনিধি | ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:৪২

সংগৃহীত

রোয়াংছড়িতে উপজেলায় ৩৪৯নং ঘেড়াও মৌজার হেডম্যান মংশৈনু মারমা নৈরাজ্যের স্বিকার হয়েছেন ওই মৌজার ঘেরাও প্রাংসা পাড়া গ্রাম প্রধান (কারবারী) থোয়াই অং প্রু খিয়াং। ওই মৌজার হেডম্যানের অবৈধ কাজের বাধা দেওয়াই তাকে কারবারী পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগটি তুলেছেন রোয়াংছড়ি উপজেলার ৩৪৯নং ঘেড়াও মৌজার ঘেরাও প্রাংসা পাড়া গ্রাম প্রধান (কারবারী) থোয়াই অং প্রু খিয়াং।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৩ সালে জেলা প্রশাসকের নিয়োগের কারবারী দ্বায়িত্ব পেয়েছিলেন থোয়াই অং প্রু খিয়াং। প্রায় ১৮ বছর নিজ এলাকায় কারবারীত্ব দ্বায়িত্ব পালন করে এসেছেন সৎ ও নিষ্ঠাবান সাথে। কিন্তু হেডম্যানের বিভিন্ন অবৈধ কাজের বাধা প্রদান করলে কারবারী প্রতি ক্ষেপে যান হেডম্যান। পরে তার বিরুদ্ধের অপ্রচার করতে থাকেন ওই মৌজার হেডম্যান। শুধু তাই নয় গ্রাম প্রধান কারবারী বেতন ভাতা ও বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি।

অভিযোগের উঠে এসেছে, গেল ১-৪-২০২১ তারিখে একটি হেডম্যানের প্যাডের মাধ্যমে ঘেরাও প্রাংসা কারবারীকে অব্যাহতি নোটিশ দেন ৩৪৯নং ঘেড়াও মৌজার হেডম্যান মংশৈনু মারমা। তার ওই প্যাডের উল্লেখ করা হয়- আপনি ঘেরাউ প্রাংসা পাড়াতে সুদীর্ঘ বছর ধরে পাড়ার কারবারী দ্বায়িতে নিয়োজিত আছেন। আপনি একজন পাড়া প্রতিনিধি হিসেবে নিজ কর্তব্যের ও দ্বায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন নাই। যার জন্য পাড়াবাসীগন আমাকে ও আদালতে আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আবেদন করেছেন। আপনি আপনার দলবল নিয়ে রিজার্ভ বন হতে বাশঁ, গাছ কর্তন করে বিক্রয় করেন। আপনি একজন ক্রিমিনাল টাইপের মানুষ। বিভিন্ন ধরনের ফৌজদারী কাজ কর্মের লিপ্ত ও জড়িত আছে। ইহা আইনের জঘন্য অপরাধ। আপনাকে কারবারী পদ থেকে অব্যহতি দেওয়া হল।

এদিকে একই তারিখের অংশৈহ্লা খিয়াং নামের একই গ্রামের বাসিন্দাকে কারবারী পদে দ্বায়িত্ব দেন হেডম্যান। এলাকাবাসীর অভিযোগ ও জেলা প্রশাসক কিংবা রাজার বাহাদুর কোন নোটিশ ছাড়া কিভাবে একজন কারবারীকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন কারবারীকে দ্বায়িত্ব দিয়েছেন এমন কাজকর্ম দেখে হতবাক ওই গ্রাম বাসিন্দাদের। এছাড়াও তার কাছে কোন অভিযোগ পত্র ও দাখিল করেননি ওই এলাকার বাসিন্দারা।

অন্যদিকে ২৬-৯-২০২১ সালে ওই গ্রামের কারবারী সনদ পত্রের জন্য বোমাং রাজার বাহাদুর বরাবর আবেদন করে অংশৈহ্লা খিয়াং। সেখানে ২৪ টি পরিবারের বসবাস করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। কিন্তু সেখানে গ্রমের মানুষের বসবাস ১৭টি পরিবার। তবে তার এই আবেদনের রাজার কোন স্বাক্ষর দেখা যায়নি। শুধু ওই মৌজার হেডম্যান মংশৈ নু মারমা স্বাক্ষর ও সুপারিশ লেখা ছাড়া আর কোন কিছু দেখা মেলেনি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে হেডম্যান পাথর ব্যবসা করতে্ন। খাল থেকে পাথর তুলে বিভিন্ন স্থানে পাচার করত। সেই পাথর তোলার কারণের খালের পানি ও শুকিয়ে গেছে। শুধু পাথর নন রিজার্ভ ফরেষ্ট থেকে অবৈধ ভাবে গাছ কেটে বিক্রি করতেন তিনি। সব কিছু শেষে যখন তিনি ঘেরাও প্রাংসা পাড়াতে জমি বিক্রি করতে যান তখনি বাধা প্রদান ও প্রতিবাদ করেছিলেন ওই গ্রামের কারবারী থোয়াই অং প্রু খিয়াং। সেদিন পর থেকে এসব অবৈধ কাজ না করার জন্য ও কারবারি কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন হেডম্যান। কিন্তু সে ক্ষোভের দিন পর দিন কারবারীকে পরিবর্তন করা দফায় দফায় চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু কোন কারণ ও এলাকাবাসীর অভিযোগ ছাড়া সুযোগে অব্যাহতি দেন তিনি।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন গ্রামবাসীর অজান্তের পুরানো কারবারীকে বহিস্কার করে নতুন কারবারী নিয়োগ করেছেন। নতুন কারবারীকে নিয়োগের ব্যাপারের না মানলে জায়গা দেয়া হবে নাহ। এমনকি এলাকাবসীদের নানান ভয়ভীতি দেখিয়ে হেডম্যান নিজের রাজত্ব চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ ওই এলাকার বাসিন্দাদের। এছাড়াও বহিরাগত ৩৪১ নং মৌজার কেরিং খিয়াং,মানিক খিয়াং,লালমিথাং বম সহ বেশ কয়েকজনকে নিজের মৌজার হেডম্যনের সনদ পত্র দিয়ে ৩৪৯নং ঘেড়াও মৌজার প্রবেশ করান হেডম্যান।

ভুক্তভুগী ঘেরাও প্রাংসা পাড়া গ্রাম প্রধান (কারবারী) থোয়াই অং প্রু খিয়াং বলেন, আমি বিগত ১৮ বছর ধরে গ্রাম প্রধান (কারবারী) দ্বায়িত্ব পালন করে এসেছি। আমার এলাকার ১৬ টি পরিবারের বসবাস। আমার নামের হেডম্যানের কাছে কোন অভিযোগ করেননি এলাকাবাসীর। হেডম্যানের বিভিন্ন অবৈধ কাজের প্রতিবাদ করার কারণের আমাকে কারবারী থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, কয়েক বছর আগে হেডম্যান পাথর উত্তোলন, রিজার্ভ ফরেষ্ট থেকে গাছ কাটাসহ বিভিন্ন অবৈধ কাজ করতেন। আমি চুপ ছিলাম। কিন্তু যখন অবৈধ ভাবে খাস জায়গা বিক্রি করতে যাচ্ছিল তখন আমি বাধা দিয়েছিলাম। সেটি পর থেকে আমার নামে বদনাম সহ কারবারী দ্বায়িত্ব পদ থেকে অব্যহতি দিয়েছে। শুধু তাই নই আমার কারবারি বেতন ভাতা তিনি বন্ধ করে রেখেছেন। আমাকে কারবারি পদ থেকে অব্যাহতি দিলে বোমাং সার্কেল কিংবা জেলা প্রশাসক দিবে হেডম্যানের দেওয়ার কোন আইন নাই। আমি এর বিচার সঠিক চাই।

ওই এলাকার পাড়াবাসী রেবিকা খিয়াং বলেন, হেডম্যান আমার জায়গাটিকে জোড়পুর্বকভাবে চহ্লামং কাছে বিক্রি করে দিয়েছে।

চেসথুই কিয়াং বলেন, অন্যের মৌজা থেকে এসে আমার জায়গায় বহিরাগত কেরি খিয়াংকে হেডম্যানের রিপোর্ট দিয়েছে। সে এখন আমার জায়গায় দখল করে আছে।

৩৪৯ নং ঘেড়াও মৌজার হেডম্যান মংশৈনু মারমা সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কারবারি অব্যাহতির বিষয়টি সত্যতা স্বীকার করেন।

তিনি বলেন, কারবারি গ্রামের মানুষকে অত্যাচার করত। বিভিন্ন জায়গা গাছ বিক্রি করত। পাড়াবাসী অভিযোগের কারনের তাকে অব্যাহতি দিয়েছি।

কারবারীকে অব্যাহতি দেওয়ার হেডম্যানের আইন আছে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আইন আছে নাকি নাই সেটা আমি জানিনাহ। আমি আমার কাজ করেছি এলাকাবাসির অভিযোগ প্রেক্ষিতে।

রোয়াংছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান মেহ্লা অং মারমা বলেন, গ্রামের মানুষের কোন লিখিত অভিযোগ ছাড়া ওই এলাকার কারবারীকে অব্যাহতি দেওয়ার হেডম্যানের কোন আইন নাই। যদি অব্যাহতি দেওয়া হয় তাহলে বোমাং সার্কেল চীফ কিংবা জেলা প্রশাসক মহোদয় পারবেন। এবং এটি খুব অন্যায়।

এব্যাপারে রোয়াংছড়ির নির্বাহী কর্মকর্তা খোরশেদ আলম চৌধুরী সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি খতিয়ে দেখছি। এবং পুরানো কারবারীকে অফিসে পাঠানোর জন্য বলেন এই কর্মকর্তা।

বান্দরবান বোমাং সার্কেল চীফ অফিস কার্যালয়ের হেকক্রাক সহকারী সচিব অংজাই উ খিয়াং জানান, ভুক্তভুগী গ্রাম প্রধান রাজার অফিসে এসে কাগজপত্র জমা দিয়ে গেছেন। এবং বিষয়টি নিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে কারবারীকে অব্যাহতি দেওয়ার হেডম্যানের কোন আইন নাই বলে জানান তিনি।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: