হরিরামপুরে আশ্রয়ণের ১০ ঘর পাঁচটিতে ঝুলছে তালা, পাঁচজন দিয়েছেন অন্যকে আশ্রয়

সায়েম খান, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি | ২১ জুলাই ২০২২, ০৭:৪৭

সংগৃহীত

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১০টি ঘরে এখনো উঠেননি উপকারভোগী পরিবারগুলো। ঘর বুঝে পাওয়ার দেড় বছরেও তারা কেউ ঘরে বসবাস করছেন না। ১০টি ঘরের মধ্যে পাঁচটিতে ঝুলছে তালা। বাকি পাঁচটি ঘরে গৃহহীন অন্য পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছেন ঘর বরাদ্দপ্রাপ্তরা। ঘরের মালিকরা নিয়মিত না থাকলেও মাঝে মাঝে এসে ঘরের খোঁজ-খবর নিয়ে যান বলে জানান আশ্রয়ণের বাসিন্দারা।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ১ম ধাপে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় ১২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে দুই শতাংশ করে খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়। যার মধ্যে কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের দুইটি পরিবারকে নিজ এলাকায় এবং ধুলশুড়া ও হারুকান্দি ইউনিয়নের দশটি পরিবারকে বলড়া ইউনিয়নের পিপুলিয়া এলাকায় ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়। 

গতবছরের ২৩ জানুয়ারি শনিবার প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে উপকারভোগী এসব পরিবারের হাতে ঘরের চাবি, কবুলিয়ত দলিল, নামজারী খতিয়ান, ডিসিআরসহ যাবতীয় কাগজপত্র হস্তান্তর করে উপজেলা প্রশাসন। তবে, ঘর বুঝে পাওয়ার দেড় বছরেও বলড়া ইউনিয়নের পিপুলিয়ার ১০টি ঘরে এখনো স্থায়ীভাবে উঠেনি বরাদ্দপ্রাপ্ত পরিবারগুলো। আশ্রয়নের বাসিন্দারা বলছেন, ঘরের মালিকদের তাদের নিজ গ্রামে বাড়িঘর রয়েছে। রয়েছে জীবন-জীবিকার ব্যবস্থাও। তাই অন্য ইউনিয়নে আশ্রয়ণের ঘর বরাদ্দ পেলেও তারা ঘরে উঠেননি। তবে, মাঝে মাঝে এসে তারা ঘরের খোঁজ-খবর নিয়ে যান।

সরজমিনে গত শুক্রবার পিপুলিয়ায় গিয়ে দেখা যায়, আশ্রয়ণের পাঁচটি ঘরে বাস করছেন পাঁচটি পরিবার। তাঁরা জানান, ঘর বরাদ্দপ্রাপ্তরা তাদেরকে ঘরে থাকার অনুমতি দিয়েছেন। মো. রাসেল মিয়ার নামে বরাদ্দকৃত ঘরে স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান নিয়ে বাস করছেন ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘ঘরের মালিক এখানে থাকেন না। তিনি আমাকে তাঁর ঘরে থাকতে দিয়েছেন। মাঝে মাঝে এসে তিনি ঘরের খোঁজ নিয়ে যান।” মো. সিদ্দিকের নামে বরাদ্দকৃত ঘরে স্ত্রীকে নিয়ে বাস করেন মো. আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘‘ঘরের মালিক সিদ্দিক আমাকে এখানে থাকতে দিয়েছেন। তিনি যদি কখনও এখানে বাস করতে আসেন, তখন আমাকে ঘর ছেড়ে দিতে হবে।” এছাড়াও, শেক লুতফরের নামে বরাদ্দকৃত ঘরে মান্না, আনোয়ারা বেগমের ঘরে তাঁর ভাতিজি তাসলিমা, বিথী সরকারের ঘরে লালন স্বপরিবারে বসবাস করছেন। মান্না বলেন, ‘‘আমি কিছুদিন স্থানীয় ইটভাটায় কাজ করেছি। তখন ঘরের মালিকের সাথে আমার পরিচয়। তিনি আমাকে তার ঘরে আশ্রয় দিয়েছেন।”

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মানিকুজ্জামান বলেন, ‘‘এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।” 

আশ্রয়ণে ঘর বরাদ্দ পাওয়া মনিন্দ্র নাথ সরকার ও প্রিয়াংকা সরকার, আরতি হালদার, জগ রানী, আনজু আক্তার এবং শেক সোহেলের নামে বরাদ্দকৃত পাঁচটি ঘর প্রথম থেকেই তালাবদ্ধ আছে বলে জানান আশ্রয়ণের বাসিন্দারা। আশ্রয়ণের পরিবার নিয়ে বাস করা ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘‘পাঁচটি ঘর প্রথম থেকেই তালাবদ্ধ আছে। তারা কেউ এখানে থাকেন না। মাঝে মাঝে আসেন। ঘরের খোঁজ-খবর নিয়ে যান।” আশ্রয়ণের আরেক বাসিন্দা মো. আব্দুল্লাহ্ জানান, পাঁচটি ঘরে প্রথম থেকেই তালা ঝুলছে। ঘরের মালিকরা মন চাইলে মাঝে মাঝে আসেন। আবার চলে যান।” মান্নার স্ত্রী হাওয়া বেগম বলেন, ‘‘পরের ঘরে থাকি। ঘরের মালিক যদি চলে যেতে বলে, তাহলে চলে যেতে হবে। তখন শিশু সন্তান নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। আমরা যদি এরকম একটা ঘর বরাদ্দ পেতাম তাহলে স্বামী-সন্তান নিয়ে মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই পেতাম।” কথা বলতে দেখে পাশ থেকে এগিয়ে আসেন এক বৃদ্ধা। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কিছু নাই। পরের জায়গা পরের বাড়ি থাকি। এইখানে কতগুলি ঘর পড়ে রইছে। কেউ থাকে না। আমরা যদি এরকম একটা ঘর পাইতাম, তাহলে ভালো হইতো।”

হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা ১০টি ঘরের মালিককেই বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) আসতে বলেছি। আমরা তাদের সাথে কথা বলবো। তারা যদি ঘরে থাকতে না চায় বা থাকতে ইচ্ছুক না হয় তাহলে আমরা অন্যদেরকে ঘর বন্দোবস্ত দেবো।’’


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: