ফলোআপ...

শিক্ষক হত্যাকাণ্ডে ২৮জনের বিরুদ্ধে মামলা: আনছারুল করিম প্রধান আসামী

মিছবাহ উদ্দীন আরজু, (মহেশখালী প্রতিনিধি) | ২৮ আগষ্ট ২০২২, ২১:০১

সংগৃহীত

মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউপিস্থ তাজিয়াকাটায় হযরত সুমাইয়া (রা:) বালিকা মাদ্রাসার শিক্ষক খুনের ঘটনায় আনছারুল করিমকে প্রধান আসামী করে ২৮ জনের বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়েছে।

২৭ আগস্ট (শনিবার) বেলা ২টা ১৫ মিনিটে মামলাটি থানায় রেকর্ড দেখানো হয়। ঘটনায় এ পর্যন্ত এজাহার নামীয় ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে মহেশখালী থানা পুলিশ।

মামলায় অভিযোগ আসামীরা হলেন- কুতুবজোম ইউনিয়নের তাজিয়াকাটা গ্রামের মৃত করিম বকসু এর পুত্র আনছারুল করিম (৪৫), মৃত লাল মিয়া পুত্র এবাদুল করিম (২৮), মনছুর আলী পুত্র শরাফত উদ্দিন (২৫), মৃত হাজী করিম বকসুর পুত্র মহি উদ্দিন (৩৮), মৃত হাজী হামিদ বকসুর পুত্র কোরবান আলী (৪৫), লাল মিয়ার পুত্র জাহাঙ্গীর (৩৭), নেছারের পুত্র লাদেন (২৩), মৃত জাহা বকসুর পুত্র মোক্তার মিয়া প্রঃ মোস্তাক (৫৫), মৃত করিম বকসুর পুত্র নেছার (৫০), আনছারুল করিমের পুত্র ইরফান উদ্দিন (২৩), মৃত দুদু মিয়ার পুত্র এবাদুল হক (৩৫), মোক্তার মিয়ার পুত্র জসিম (২৯), মৃত আবদু জব্বারের পুত্র নুরুল আলম (৪৫), নুরুল হকের পুত্র মোসলেম উদ্দিন (২৫), মৃত কোরবান আলীর পুত্র পারভেজ (২৩), মৃত উজির আলীর পুত্র রফিক (৩২), আবু ছৈয়দের পুত্র জুয়েল (৩০), মোক্তার মিয়ার পুত্র দিলদার মিয়া (৩৫), খলিলুর রহমানের পুত্র রহিম মিয়া (২৭), মৃত আমিন শরীফের পুত্র তোফাইল (২২), মনছুর আলীর স্ত্রী তাজমিন আক্তার (৪০), মনছুর আলীর কন্যা ছমিরা আক্তার (২৫), মৃত আবদুর রশিদ স্ত্রী ময়না আক্তার (২৫), নেছার মিয়ার স্ত্রী ধলা বুড়ি (৩৫) মৃত জাহা বসুর পুত্র রিদোয়ান (৫০), মৃত জাহা বকসুর পুত্র সৈয়দ মাঝি প্ৰঃ ছৈয়মাঝি (৪২), আবু তালেবের পুত্র আরাফাত (১৯), মৃত উজির আলীর পুত্র আবু তালেব (৫০) সহ অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন।

মামলার বিষয় নিশ্চিত করে মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রণব চৌধুরী জানান- নিহত মাদ্রাসা শিক্ষক মৌলভী জিয়াউর রহমানের সন্তান তৌহিদুর রহমান বাদি হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় অজ্ঞতনামা আসামি দেখানো হয়েছে আরও ৭/৮ জনকে। ঘটনার পর থেকে এই ঘটনায় পুলিশ এ পর্যন্ত গ্রেফতার করেছে ৭ জনকে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একাধিক নারীও রয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- নুরুল আলম (৫০), মুসলেম উদ্দিন (২৬), তাসমিন আকতার (৪২), ছমিরা আক্তার (২৩), ময়না আক্তার (২৫), মোহাম্মদ আরাফাত (১৯) ও আবু তালেব (৫০)। মামলার পর গ্রেফতারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শনিবার বেলা ২টা ১৫ মিনিটে মহেশখালী থানায় এ হত্যা মামলাটি নিয়মিত মামলা হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়।

প্রসঙ্গত: গত ২৫ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) দুপুরে মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের তাজিয়াকাটা হযরত সুমাইয়া (রা:) বালিকা মাদ্রাসার অফিস কক্ষ থেকে বের করে এনে অফিসের সামনে মৌলভী জিয়াউর রহমানকে কুপিয়ে হত্যা করে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় ওই শিক্ষকের স্ত্রীও গুরুতর আহত হয়। স্থানীয় সাহেব মিয়ার পুত্র মৌণভী জিয়াউর রহমান ২৫ আগস্ট সকালে তাজিয়াকাটা সুমাইয়া (রাঃ) বালিকা মাদরাসার ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিল।

এই সংবাদের ভিত্তিতে পূর্বের পরিকল্পনা মতে তাদের প্রতিপক্ষ মনছুর আলীর পুত্র শরীফ উদ্দিন প্রঃ শরফত মৃত হাজী করিম বকসুর পুত্র আনছারুল করিম, মহি উদ্দিন প্ৰঃ দানু,মৃত হামিদ বকসুর পুত্র কোরবান আলী প্রঃ কুরবাইন্যা, মোস্তাক আহাম্মদ মোত্তাইক্যা,এবাদুল্লাহ সহ আরো ৮/১০জনের একটি সংঘবদ্ধ দল দুপুর সাড়ে ১২টার সময় মৌলভী জিয়াউর রহমানকে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঘেরাও করে সমগ্র মাদরাসা ক্যাম্পাসে বন্দুক উচিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে। মাদরসার পাঠদান কালে শিক্ষক ও ছাত্রীদেরকে ক্লাস রুম,ক্যাম্পাস থেকে তাড়িয়ে দেয়। এ সময় মৌলভী জিয়াউর রহমান প্রাণের ভয়ে মাদরাসার একটি কক্ষে রুমের ভিতরে লক লাগিয়ে, অবস্থান করে নিজে বাচানোঁর আকুতি জানিয়ে চিৎকার করছিল। তখন এবাদুল্লাহ দরজায় লাথি দিয়ে মাওলানা জিয়াউর রহমানকে রুম থেকে গলাঘরে টেনে হিছড়ে বাহির করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে মাথায় ৭টি কুপ দেয়। তখন মাদ্রাসার প্রধান গেইট ভিতর দিক থেকে আটকে রাখে ঘাতকরা। মাটিতে লুডিয়ে পড়লে সংবাদ পেয়ে মৌলভী জিয়াউর রহমানের স্ত্রী রহিমা বেগম (৪৫) দ্রুত স্বামী উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসলে মাদ্রাসার গেইট এর বাহিরে হামলাকারী পুরুষ সদস্যর স্ত্রী ও কন্যারা রহিমাকে সড়কের উপর কুপিয়ে ও ছুরিকাগত করে পালিয়ে যায়। মাদ্রাসার ভিতরে হামলা কারীরা উচু দেওয়ালে পূর্ব থেকে পরিকল্পনায় রাখা মই দিয়ে উঠে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। স্থানীয় লোকজন মাদ্রাসার গেইট এর ভিতরে প্রবেশ করে দ্রুত সময়ে জিয়াউর রহমান ও রহিমা বেগমকে মহেশখালী সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৌলভী জিয়াউর রহমানকে মৃত ঘোষনা করে। স্ত্রী রহিমা বেগম কে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করলে তার অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে রেফার করে। শিক্ষক মৌলভী জিয়াউর রহমান মধ্যেযুগীয় কায়দায় কুপিয়ে হত্যা ও স্ত্রীকে জখম করার ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে পুরো এলাকায় বর্তমানেও উত্তেজনা বিরাজ করছে।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: