পৌর আ.লীগের নেতৃত্ব নিয়ে গৃহ বিবাদ চরম!

এহসান রানা, ফরিদপুর | ৩০ জুলাই ২০২২, ০৭:০৩

সংগৃহীত

ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিয়ে গৃহ বিবাদ চরম আকারে ধারণ করেছে। সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে ১৩জন সদস্য মৃত্যুর কারণে শূন্য পদ পূরণে নেতাকর্মীদের বিরোধ এখন তুঙ্গে। পূর্বের পৌর আওয়ামী লীগের নামে বেনামে ৩টি কমিটি নিয়ে হাতে হাতে নিয়ে ঘুরছে নেতৃত্বে আসা নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ থাকলেও শেষ পর্যন্ত এই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রুপ নিয়েছে!

দীর্ঘদিন পর গত বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) দুপুরে থানা রোডের উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে পৌর আ.লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সাধারণ সম্পাদকের শূন্য পদ নিয়ে নেতাকর্মীরা বক্তব্যকালে তিনটি কমিটির তালিকা নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়।

পৌর আ.লীগের সভাপতি আ. আলীম মোল্যার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, ২০০২ সালে সম্মেলনের সহসভাপতি আকমল হোসেন মোল্যা, ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর, ২ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র সেলিম রেজা লিপন মিয়া, সদস্য আকরামুজ্জামান রুকু মৃধা, দপ্তর সম্পাদক হাবিবুল্লাহ খান, ২০১৪ সালে সম্মেলন ছাড়া কমিটির সদস্য রাহাদুল আক্তার তপন, মাসুদ হোসেন প্রমুখ।

২০১৪ সালের কমিটির ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নান্নু বিশ্বাসকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নাম ঘোষণা করেন পৌর আ.লীগের সভাপতি। এরপর কমিটির অধিকাংশ নেতাকর্মী চেচামেচি করে সভা থেকে বেরিয়ে চলে যান। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। নান্নু বিশ্বাস বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত মোজাফফর হোসেন চুন্নুর বড় ভাই বলে জানা গেছে।

জানা যায়, ২০০২ সালে বোয়ালমারী পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে আব্দুল আলিম মোল্যাকে সভাপতি, নুরজ্জামান খসরুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কমিটিতে আলী আকবর আলী, সেলিম রেজা লিপন এবং নান্নু বিশ্বাসকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ২০ বছর সম্মেলন না হওয়া, সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে ১৩জন সদস্য মৃত্যুর কারণে এবং সভাপতি আ. আলীম মোল্যা দীর্ঘদিন অসুস্থ্য থাকায় বর্তমানে পৌর আওয়ামী লীগ ঝিমিয়ে পড়েছে। ২০২০ সালে পৌরসভা নির্বাচনের পর আগামীতে নেতৃত্বে আসা নেতাকর্মীদের মধ্যে সম্প্রতি চাঙ্গা ভাব দেখা যাচ্ছে। আর এ চাঙ্গা ভাবের মধ্যে তিন কমিটির কাগজ হাতে নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র আকার ধারণ করেছে গ্রুপিং। গত বৃহস্পতিবার বিভিন্ন জন ৩টি কমিটি নিয়ে হাজির হন পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায়। এখানে দেখা যায়, ২০০২ সালের ২টি এবং ২০১৪ সালের একটিসহ মোট ৩টি পৌর আওয়ামী লীগের কমিটি। ২০০২ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত পৌরসভাটি ছিলো ‘গ’ ও ‘খ’ শ্রেণী। বর্তমানে পৌরসভাটি ‘ক’ শ্রেণী। ২০০২ সালের কমিটির অনুমোদন দেন তৎকালীন উপজেলা আ.লীগের সভাপতি তফসির আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক এমএম মোশাররফ হোসেন। বোয়ালমারী পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণী হওয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের ন্যায় পৌর আওয়ামী লীগের কমিটি অনুমোদন দেওয়ার দায়িত্ব জেলা আওয়ামী লীগের বলে দলীয় একাধিক সুত্র জানায়।

বোয়ালমারী পৌর আ.লীগের সভাপতি আব্দুল আলিম মোল্যাকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও ফোনটি রিসিভ না কারায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

২০০২ সালের সম্মেলন কমিটির ১ নম্বর যুগ্ম সম্পাদক আলী আকবর অভিযোগ করে বলেন, আমি বর্ধিত সভায় উপস্থিত ছিলাম। সেখানে বক্তব্যকালে বলেছি, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। সেখানে আমার কথা কর্ণপাত না করে সভাপতি এক তরফাভাবে ৩ নম্বর যুগ্ম সম্পাদককে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছেন। তারপর সভা থেকে আমরা চলে আসি।

গতকালের বর্ধিত সভায় বক্তব্যকালে পৌর মেয়র সেলিম রেজা র্লিপন পৌর আ.লীগের সভাপতিকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেন, যেহেতু প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা সেহেতু জেলা আওয়ামী লীগ ও উপজেলা আ.লীগের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। তিনি বলেন, আমি সভা থেকে চলে আসার পরে জানতে পারলাম ২০১৪ সালের মনগড়া কমিটির যুগ্ম সম্পাদককে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মীরদাহ্ পিকুল জানান, ২০০২ সালের পরে পৌর আ.লীগের আর কোন সম্মেলনও হয়নি, কোন কমিটিও হয়নি। ২০০২ সালের মূল কমিটির প্রথম পাতা পরিবর্তণ করে একটি এবং ২০১৪ সালে পৌর আ.লীগের সভাপতি সম্পাদক মিলে একটি মনগড়া কমিটি দাঁড় করান। এ ভাবেই তিনটি কমিটির আর্বিভাব হয়েছে পৌর আওয়ামী লীগের। পৌরসভাটি প্রথম শ্রেণীর হওয়ায় কমিটি অনুমোদন দেওয়ার দায়িত্ব জেলা আওয়ামী লীগের। ২৮ জুলাই বর্ধিত সভা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্ধিত সভা করতে হলে উপজেলা আ.লীগ থেকে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু আমি এ বর্ধিত সভা সম্পর্কে কিছুই জানি না। অবৈধ কিছু করার জন্য হয়তো আমাদেরকে পাশ কাটিয়ে সভাটি করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এমএম মোশাররফ হোসেন মুশা জানান, পৌর আ.লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে ২০০২ সালে। কোন সদস্য পদ শূন্য হলে বর্ধিত সভা করে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শূন্যপদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।

শুক্রবার বিকেলে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম ইসতিয়াক আরিফ জানান, বোয়ালমারী পৌর আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভার বিষয়টি আমাদের জানা নেই। সাধারণ সম্পাদকের মৃত্যুজনিত কারণে শূন্য পদে ভারপ্রাপ্ত কাউকে দায়িত্ব দিতে হলে বর্ধিত সভা করে সম্মেলন হওয়া কমিটির ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব দিতে হবে। এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: